Tuesday, March 1, 2011

বাকশালের কমিটিতে বঙ্গবন্ধুর উদ্বোধনী ভাষণ ২৬ মার্চ, ১৯৭৫..........


বাকশালের কমিটিতে বঙ্গবন্ধুর উদ্বোধনী ভাষণ ২৬ মার্চ, ১৯৭৫


1
 2
 3
 4
 5
 6
 7
 8
9
10

Wednesday, October 6, 2010



৪ অক্টোবর ২০১০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিশুদের জন্য কল্যাণমুখী সমাজ গঠন ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকার প্রয়োজনীয় আইন ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং পর্যাপ্ত সম্পদ বরাদ্দ করতে দেশের জনগণ ও জাতিসংঘের কাছে প্রতিশ্র“তিবদ্ধ। আজ সকালে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ-২০১০-এর উদ্বোধন করেন তিনি। এ উপলক্ষে প্রদত্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি শিশুর জন্য আলোকিত নিরাপদ স্বদেশ চাই। ভবিষ্যত প্রজন্মের সুন্দর আগামীর জন্য আমাদের বর্তমানকে উৎসর্গ করার জন্য তিনি উদাত্ত আহবান জানান। শিশু শ্রম বন্ধে সরকারের দৃঢ় অবস্থানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে সকল খাত থেকে শিশু শ্রম বিলোপ করা হবে। ইতোমধ্যেই শহরাঞ্চলের কর্মজীবী শিশুদের জন্য কর্মভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। শিশুদের যাতে কোনভাবেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার না করা যায় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘের শিশু অধিকার ঘোষণা অনুযায়ী শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধির জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে। অতীতে এ দেশের অনেক শিশুর রাজনৈতিক নির্যাতন ও সন্ত্রাসের শিকার হওয়ার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিশেষ করে ২০০১ সালের নির্বাচনের পর শুধুমাত্র আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার অপরাধে বাবা-মার সামনে রজুফা, মহিমা, ফাহিমা ও শেফালির মতো শত শত কন্যা শিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। এ জন্য অবশ্যই অপরাধীদের শাস্তি ভোগ করতে হবে। ঢাকায় বাবার কোলে শিশু নওশীনকে বিএনপি’র সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করেছিল। তিনি বলেন, আমরা সেই অন্ধকার সময়ের পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না। শিশুদের জাতির সবচাইতে বড় সম্পদ বলে অভিহিত করে তিনি বলেন, তাদের বেড়ে ওঠার স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করা গেলে আগামী দিনে দেশও জাতির কল্যাণে তারা আত্মনিয়োগ করবে। তাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১১ সালের মধ্যে শতভাগ শিশুকে বিদ্যালয়ে নিয়ে আসার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ইনশায়াল্লাহ, ২০১৪ সালের মধ্যে আমরা দেশকে নিরক্ষরতামুক্ত করা। স্কুল থেকে ঝরে পড়ার প্রবণতা বন্ধে সরকারের কর্মসূচিতে তিনি দেশে সকল সামর্থবান মানুষ ও ইউনিসেফের সহায়তা কামনা করেন। তিনি শিশুদের সাথে বন্ধুর মত আচরণ করার আহবান জানান ও তাদের শারীরিক ও মানসিক পরিচর্যার ওপর গুরুত্ব দেন। প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশুরাও সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং তাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে মানবসম্পদে পরিণত করা সম্ভব বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধুর শিশুদের প্রতি পরম ভালোবাসাকে স্মরণ করে তাঁর জন্মদিন ১৭ মার্চকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শিশু অধিকার ও তাদের উন্নয়ন নিয়ে ভেবেছিলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উন্নয়ন ভাবনা থেকে দুস্থ, এতিম, আশ্রয়হীন ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কল্যাণ ও অধিকার সংরক্ষণের জন্য ১৯৭৪ সালে শিশু আইন প্রণীত হয়। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার জাতীয় শিশু নীতি-২০১০-এর খসড়া প্রকাশ করেছে। এই নীতি চূড়ান্ত করার আগে তিনি সমাজের শ্রেণী ও পেশার মানুষের মতামত প্রত্যাশা করেন। শিশু অধিকার সপ্তাহের এবারের প্রতিপাদ্য ‘শারীরিক শাস্তি বন্ধ হলে বাড়বে শিশু বুদ্ধি বলে’-কে তিনি অত্যন্ত সমায়োপযোগী বলে উল্লেখ করেন। দেশের শিশু ও নারী পাচার রোধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। সামাজিক ব্যাধি রোধে তিনি সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সর্বতো সহায়তা কামনা করেন। দশ বছরের নিষ্পাপ শিশু রাসেলের মত আর কোন শিশু যেন নিষ্ঠুরতার শিকার না হয় এ কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের ১৮ সদস্যের সাথে শিশু রাসেলের নির্মম হত্যার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, পরবর্তীতে স্বৈরশাসক জিয়া ক্ষমতায় এসে আইন করে শিশু রাসেল হত্যার বিচারের পথ বন্ধ করেছিল।



৪ অক্টোবর ২০১০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়ন সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান এবং নারীর প্রতি সহিসংতা প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা গ্রহণের জন্য দক্ষিণ এশীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় নারী অধিকার ইস্যুতে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের দেশগুলোর সমস্যাগুলোও প্রায় অভিন্ন। তাই এর সমাধানে প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা।’ গতকাল সকালে হোটেল শেরাটনে নারী অধিকার সংক্রান্ত ৭ম দক্ষিণ এশীয় মন্ত্রী পর্যায়ের আঞ্চলিক সম্মেলন উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। দক্ষিণ এশিয়ায় নারী ও শিশু পাচারকে বড়ো সমস্যা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সামাজিক এ সমস্যা প্রতিরোধে সমন্বিত প্রচেষ্টা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি এ অঞ্চলে নারী ও শিশুর ওপর রাজনৈতিক সহিসংতার বিষয়টিও তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন, দেশে ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর অনেক নারী ও শিশু রাাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছিল। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার নারীর অধিকার বাস্তবায়ন এবং তাদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। এছাড়া নারী উন্নয়ন নীতিকে আরও যুগোপযোগী করে নারী অধিকার সংরক্ষণের লক্ষে কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে বিদ্যমান বিভিন্ন আইন সংশোধনসহ বেশ কিছু আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় জীবনের সকল স্তরে নারীর প্রতি সব ধরণের বৈষম্য দূরীকরণ এবং নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন নিশ্চিত করা সরকারের উন্নয়ন নীতির অংশ। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টিকে সামনে রেখে দারিদ্র্র্য বিমোচন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে অব্যাহতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বেইজিং প্লাটফরম ফর এ্যাকশনের আলোকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, রাজনীতি ও মানবসম্পদ উন্নয়নসহ জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। মেয়েদের জন্য অবৈতনিক শিক্ষা, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বৃত্তি প্রদান ও পাঠ্যপুস্তক কেনার জন্য আর্থিক সহায়তাসহ নারীর ক্ষমতায়নে তাঁর সরকারের নেয়া বিভিন্ন ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব ব্যবস্থার ফলশ্র“তিতে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ে মেয়েদের শিক্ষার হার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এছাড়া শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাসে অভূতপূর্ব সাফল্যের জন্য বাংলাদেশ জাতিসংঘের এমডিজি-৪ পুরস্কার অর্জন করেছে। তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন হচ্ছে তাঁর সরকারের প্রধান লক্ষ্য। এলক্ষ্যে চলতি অর্থবছরে সারাদেশে ৯ লাখ ২০ হাজার বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্তা মহিলাকে ভাতা প্রদানের জন্য ৩৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আগামীতে এর আওতা ও অর্থের পরিমাণ আরো বাড়বে। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলদেশ বিশ্বে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ১৯ জন মহিলা প্রার্থী সরাসরি এবং ৪৫ জন সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা, সংসদ উপনেতা ও বিরোধী দলীয় নেতা নারী। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ ৫টি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বেও রয়েছেন নারী। তিনি বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৩০ শতাংশ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে। বর্তমানে সারাদেশে ১৪ হাজার ২২৮ জন নারী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হিসেবে কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার নারী নির্যাতন বন্ধে বিদ্যমান কিছু আইন সংশোধনীসহ অনেক আইন প্রণয়ন করেছে।



৩ অক্টোবর ২০১০
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে। এলজিআরডি ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম গতকাল রাতে আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সভা শেষে এক প্রেস ব্রিফিং-এ বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের সভার শুরুতেই জাতিসংঘ সফর সফল এবং সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) অর্জনে সাফল্যের জন্য জাতিসংঘ পুরস্কার গ্রহণ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানানো হয়। সভায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া, সংবিধানের ৫ম ও ৭ম সংশোধনী বাতিল বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়। সৈয়দ আশরাফ জানান, আগামী ৯ অক্টোবর আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা কিছুদিনের মধ্যেই জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক করবেন। বৈঠকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও সরকারের সাফল্যসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সংবিধান সংশোধন কমিটির সঙ্গে বৈঠক করবেন বলেও সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তিনি বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অর্থনৈতিক বিষয় জিডিপি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়-ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সমর্থ হওয়া, স্বর্ণের রিজার্ভ বাড়া এবং এনার্জি খাতে বিনিয়োগ বাড়ায় সভায় সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। তিনি বলেন, এ সভায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তারা বলেন, নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নই সরকারের মূল দায়িত্ব।
সভায় নতুন ৪ জনকে দলের উপদেষ্টা পরিষদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরা হলেন: চৌধুরী অধ্যাপক খলিকুজ্জামান, ড. অনুপম সেন, অধ্যাপক দুর্গা দাস ভট্টাচার্য ও ড. হামিদা বানু।



০১ অক্টোবর ২০১০
আগামীকাল শনিবার আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে সন্ধ্যা ৭টায় এ বৈঠক শুরু হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন শেখ হাসিনা। বৈঠকে উপদেষ্টা পরিষদের সব সদস্যকে উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।



২৮ সেপ্টেম্বর ২০১০
জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন গণতন্ত্রকে শক্তিশালী, সামাজিক উন্নয়ন ও জাতিসংঘ নির্ধারিত এমডিজি লক্ষ্য-৪ অর্জনে ভূমিকা ও দৃঢ় নেতৃত্বের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আপনি গণতন্ত্রের প্রবক্তা। আপনার বিচক্ষণ নেতৃত্ব ও জনগণের কল্যাণে অঙ্গীকার বাংলাদেশে জাতিসংঘ নির্ধারিত সকল সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) শিগগিরই অর্জনে সহায়ক হবে।’ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী গতকাল বিকেলে এখানে জাতিসংঘ ভবনে বান কি-মুনের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হলে তিনি এ কথা বলেন। নিউজ উইক, বিবিসি ও ভয়েস অব আমেরিকা (ভোয়া) তাঁর সাক্ষাতকার নেয়। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ বৈঠকে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য কোপেনহেগেনে গত কোপা-১৫ সম্মেলন ও বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বেরও প্রশংসা করেন বান কি-মুন। এমডিজি লক্ষ্য-৪ অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে জাতিসংঘের এমডিজি পুরস্কার লাভ করায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান জাতিসংঘ মহাসচিব। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশ তাঁর বিচক্ষণ নেতৃত্বে ভবিষ্যতে অবশিষ্ট লক্ষ্যগুলো অর্জনে সক্ষম হবে। এ ছাড়া বান কি-মুন জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, জাতিসংঘ বাংলাদেশের উন্নয়ন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তিনি বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় জাতিসংঘের সমর্থনের আশ্বাস দেন। বৈঠকে শেখ হাসিনা জাতিসংঘকে আরো গতিশীল ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার ক্ষেত্রে আন্তরিক ও অক্লান্ত প্রচেষ্টার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘আপনি বেশ কিছু সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, যার মাধ্যমে আপনার নতুন ও উদ্ভাবনী ধ্যান-ধারণার প্রতিফলন ঘটেছে।’ সৈন্য পাঠানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় দেশ হিসেবে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বিভাগের (ডিপিকেও) নীতিনির্ধারণ ও প্রশাসনিক সংস্থায় নিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতি পুনরায় আহ্বান জানান। বাংলাদেশে শিশুমৃত্যু হার কমানোর স্বীকৃতি হিসেবে এমডিজি পুরস্কার অর্জন প্রসঙ্গে তিনি জাতিসংঘ মহাসচিবকে অবহিত করেন যে, বাংলাদেশ শিগগিরই অন্তত তিনটি এমডিজি অর্জনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত মাঝারি আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে তাঁর সরকার অক্লান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, একটি দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়া ও সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। জলবায়ু পরিবর্তন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ নিজস্ব সম্পদের সাহায্যে একটি তহবিল গড়ে তুলেছে। কারণ বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে অসহায় দেশগুলোর একটি।

২৮ সেপ্টেম্বর ২০১০
বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ সন্তান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ৬৪তম জন্মদিন আজ। ১৯৪৭ সালের এদিনে মধুমতি নদী তীরের প্রত্যন্ত পাড়াগাঁ টুঙ্গিপাড়ায় শেখ হাসিনার জন্ম। পিতা শেখ মুজিবুর রহমান, মাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছার প্রথম সন্তান। তাঁর ডাক নাম হাসু। দাদা শেখ লুৎফর রহমান ও দাদি সাহেরা খাতুনের অতি আদরের নাতনি হাসু। শৈশব-কৈশোর কেটেছে দাদা-দাদির কোলে-পিঠে মধুমতি নদীর তীরে টুঙ্গিপাড়ায়। তাঁরা পাঁচ ভাই-বোন। কনিষ্ঠদের মধ্যে শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা এবং শেখ রাসেল। এদের মধ্যে শেখ হাসিনা এবং রেহানা ছাড়া কেউ জীবিত নেই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেই কালোরাতে পিতা বঙ্গবন্ধু এবং মাতা ফজিলাতুন্নেছাসহ সবাই ঘাতকদের হাতে নিহত হন। পিতাকে খুব একটা কাছে না পেলেও শৈশব-কৈশোর আনন্দেই কেটেছে শেখ হাসিনার। গ্রামবাংলার ধুলোমাটি আর সাধারণ মানুষের সাথেই বেড়ে উঠেছেন তিনি। গ্রামের সাথে তাই তাঁর নাড়ির টান অনিবার্যভাবে উঠে এসেছে বারবার। শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। তখন পুরনো ঢাকার রজনী বোস লেনে ভাড়ার বাসায় তাঁরা উঠেন। বঙ্গবন্ধু যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য হলে সপরিবারে ৩ নম্বর মিন্টু রোডের বাসায় তারা বসবাস শুরু করেন। শেখ হাসিনাকে ঢাকা শহরে টিকাটুলির নারী শিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। শুরু হয় তাঁর শহর বাসের পালা তথা নাগরিক জীবন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ১৯৬৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন। ওই বছরেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্সে ভর্তি হন এবং ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। শেখ হাসিনা ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজে পড়ার সময় ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্য এবং রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে তিনি আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন এবং ৬-দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু উত্থাপিত ৬-দফা দাবিতে পূর্ববাংলায় এক অভূতপূর্ব জাতীয় জাগরণ সৃষ্টি হয়। শাসক গোষ্ঠী ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। শুরু হয় প্রচণ্ড দমন-নির্যাতন। আটক থাকা অবস্থাতেই বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী দায়ের করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। তাঁর জীবন ও পরিবারের ওপর নেমে আসে গভীর বিপদাশংকা ও দুঃসহ কষ্ট। এই ঝোড়ো দিনগুলোতেই বঙ্গবন্ধুর আগ্রহে ১৯৬৮ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সাথে শেখ হাসিনার বিয়ে হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের করাচিতে নিয়ে যাওয়ার পর গোটা পরিবারকে ঢাকায় ভিন্ন এক বাড়িতে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। অবরুদ্ধ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই শেখ হাসিনা গৃহবন্দী অবস্থায় তাঁর প্রথম সন্তান ‘জয়’ এর মা হন। ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর কন্যা সন্তান পুতুলের জন্ম হয়।
১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হবার আগে ছোটবোন শেখ রেহানাসহ শেখ হাসিনা ইউরোপ যান। বেলজিয়ামের রাজধানী হেগ-এ অবস্থানকালে তিনি বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হবার খবর পান। তাৎক্ষণিকভাবে দেশে ফেরার কোন পরিবেশ না থাকায় তিনি ইউরোপ ছেড়ে স্বামী-সন্তানসহ ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। শেখ হাসিনার পরবর্তী ইতিহাস একবিংশ শতকের অভিযাত্রায় তিনি কিভাবে বাঙালি জাতির কাণ্ডারি হয়েছেন তার ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখতেন সেই স্বপ্ন রূপায়নের দায়িত্ব নিয়ে বাঙালি জাতির আলোর দিশারী হওয়ার ইতিহাস।
মাতৃভূমির ডাকে ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন :
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের রক্তাক্ত ঘটনাবলীর পর তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর দেশে ফেরার কোন পরিবেশ ছিল না। বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ তখন ছিল অলিখিত নিষিদ্ধ। সামরিক সরকার বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসুক, তা চায়নি। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তাঁর হাতে গড়া আওয়ামী লীগেও চলছিল নেতৃত্বের শূন্যতা।
এমনি এক দুঃসময়ে আওয়ামী লীগের তৎকালীন নেতৃবর্গ সর্বসম্মতিভাবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে এসে দলের দায়িত্বভার গ্রহণের অনুরোধ জানান। ১৯৮১ সালের ১৩-১৫ ফেব্র“য়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে তাঁকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। আর ঐ বছরেরই ১৭ মে দীর্ঘ ৬ বছরের প্রবাস জীবনের অবসান ঘটিয়ে মাতৃভূমি বাংলাদেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা।
সংগ্রাম শুরু :
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ফলে সমগ্র দেশব্যাপী শুরু হলো প্রবল আলোড়ন। বদলে গেল দৃশ্যপট। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর দলীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের পর তাঁকে অভিনব সব পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়।



২৮ সেপ্টেম্বর ২০১০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিলের কোন পরিকল্পনা সরকারের নেই। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে ৯ দিনের সফর শেষে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এ পদ্ধতি পরিবর্তনের চিন্তা-ভাবনা আমাদের নেই।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিন্তু এ সত্য অস্বীকারের কোন উপায় নেই কেয়ারটেকার সরকারের নামে বিগত দুই বছরের অন্তর্বর্তী শাসনামলের তিক্ত অভিজ্ঞতায় সবাই বিরক্ত।’ তিনি আরো বলেন, জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা অনুযায়ীই সবকিছু করা হবে। তবে ১৯৭৫ সাল-পরবর্তী সবগুলো সামরিক শাসনামল অবৈধ ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্টের দুটি যুগান্তকারী রায়ের প্রেক্ষিতে সংবিধান সংশোধনের সুপারিশের লক্ষ্যে বেশ কয়েক মাস আগে গঠিত সংসদীয় কমিটির কেয়ারটেকার পদ্ধতি সম্পর্কে সম্ভবত নিজস্ব পর্যবেক্ষণ রয়েছে। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলে জরুরী আইনে আটক সন্দেহভাজন দুর্নীতিবাজদের ছেড়ে দেয়া প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মামলা দায়েরে কৌশলগত সমস্যা থাকায় আদালতের নির্দেশেই তারা মুক্তি পাচ্ছে। তিনি বলেন, কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশন স্বাধীনভাবেই কাজ করছে। যদিও প্রধান বিরোধী দল তাদের রক্ষায় নেমেছে। ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, এটি কোন প্রতীকী বিচার নয়। কারণ তদন্ত শেষে আইন অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হবে। তিনি আরো বলেন, ‘আইন অনুযায়ীই তাদের বিচার করা হবে। আর এ জন্যই জনগণ বিশেষ করে তরুণরা আমাদের বিপুল ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। আমরা ১৯৯০ সালে ‘গণআদালত’-এর মাধমে তাদের প্রতীকী বিচার করেছিলাম। এবার হবে তাদের সত্যিকার বিচার।’ শেখ হাসিনা বলেন, তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ার মতো একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াও একটি দীর্ঘপ্রক্রিয়া। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধাপরাধীদের বিচারে কয়েক দশক সময় লেগেছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতাত্তোর বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে বিচারের জন্য ১১ হাজার সন্দেজভাজন যুদ্ধাপরাধীকে কারাগারে রাখা হয়েছিল। এছাড়া আরো ২২ হাজারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল। তিনি বলেন, কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের জঘন্যতম হত্যাকান্ডের পর জেনারেল জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনামলে মার্শাল ল’ ঘোষণা করে এসব অপরাধীদের ছেড়ে দেয়া এবং পুরো প্রক্রিয়াটি বাতিল করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা নাগরিকত্ব নিয়ে জনগণের মাঝে ফিরে আসে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করায় যে নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছিল, সামাজিকভাবে তাদের পুনর্বাসন করা হয়। আর এসবই করেছেন জিয়াউর রহমান। যদিও তিনি নিজে একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।’ মার্কিন প্রবাসী বাংলাদেশীদের পুরনো দাবী ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট পুনরায় চালু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিমান বোয়িং কোম্পানীর কাছ থেকে বিমান সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে। ২০১১ সাল নাগাদ তা পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিমান পাওয়ার পরপরই এ রুটে পুনরায় বিমান চালুর আশ্বান দেন তিনি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে এ প্রেক্ষাপটে ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ বিষয়ে তার সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এ দুটি পৃথক বিষয়। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। কিন্তু কোন দল নির্বাচনী রাজনীতির জন্য যোগ্য কি-না সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনই আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবে।



(পূর্ণ ভাষণ)
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১০
সম্মানিত সভাপতি,
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় আপনাকে জানাচ্ছি আন্তরিক অভিনন্দন।
আমি বিশ্বাস করি, আপনার প্রাজ্ঞ ও দৃঢ় নেতৃত্বে এই অধিবেশন সর্বাত্মকভাবে সফল হবে। ৬৪তম অধিবেশন সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য আমি ঐ অধিবেশনের সভাপতি ড. আলী আবদুস সালাম ট্রেকি-কে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা এবং জাতিসংঘের সেবায় অক্লান্ত পরিশ্রম করার জন্য মহাসচিব মি. বান কি মুন-কে জানাচ্ছি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
সম্মানিত সভাপতি,
৩৬ বছর আগে আমার পিতা এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবতার সেবায় জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছিলেন।
তারপর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেছে। কিন্তু আজও জাতিসংঘ সারাবিশ্বের বিপন্ন মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের শেষ ঠিকানা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ আজ একটি উদার, প্রগতিশীল এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। জাতিসংঘের সক্রিয় অংশগ্রহণকারী এবং দায়িত্ববান সদস্য। বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র, মানবাধিকার, শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের সকল উদ্যোগের প্রতি বাংলাদেশ পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে আসছে।
দেশ এবং দেশের বাইরে বৈরি শক্তির বিরুদ্ধে বিশেষ করে, সন্ত্রাসবাদ দমনে, বাংলাদেশ কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যেসব ব্যক্তি হত্যা, নারী ধর্ষণ এবং অগ্নিসংযোগের মত গুরুতর মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত ছিল তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করতে আমরা যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছি। আমাদের এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত সংক্রান্ত রোম ঘোষণার সাথে সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণ। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের উদ্দেশ্য হচ্ছে যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা এবং মানবতার বিরুদ্ধে যারা অপরাধ করেছে তাদেরকে বিচারের সম্মুখীন করা। আমি বিশ্বাস করি, কেবল সুবিচারই পারে অতীতের অমার্জনীয় ভুলের নিরাময় করতে।
এ প্রসঙ্গে আমি স্মরণ করতে চাই ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট বাংলাদেশে সংঘটিত নারকীয় হত্যাকাণ্ডের কথা। সেদিন সন্ত্রাসীরা আমার পিতা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ আমার পরিবারের ১৮জন সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। আমার মা, তিন ভাই - শেখ কামাল, শেখ জামাল, দশ বছর বয়সের ছোট ভাই শেখ রাসেল ও দুই ভাইয়ের স্ত্রীকেও সেদিন হত্যা করা হয়েছিল।
১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর বার বার আমার উপর হামলা হয়েছে। বিশেষ করে ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত, যখন আমরা বিরোধীদলে ছিলাম তখন সংখ্যালঘুসহ অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে তৎকালীন বিএনপি-জামাত সরকারের সময়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছিল। ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট আমার শান্তিপূর্ণ সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল; ২৪ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতির স্ত্রী, আমার দলের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা আইভি রহমানও সেই হামলায় নিহত হয়েছিলেন। গুরুতর আহত পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী এখনও পঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে জীবন কাটাচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি এবং আমার পরিবার বারবার সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছি। কিন্তু সন্ত্রাসের কাছে মাথা নত করিনি। আমি পরিস্কার ভাষায় বলতে চাই বাংলাদেশের মাটিতে আমরা কোন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় দেব না। এজন্য আমরা ইতোমধ্যেই জাতিসংঘের সন্ত্রাস বিরোধী সকল কনভেনশনের অনুমোদন দিয়েছি। আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি বলেই ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি করে জাতিগত সংঘাত নিস্পত্তি করেছিলাম। ২০০৯ সালে শান্তিপূর্ণভাবে বিডিআর বিদ্রোহ দমন করতে সক্ষম হয়েছিলাম।



২৪ সেপ্টেম্বর ২০১০
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে দক্ষিণ এশীয় দেশের মধ্যে বাংলাদেশ বিশেষ জাতিসংঘ পুরস্কার পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদানকারী বিশ্ব নেতাদের সম্মানে আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় বারাক ওবামা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘আমি আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের কথা উদ্ধৃত করে বাসস'কে এ কথা জানান। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন এ সংবর্ধনার আয়োজন করেন। জাতিসংঘের ধার্যকৃত সময়সীমা২০১৫ সালের মধ্যে এমডিজি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকা ও নেতৃত্ব এবং শিশু মৃত্যুর হার কমানোর জন্য বাংলাদেশে এমডিজি পুরস্কার লাভের প্রশংসা করেন বারাক ওবামা।অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী কর্তকর্তারা বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানানোর জন্য এগিয়ে যাওয়ার সময় বারাক ওবামা ছিলেন প্রাণোচ্ছ্বল ও আন্তরিক। শেখ হাসিনা তাকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।



২৩ সেপ্টেম্বর ২০১০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে শিশু কল্যাণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির পেছনে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও নিবেদিত কার্যক্রমই মূল কারণ। তবে তহবিলের অভাবে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন বাধাগ্রস্ত হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা আছে, আছে নিবেদিত ভূমিকা কিন্তু নাই অর্থ, এটাই সমস্যা। এখানে ৬৫তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের পাশাপাশি বুধবার ‘চিলড্রেন এন্ড দি এমডিজি’স : রিচিং দ্য মোস্ট ভালনারেবল’ শীর্ষক এক উচ্চপর্যায়ের আলোচনা সভায় তিনি ভাষণ দিচ্ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে উন্নয়ন কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ার একটি সমস্যা বাংলাদেশের রয়েছে। তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ২০১৫ সালের মধ্যে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য বাস্তবায়নে জাতিসংঘের ধার্য সময়সীমার মধ্যেই বাংলাদেশ এই লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হবে। সিএনএন টেলিভিশনের প্রখ্যাত অনুষ্ঠান উপস্থাপক জিম ক্লানসি এই আলোচনায় সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই বলে পরিচয় করিয়ে দেন ‘গোটা পরিবারের সদস্যরা ঘাতকদের হাতে বলি হলেও বেঁচে আছেন তিনি’ বলে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলতি বছর ইউনিসেফের সভাপতি ও আগামী বছর সহ-সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সার্বিক নীতিমালা অনুসারে সংস্থার কার্যক্রম বাস্তবায়ন সহজীকরণের লক্ষ্যে কাজ করে যাবে। প্রধানমন্ত্রী বিশেষ করে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশে ইউনিসেফের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকায় ইউনিসেফ ঘরে ঘরে উচ্চারিত নাম। উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশসমূহে ইউনিসেফ শিশুদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া তিনি জাতিসংঘ শিশু তহবিলে যেসব দেশ, কর্পোারেশন ও ব্যক্তিবিশেষ কোটি কোটি ডলার প্রদান করছে তাদেরও প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জরুরী মানবিক পরিস্থিতি এবং শান্তিকালেও বেসরকারি খাত, সুশীল সমাজ ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহ ইউনিসেফের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব জোরদার করতে পারে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, শিশুদের বাঁচার অধিকার, সুরক্ষা ও উন্নয়নের প্রাথমিক হেফাজতকারী ইউনিসেফকে সহ্রসাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার দফাগুলো প্রত্যেক শিশুর জীবনে প্রয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যই আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। কারণ ইউনিসেফেরই রয়েছে নৈতিক কর্তৃত্ব এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা। এছাড়া ইউনিসেফের রয়েছে ড. অ্যান্থনি লেকের মতো অভিজ্ঞ নির্বাহী পরিচালক। প্রধানমন্ত্রী তাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘নতুন কার্যক্রম শুরুর ক্ষেত্রে আমি তার দৃঢ় নেতৃত্বের অপেক্ষায় থাকলাম।’ আজকের শিশুরা সাম্প্রতিক বিশ্ব মন্দা, বিশ্ব উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং জনসংখ্যা স্থানান্তরের বিরূপ প্রভাবের শিকার এ কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, গত ৮০ বছরের মধ্যে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দায় খাদ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্য বেড়েছে। পরিণামে বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশে দারিদ্র্য ও অপুষ্টির শিকার হয়েছে শিশুরা। অনেক শিশুই ঝরে গেছে অকালে এবং অনেক শিশু বেঁেচ রয়েছে শারীরিক ও মানসিক সমস্যা নিয়ে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১০ সালে শিশু পরিস্থিতি নিয়ে ইউনিসেফ যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাতে হতাশাজনক চিত্র ফুটে উঠেছে। একটি গবেষণা রিপোর্টে দেখা গেছে জনসংখ্যার ২.৭ শতাংশ কিংবা বাংলাদেশসহ ১১টি দেশের ৭কোটি ৮০ লক্ষ লোক স্বাস্থ্যখাতে মাত্র ১ ডলারেরও কম ব্যয় করতে পারে। তবে সমকৌশলভিত্তিক নতুন পরিকল্পনার কারণে প্রতিবেদনটি আশা-আকাক্সক্ষাও জাগিয়ে তুলেছে। এসব পরিকল্পনা অনুমোদিত হলে বঞ্চিত শিশুদের উন্নয়ন ও এমডিজি সম্পর্কিত স্বাস্থ্য বিষয়ে অগ্রগতি অর্জিত হবে। এছাড়া এসব বঞ্চিত শিশুদের পারিবারিক ব্যয়ও হ্রাস করবে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্য এবং শিশু ও মাতৃমৃত্যুহার হ্রাস কার্যক্রমে বর্তমানের তুলনায় খরচ কমে যাবে। এদিকে ইউনিসেফ ১৯৯২ সালে পরিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ে জাতিসংঘ সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এমডিজি অর্জনে সমতাভিত্তিক যে নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে যা ‘আন্তঃপ্রজন্ম সমতা’র অনুরূপ তার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশুদের ক্ষেত্রে এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশ এসব উদ্যোগ অনুমোদন করেছে। শেখ হাসিনা ইউনিসেফের কার্যক্রম বাস্তবায়নে কম মূল্যের কৌশল ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ১৯৮০’র দশকে প্রবৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ, শিশুদের ডায়রিয়ায় খাবার স্যালাইন, বুকের দুধ খাওয়ানোসহ শিশুদের জীবনধ্বংসকারী ছয়টি মারাত্মক রোগের টিকার ক্ষেত্রে কম খরচের কর্মসূচী নেয়া হয়েছিল। খাবার স্যালাইন আবিস্কার বিংশ শতাব্দীর চিকিৎসার ইতিহাসে বড়ো ধরনের অগ্রগতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে শরণার্থী শিবিরে শিশুদের কলেরা চিকিৎসাকালে খাবার স্যালাইন আবিস্কৃত হয়েছিল। ইউনিসেফের সমতাভিত্তিক নতুন কার্যক্রম বাস্তবায়নে এ ধরনের কম মূল্যের কৌশলের প্রয়োজন রয়েছে। সবশেষে প্রধানমন্ত্রী নোবেল বিজয়ী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘যতোবার একটি শিশু জন্ম নেয় ততোবার আমি নতুন করে বিশ্বাস করি ঈশ্বর মানুষকে ছেড়ে যাননি’ এ উদ্ধৃতির উল্লেখ করেন। তিনি এ উদ্ধৃতির বাস্তবতাকে অঙ্গিকৃত করতে সমন্বিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানান।

২৩ সেপ্টেম্বর ২০১০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নশীল দেশ বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও সময় নির্দিষ্ট করে নতুন সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বুধবার এখানে জাতিসংঘ সদর দফতরে সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনের পাশাপাশি অভাব, ক্ষুধা ও জেন্ডার সমতার ওপর এক গোলটেবিল বৈঠকে ভাষণ দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, নতুন এই অর্থনৈতিক এমডিজি হবে বাস্তবায়নাধীন সকল এমডিজির ভিত্তি। শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের স্থিতিশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই বিভিন্ন দেশের জাতীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে পারে। এর ওপরই নির্ভর করছে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহের সফল বাস্তবায়ন। এ জন্য স্বল্পোন্নত বিশ্বের জন্য চাই টেকসই অর্থনীতির নিশ্চয়তা ও তহবিলের সুষ্ঠু প্রবাহ। ‘মানবজাতির প্রধান শত্র“ হচ্ছে দারিদ্র্য’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসবাদসহ সামাজিক বিশৃংখলারও কারণ দারিদ্র্যই। তিনি বলেন, জাতীয় উন্নয়নে নারীর অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করার জন্য তাদেরকে সমান সুযোগ দিতে হবে। দশ বছর পর একই জায়গায় সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহের অগ্রগতি পর্যালোচনার অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘২০০০ সালে এই ঘোষণা গৃহীত হয়েছিল। আমিও এর একজন স্বাক্ষরদাতা ছিলাম তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে।’ এ জন্য তিনি নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে উল্লেখ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, এমডিজি-১ প্রণয়নের সময় তিনটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ধার্য করা হয়েছিল। এগুলো হচ্ছেÑ যেসব মানুষের প্রতিদিনের আয় ১ মার্কিন ডলারেরও কম তাদের সংখ্যা ২০১৫ সালের মধ্যে অর্ধেকে নামিয়ে আনা, নারীসহ সবার জন্য উৎপাদনমুখী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা এবং দারিদ্র্যের হার অর্ধেকে কমিয়ে আনা। কিন্তু এই তিন লক্ষ্যের একটিও অর্জিত হয়নি। বরং বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দায় আরো একশ’ কোটি মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে নেমে গেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমডিজি রিপোর্টে ২০০৫ সালের মধ্যে বিশ্ব দারিদ্র্য ৪৬ শতাংশ থেকে ২৭ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই অগ্রগতি একেক দেশে একেক রকম রাজনৈতিক অবস্থায় তহবিল প্রবাহের ওপর নির্ভরশীল ছিল। উন্নয়ন সহযোগীদের সামাজিক লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে হবে। লক্ষ্য প্রণয়নকালে শুধু সামাজিক বিষয়ই বিবেচনায় নেওয়া হয়। আর্থিক বিষয় উপযুক্ত গুরুত্ব পায় না। অথচ সামাজিক লক্ষ্য অর্জনে এটা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করা গেলে স্বাভাবিক নিয়মে সামাজিক উন্নয়ন ঘটে বলে তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক এমডিজিকে হতে হবে সকল এমডিজির ভিত্তি। বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশের দারিদ্র্য দূরীকরণে ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। ক্ষুদ্র ঋণ ও ক্ষুদ্র তহবিলের জোগান দেওয়া হচ্ছে। দরিদ্র কৃষকরা মাত্র ১০ টাকা বা ৪ সেন্ট দিয়ে ব্যাংকে হিসাব খুলতে পারছেন। তারা নিজেরাই নিজেদের হিসাব পরিচালনা করছেন। তাদের দেওয়া ঋণের সুদের হার কম। কৃষি কাজ, ছোট খামার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ে তারা নিজেদের নিয়োজিত রাখছেন। এতে আগামী পাঁচ বছরে প্রতি দরিদ্র পরিবারে অন্তত একজনের কর্মসংস্থান করা সম্ভব হবে তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা, প্রাথমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে বই বিতরণ, ছাত্র-ছাত্রীদের সমানভাবে স্কুলে ভর্তি, অভিভাবকরা যাতে তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে উৎসাহিত হন সেজন্য শিক্ষা কর্মসূচির অধীনে খাদ্য রেশন ও অর্থ দেওয়া হচ্ছে। বেকার যুব সমাজ কর্মসংস্থানের জন্য সম্পদ বন্ধক না রেখে ও কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারছে। শেখ হাসিনা বলেন, দেশে আশ্রায়ন প্রকল্পে সরকারি জমিতে দরিদ্র ও গৃহহীন মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই ও কর্মসংস্থান করা হচ্ছে। স্বাধীনতার সুবর্ণ-জয়ন্তী বছর ২০২১ সালের মধ্যে দারিদ্র্য সীমা ৪৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। এ লক্ষ্যে বাজেটে অর্ধেকেরও বেশি অর্থের জোগান দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে তৃণমূল পর্যায়ে ১৩ হাজার নারী প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ১৫ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ করা হয়েছে। দেশের সেনাবাহিনীতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হয়েছেন নারী। এ ছাড়া হাইকোর্টের জজ ও সরকারের সচিব রয়েছেন নারী। বর্তমান মন্ত্রিসভায় পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, কৃষি, শ্রম ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা এবং একজন হুইপও নারী বলে তিনি উল্লেখ করেন। দেশের পোশাক শিল্পে ২০ লাখ অর্থাৎ মোট শ্রমিকের ৮৫ ভাগই নারী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী গর্বের সঙ্গে বলেন, এমডিজি-৩ কর্মসূচিতে বাংলাদেশ লক্ষ্য অর্জন করেছে।



২২ সেপ্টেম্বর ২০১০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈশ্বিক জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি গতকাল জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সম্মেলন কক্ষে জীব-বৈচিত্র্য বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের পূর্ণাঙ্গ বৈঠকে এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের ধবংসাত্মক কর্মকান্ডের কারণে পৃথিবী থেকে হাজার হাজার প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এবং বিনষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য। অথচ কোটি কোটি বছরের বিবর্তনে পৃথিবীতে বিস্ময়কর পরিবেশগত ভারসাম্য তৈরি হয়েছিল, যেখানে লাখ লাখ প্রজাতি সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করে আসছে। শেখ হাসিনা বলেন, মানব জাতির আবির্ভাবের পর থেকে তাদের অস্তিত্ব ও অগ্রগতি রক্ষায় প্রকৃতি প্রয়োজনীয় সম্পদ ও অত্যাবশ্যকীয় রসদ জুগিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতির আশীর্বাদের কারণেই পৃথিবীতে মানব সভ্যতা বিকাশ লাভ করেছে। তিনি দুঃখ করে বলেন, ‘কিন্তু আমরা এ সৌভাগ্য ও প্রকৃতির আর্শীবাদকে ধরে রাখতে পারিনি। নিষ্ঠুরভাবে প্রকৃতির উদারতার অপব্যবহার করে পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট এবং জীব-বৈচিত্র্য ধবংস করছি। এর ফলে আমাদের অস্তিস্ত¡ আজ হুমকির মুখে।’ জীব-বৈচিত্র হ্রাস ও দারিদ্র্যের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্ব জনসংখ্যার অধিকাংশই দরিদ্র। জীব-বৈচিত্র্যের ওপর তাদের দৈনন্দিন জীবন নির্ভরশীল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বজুড়ে উন্নয়নশীল দেশে নারী কৃষকরা খাদ্যের ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ উৎপাদন করে। অথচ তারাই জীব-বৈচিত্র্য হ্রাস, ভূমিক্ষয়, জলবায়ু পরিবর্তন এবং তীব্র দারিদ্র্যের সবচেয়ে বেশি শিকার। এখনও পর্যন্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তাদের পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্ব নেই। তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমার বিশ্বাস একটি সফল নীতি ও কর্মসূচী প্রণয়নে তাদের মতামত সন্দেহাতীতভাবে সহায়ক হবে।’ জীব-বৈচিত্র্য বিয়ষক বৈঠকে জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও এর টেকসই ব্যবহারে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার স্বীকৃতিতে শেখ হাসিনা সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণে নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সকল স্তরে নারীদের পূর্ণ অংশগ্রহণের প্রয়োজনীতার ওপর সিবিডি (কনভেনশন অন বায়ো ডাইভারসিটি) যে গুরুত্বারোপ করেছে, তা আমার বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। আমি আমার নিজ দেশে সকল স্তরে নারীদের পূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষে কাজ করে যাচ্ছি।’ চলতি বছর জীব-বৈচিত্র্যের আর্ন্তজাতিক বছর পালিত হচ্ছে এবং এর মূল প্রতিপাদ্য উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে জীব-বৈচিত্র্য। এ বছরের শেষে জীববৈচিত্র্য বিষয়ে জাপানে পুনরায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জীব-বৈচিত্রের আন্তর্জাতিক বছর পালিত হচ্ছে বিধায় আমরা আজ জীব-বৈচিত্র্য বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে আসতে পেরেছি। এ বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও এর টেকসই ব্যবহার প্রক্রিয়াকে অবশ্যই নিশ্চিত করবে।’ জীব-বৈচিত্র্য হ্রাসের মূল কারণ চিহিৃত ও একে রক্ষায় সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জাতিসংঘ মহাসচিবের আহ্বানকে যথাযথ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশা করি এ ব্যাপারে সকলেই একমত হবেন।’ পৃথিবীর জীব-বৈচিত্রের ভারসাম্য বিনষ্টের জন্য মানুষের কর্মকান্ডকে দায়ী করে শেখ হাসিনা তা রক্ষায় সকলের প্রতি জরুরি উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান। উদার বিনিয়োগের ফলে এটা সম্ভব হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এবার আন্তর্জাতিক জীব-বৈচিত্র দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে জীব-বৈচিত্র বছর। আগামী অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় নাগোয়ার কনভেনশনে এ বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট বার্তা দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দারিদ্র্য ও অভাব, যথেচ্ছ প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলনসহ নানা কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটেছে। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কৌশল নির্ধারণ এখন সময়ের দাবি। তিনি বলেন, ‘আমাদের ভুলে গেলে চলবে না পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় পৃথিবীতে প্রত্যেক প্রজাতির নির্দিষ্ট ভূমিকা রয়েছে। এ ধরিত্রী রক্ষায় সকল প্রজাতিই বিস্ময়কর ও রহস্যপূর্ণভাবে একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই সকল প্রজাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার অর্থ পৃথিবীতে আমাদের অস্তিত্বই টিকিয়ে রাখা।’



২২ সেপ্টেম্বর ২০১০
মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব ফেরদৌস জমাদ্দার গতকাল রাত ৯:৩০ মিনিটে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহে --রাজিউন)।
তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকাল তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি ২ ছেলে, ৩ মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন, নাতি-নাতনি, গুণগ্রাহী, সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন।
উল্লেখ্য, মরহুম আলহাজ্ব ফেরদৌস জমাদ্দারের বড় ছেলে ফরহাদ ফেরদৌস মাদারীপুর উপজেলার নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান।
আজ দুপুর ১২টায় মরহুমের প্রথম নামাজে জানাজা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয়, সহযোগী সংগঠন ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দসহ বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। মরহুমের দ্বিতীয় নামাজে জানাজা আজ বাদ আছর মাদারীপুর অনুষ্ঠিত হওয়ার পর পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। জানাজা শেষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা এমপি’র পক্ষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন এমপি। এরপর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের পক্ষ থেকে মরহুমের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এমপি, ওবায়দুল কাদের এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক এমপি, আহমদ হোসেন, আ. ফ. ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ আবুল হোসেন এমপি, নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান এমপি, দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান খান এমপি, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু এমপি প্রমুখ। এছাড়াও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম. এ আজিজ, আওয়ামী লীগ নেতা মো. বাচ্চু মিয়া, নুরুল আমিন রুহুল, হেদায়েতুল ইসলাম স্বপন, মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা, কৃষক লীগ নেতা সোহাগ তালুকদার, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোল্লা আবু কাওছার প্রমুখ উপসি'ত ছিলেন। মরহুমের কফিন নিয়ে মাদারীপুর গিয়েছেন- সৈয়দ আবুল হোসেন এমপি, শাহজাহান খান এমপি, আ. ফ. ম বাহাউদ্দিন নাছিম, শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা, সোহাগ তালুকদার প্রমুখ।



২২ সেপ্টেম্বর ২০১০
নির্বাচন কমিশনে (ইসি) বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব দাখিল করেছে আওয়ামী লীগ। সেই সঙ্গে দলের কার্যনির্বাহী সংসদ গঠন প্রক্রিয়ার কার্যবিবরণীও জমা দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার উপ-দফতর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে গিয়ে রেজিস্টার্ড চার্টার্ড অ্যাকাউন্টিং ফার্মের মাধ্যমে নিরীক্ষিত দলের ২০০৯ সালের হিসাব ইসির যুগ্ম সচিব নুরুল ইসলাম খানের কাছে দাখিল করেন। এ হিসাবে কেন্দ্রীয় কমিটি, উপদেষ্টা পরিষদ, সাংসদ, জাতীয় কমিটি, উপ-কমিটি, প্রাথমিক সদস্য, শুভানুধ্যায়ী, কাউন্সিলর, ডেলিগেটস এবং প্রচার-পুস্তিকা বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থকে আয়ের উৎস হিসাবে দেখানো হয়েছে। ব্যাংকে গচ্ছিত আমানতকৃত অর্থের লভ্যাংশও রয়েছে।খরচের খাত হিসেবে ত্রাণ কার্যক্রম, জাতীয় সম্মেলন, সাংগঠনিকভাবে পালন করা দিবস, প্রকাশনা, সাংগঠনিক খরচ, বিজ্ঞাপন, অফিস ভবন ক্রয়, হোল্ডিং ট্যাক্স, ফোন, কম্পিউটারসহ আনুষঙ্গিক আসবাবপত্র ক্রয়, কর্মচারীদের বেতন, বাড়ি ভাড়া, বিদ্যুৎ, ওয়াসা, টেলিফোন, ইন্টারনেট, কুরিয়ার, মনোহারি পণ্য, পত্রিকা, যাতায়াত ইত্যাদি খাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে। আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দেওয়ার কারণ প্রসঙ্গে মৃণাল কান্তি দাস সাংবাদিকদের বলেন, জুলাই মাস পর্যন্ত আর্থিক লেনদেনের হিসাব জমা দেওয়ার শেষ সময়সীমা থাকলেও এর আগেই দলের পক্ষ থেকে সময় বাড়ানোর জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন জানানো হয়েছিল। নির্বাচন কমিশন এ আবেদনে সাড়া দিয়ে কাঙ্ক্ষিত সময়ের চেয়েও বেশি সময় দিয়েছে। এ কারণেই দলের পক্ষে একটি স্বচ্ছ হিসাব দেওয়া সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নতুন, সুন্দর, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক যে কোনো কর্মকাণ্ডকেই স্বাগত জানায়। এবারের ধারাবাহিকতায় আগামীতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই দলের আয়-ব্যয়ের হিসাব দাখিলের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, দলের পক্ষ থেকে জমা দেওয়া হিসাব নির্বাচন কমিশন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করবে। এ কারণে কমিশনের সম্মতি ছাড়া হিসাব সম্পর্কে এ মুহূর্তে কোনো কিছু বলা সমীচীন নয়।



২১ সেপ্টেম্বর ২০১০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য উন্নত দেশগুলোকে বর্ধিত সহায়তা প্রদানের অঙ্গীকার করার আহ্বান জানিয়েছেন। সোমবার জাতিসংঘ সদর দফতরে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের পাশাপাশি সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) সংক্রান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ সম্মেলনের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ভাষণকালে তিনি এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘের সহায়তায় ‘নিজেদের জন্য এমডিজি চাহিদা, মূল্যায়ন ও ব্যয়’ শীর্ষক একটি রিপোর্ট প্রণয়ন করেছে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে ২০০৯-২০১৫ সাল মেয়াদে সহস্রাব্দ উন্নয়নের সকল লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের ২ হাজার ২১০ কোটি ডলার অর্থাৎ প্রতিবছর ৪৪০ কোটি ডলার প্রয়োজন। তিনি বলেন, এতে উন্নয়নশীল দেশসমূহ বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে সম্পদের প্রবাহ সংক্রান্ত বৈশ্বিক ঘোষণা বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এই উচ্চাকাক্সক্ষী সম্পদের বাজেট প্রণয়নের জন্য আর্থিক ক্ষেত্রে একমত্য হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ বৈদেশিক সহায়তা প্রত্যাশা করলেও সহায়তার অভাবে কখনও আমাদের কর্মসূচি থেমে থাকেনি। আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা স্যানিটেশন ও পানি সরবরাহ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি, এই খাতে ৫৬ কোটি ডলারের বৈদেশিক সহায়তার ঘাটতি ছিল।’ তিনি এমডিজি এবং ইন্টারন্যাশনাল এগ্রিড ডেভেলপমেন্ট গোলস (আইএডিজিস)সহ সকল লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিশ্বায়নের চেতনায় দৃঢ় সংকল্প গ্রহণের আহ্বান জানান। প্রায় ১৪০ জন সরকার প্রধানের উপস্থিতিতে ৩-দিনের এই সম্মেলনে শেখ হাসিনা এমডিজি ও অন্যান্য কর্মসূচি অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের দৃঢ় সংকল্প ও অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ২০২১ সালের মধ্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, ২০১৫ সালের মধ্যে শতভাগ শিশুর স্কুলে ভর্তি নিশ্চিত, ২০১৫ সালের মধ্যে শিক্ষার সকল পর্যায়ে জেন্ডার বৈষম্যের অবসান, ২০২১ সালের মধ্যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে মহিলাদের অংশগ্রহণ ৪০ শতাংশে উন্নীত, ২০২১ সালের মধ্যে প্রসূতি মৃত্যুহার ও শিশু মৃত্যুহার হাজারে ১৫তে হ্রাস, ২০২১ সালের মধ্যে গড় আয়ু ৭০ বছরে উন্নীত, ২০১১ সালের মধ্যে সকলের জন্যে নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহ এবং ২০২১ সালের মধ্যে জাতীয় আইসিটি নীতি বাস্তবায়ন করে বৈশ্বিক যোগাযোগ স্থাপন করার মাধ্যমে একটি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তুলতে চাই।’ উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা ২০০০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘ শীর্ষ সম্মেলনে এমডিজি অনুমোদনকারী ১৮৯ জন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। ‘সহস্রাব্দ ঘোষণাকে দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব গড়ার ম্যাগনাকার্টা’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, উন্নয়নের সুবিধা প্রদান ও দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে গৃহীত এমডিজি নজিরবিহীন ঐকমত্যের ভিত্তিতে গ্রহণ করা হয়েছিল। এই ঐকমত্য ২০০৫ সালে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সমর্থনে আরো জোরদার হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার, বেসরকারি খাত, সুশীল সমাজ, উন্নয়ন সহযোগী, জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তঃসরকার সংস্থাগুলোর সাফল্য নির্ধারণের জন্য এমডিজি একটি মাপকাঠি দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমার বিগত মেয়াদে আমাদের সরকার জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলোতে এমডিজি সম্পৃক্ত করার পদক্ষেপ নিয়েছিলো। এই পদক্ষেপের লক্ষ্য ছিল এমডিজি বিষয়ে জাতীয় স্বত্বাধিকার নিশ্চিত করা এবং ২০১৫ সালের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে এগুলো অর্জনে আমাদের অঙ্গীকারের প্রতিফলন ঘটানো।’ শেখ হাসিনা বলেন, এমডিজি অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে ২০০১ সাল থেকে পরিকল্পনা ও বাজেট প্রণয়ন আমাদের জাতীয় উন্নয়নের অংশ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের মেয়াদে ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত এবং ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পদক্ষেপ হিসেবে এমডিজি বাস্তবায়নে একটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে বৈশ্বিক খাদ্য ও জ্বালানি সংকট, বিদ্যমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, বৈশ্বিক বাণিজ্য হ্রাস, বিনিয়োগে অনীহা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এমডিজি অর্জনে আমাদের কাক্সিক্ষত গতি বিলম্বিত করেছে।’ উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জাতিসংঘ সংস্থাসমূহ এবং দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সহযোগীদের সহায়তায় সন্তোষজনক অগ্রগতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমডিজি-১ (দারিদ্র্য বিমোচন), এমডিজি-২ (সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা); এমডিজি-৩ (জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন); এমডিজি-৪ (শিশু মৃত্যুহার হ্রাস) সংক্রান্ত লক্ষ্য অর্জনে আমাদের উৎসাহব্যঞ্জক সাফল্য অব্যাহত রয়েছে। এমডিজি-১ অনুযায়ী দারিদ্র্য হার অর্ধেকে কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ২০১৫ সালের মধ্যে ১ কোটি ২০ লাখ লোককে দারিদ্র্যমুক্ত করার প্রয়াস সাফল্যের সংগে এগিয়ে চলেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের অন্যান্য সাফল্যের মধ্যে রয়েছেÑ ন্যূনতম খাদ্য পুষ্টি গ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি, প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে ভর্তি হার বৃদ্ধি, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে জেন্ডার সমতা প্রতষ্ঠা, শিশু ও নবজাতকের মৃত্যুহার হ্রাস, টিকাদান কর্মসূচি সম্প্রসারণ, ম্যালেরিয়া দূরীকরণ, যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ, এইচআইভি/এইডস প্রাদুর্ভাব কমিয়ে আনা, নিরাপদ খাওয়ার পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা বৃদ্ধি।

২০ সেপ্টেম্বর ২০১০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জন বিশেষ করে শিশু মৃত্যু হার হ্রাসে বাংলাদেশের বিশেষ কৃতিত্বের জন্য গতকাল জাতিসংঘ পদক গ্রহণ করেছেন। নিউইয়র্কের এস্টোরিয়া হোটেলে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিশেষ করে শিশু মৃত্যুহার ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে আমাদের কৃতিত্বের স্বীকৃতি হিসেবে শেখ হাসিনা দেশের পক্ষে এ পুরস্কার গ্রহণ করেন।’ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনের পাশাপাশি উচ্চপর্যায়ের এমডিজি সম্মেলনের একদিন আগে বাংলাদেশ ও আরো ৫টি দেশকে এ পদক প্রদান করা হয়। পুরস্কার প্রদান কমিটি এমডিজি’র লক্ষ্য অর্জন প্রচেষ্টায় শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন। পুরস্কার গ্রহণের পর এক সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ পুরষ্কার আমাদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক। কারণ সাম্প্রতিক বিশ্ব মন্দা, বিশ্ব উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব সত্ত্বেও ২০১৫ সাল নাগাদ এমডিজি’র লক্ষ্য অর্জন প্রচেষ্টায় আমরা কোন রকম ছাড় দেইনি।’ ২০০০ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এক অধিবেশনে ৮ দফা এমডিজি নির্ধারণের দশ বছর পর এই পুরস্কার প্রদান করা হল। ওই অধিবেশনেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা অংশ নিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমাদের শ্রদ্ধেয় নোবেল বিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে আমি বরাবরই হৃদয়ের গভীর থেকে শিশুদের কল্যাণের বিষয়টি বিবেচনা করি। রবি ঠাকুর বলেছিলেন, ‘যতোবার একটি শিশু জন্ম নেয়, ততোবার নতুন করে আমার ভেতর এ বিশ্বাস জন্মে ঈশ্বর মানুষকে ছেড়ে যাননি।’ কর্মকর্তারা জানান, জাতিসংঘের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও সমর্থনই এ পুরস্কার প্রদানের লক্ষ্য। কারণ জাতিসংঘ এমডিজি অর্জনে সদস্য দেশগুলোর জন্য ১৫ বছরের সময়সীমা নির্ধারণ করেছিল।



১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১০
সরকার সঠিক পথে রয়েছে বলে মনে করছে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যরা। ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রেসিডিয়ামের তৃতীয় বৈঠকে এ অভিমত প্রকাশ করেন সদস্যরা। বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রেসিডিয়াম বৈঠকের মূল্যায়ন তুলে ধরেন দলের মুখপাত্র ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রেসিডিয়াম সদস্যরা জনকল্যাণ নিশ্চিত করতে আরো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে। একইসঙ্গে গেল রমজানে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল, আইন-শৃঙ্খলা ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। দুঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।আওয়ামী লীগ সংবিধান সংশোধনে গঠিত বিশেষ সংসদীয় কমিটিতে যোগ দেওয়ার জন্য বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ১৭ সেপ্টেম্বর দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠক থেকে এ আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, বিরোধী দল ওই কমিটিতে যোগ দিয়ে তাদের মতামত তুলে ধরতে পারে। আওয়ামী লীগ সব দলের মতামত ও ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত নিয়েই সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত প্রস্তাব সংসদে পেশ করতে চায়। বৈঠকে বিরোধী দলের আন্দোলন প্রসঙ্গে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়, বিরোধী দল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া ঠেকাতেই আন্দোলনের কথা বলছে। তারা গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করলে তা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠক থেকে একই সঙ্গে বিরোধী দলকে সংসদে এসে সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরার আহ্বান জানানো হয়। বলা হয়, আন্দোলন বিরোধী দলের সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত বৈধ সরকারকে মেয়াদ শেষের এক দিন আগেও উৎখাতের কথা বলা অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক। পাঁচ বছর পর নির্বাচনের মাধ্যমেই তাদের জনপ্রিয়তা যাচাই করতে হবে।



১৫ সেপ্টেম্বর ২০১০
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর এক সভা আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ২০১০ সন্ধ্যা ৭টায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এমপি’র সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত হবে।সভায় সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা এমপি।বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সকল সম্মানিত সদস্যকে উক্ত সভায় যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি অনুরোধ জানিয়েছেন।



০৯ সেপ্টেম্বর ২০১০
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকলকে শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক জানিয়ে তার বাণীতে বলেছেন, ঈদ শান্তি, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের অনুপম শিক্ষা দেয়; সাম্য, মৈত্রী ও সমপ্রীতির বন্ধনে একইসূত্রে গ্রথিত করে সকল মানুষকে। ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনের সর্বড়্গেত্রে ঈদুল ফিতরের শিক্ষা ও মর্মবাণীর প্রতিফলন ঘটাতে আমি সকলের প্রতি আহ্বান জানাই। ধনী-গরীব নির্বিশেষে ঈদ সকলের জীবনে আনন্দের বার্তা বয়ে নিয়ে আসুক এই কামনা করছি। তিনি তার বাণীতে পবিত্র এ দিনে মহান আলস্নাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও মুসলিম বিশ্বের উত্তরোত্তর উন্নতি, অব্যাহত শানিত্ম ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।



০৫ সেপ্টেম্বর, ২০১০
বেশ কয়েকদিন ধরে বিএনপির কতিপয় নেতা নানা ধরণের অসত্য, অশোভন, বিষোদগার ও মনগড়া বক্তব্য দিয়ে দেশের জনগণকে বিভ্রান- করার এক ব্যর্থ অপচেষ্টা চালানোর পাঁয়তারা করছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান মহাজোট সরকার যখন বিএনপি-জামাত জোট সরকারের রেখে যাওয়া পাহাড় সমান সমস্যা ও সংকট নিরবচ্ছিন্নভাবে সমাধানের চেষ্টা করছে সেই সময় এ ধরণের বক্তব্য বিএনপি নেতৃত্বের চরম হতাশা ও রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বেরই প্রমাণ বহন করছে। গত জোট সরকারের আমলে খালেদা জিয়া ও তার পরিবার বাংলাদেশে যে সন্ত্রাসের রাজত্বকাল প্রতিষ্ঠা করেছিল তা দেশ-বিদেশে সকলেরই জানা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে খালেদার এই শাসনামলকে সীমাহীন দুর্নীতি, জাতীয় সম্পদের লুণ্ঠন, হত্যা-নির্যাতন ও সন্ত্রাসী জঙ্গি রাষ্ট্র সৃষ্টির এক অন্ধকার সময় হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল।ওই সময় ফার ইস্টার্ন ইকনোমিক রিভিউ, বিশ্বখ্যাত সংবাদ সাময়িকী টাইম, নিউ ইয়র্ক টাইমসসহ পৃথিবীর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এমনকি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল রিপোর্টেও তাদের অপশাসন, দুঃশাসনের ভয়াবহ চিত্রের বর্ণনা এখনো এদেশের জনগণ ভুলে যায়নি। বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার ও তার সহযোগিরা সেই দুঃসহ ভয়াবহ দুঃশাসনের স্মৃতিকে ঢেকে ফেলার ব্যর্থ অপচেষ্টার অংশ হিসেবেই এ ধরণের বানোয়াট, কুরুচিপূর্ণ ও কিছুটা বিকারগ্রস- বক্তব্য জনগণের সামনে হাজির করার চেষ্টা করছে। জোট সরকারের আমলে খালেদা জিয়া ও তার পরিবার বিশেষ করে খালেদা জিয়ার দুই পুত্র তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও রাষ্ট্রযন্ত্রের যথেচ্ছা ব্যবহারের কথা এদেশের মানুষ কখনো ভুলে যায়নি, কখনো ভুলবে না। বিশ্বের কুখ্যাত সন্ত্রাসী ও মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহীমের সঙ্গে তারেক রহমানের দুবাই বৈঠকে এই মাফিয়া ডনের সহযোগিতায় দুবাইয়ে কোটি কোটি ডলার দিয়ে বিশাল অট্টালিকা কেনার কথা ২০০৭ সালে ঢাকার একটি বহুল প্রচারিত দৈনিক পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। জনশ্রুতি রয়েছে দাউদ ইব্রাহীমের মেয়ের বিয়েতে বহু মূল্যে ডায়মন্ড উপহার দিয়ে তারেক রহমান মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহীমের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে এসেছিলেন। অস্ত্র চোরাচালানির একটি ডিলের কথাও প্রচারিত রয়েছে। খালেদা জিয়ার এই ‘কীর্তিমান’ পুত্র মানি লন্ডারিং-এর মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছিলেন। উল্লেখ্য, মানি লন্ডারিং-এর অভিযোগে আমেরিকান ফেডারেল কোর্ট এ সংক্রান- একটি রায়ও দিয়েছে। বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান সিমেনস্-এর কাছ থেকে খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক-কোকো যে বিপুল অংকের টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন এ ঘটনাটিও ওই সময় আন-র্জাতিক পরিমণ্ডলে আলোচিত হয়েছিল।
বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার কয়েক মাস আগে সৌদি আরবে ১৮৫টি লাগেজ নিয়েছিলেন। এ খবরটিও ওই সময় দেশের পত্র-পত্রিকায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। প্রশ্ন- এই ১৮৫টি লাগেজের ভিতরে কি ধন-সম্পদ তারা বিদেশে পাচার করেছিল? গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এক তদনে- খালেদা জিয়ার পরিবারের নামে ন্যূনতম ১০টি এফডিআরের তথ্য পাওয়া যায়। এ সময় জরিমানা দিয়ে বিপুল পরিমাণ কালো টাকা তারা সাদা করেছিল ঘটনাটি দেশবাসীর অজানা নয়।

বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের দুর্নীতির খতিয়ান সংক্ষিপ্ত এই সাংবাদিক সম্মেলনে দেয়া সম্ভব নয়। তবুও আরো কয়েকটি দুর্নীতির খণ্ডচিত্র তুলে না ধরে পারছি না। ক্যান্টনমেন্টের বিশাল বিলাসবহুল বাড়ি নিয়েই তারা ক্ষান- হয়নি। গুলশানের সুরম্য বাড়ি, নোয়াখালী ও কক্সবাজারে নামে-বেনামে শত শত একর জমি, বনানীতে প্লটসহ অগণিত ফ্যাক্টরি, শিল্প প্রতিষ্ঠান নিশ্চয়ই জেনারেল জিয়ার ছেঁড়া গেঞ্জি ও ভাঙা স্যুটকেস থেকে বেরিয়ে আসেনি। খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের এই সীমাহীন দুর্নীতি ও জাতীয় সম্পদের লুণ্ঠনের তথ্য যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে এক এক করে বেরিয়ে আসতে থাকে, তখন তারেক এ থেকে বাঁচার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে মুচলেকা-দাসখত দিয়ে রাজনীতি করবেন না মর্মে স্বীকারোক্তি দিয়ে লন্ডনে পাড়ি জমিয়েছিলেন। জনশ্রুতি রয়েছে লন্ডনেও তার বিলাসবহুল বাড়ি ও একাধিক রেস্টুরেন্টসহ অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া ও তার দুর্নীতিবাজ পুত্রদ্বয়কে রক্ষার জন্য বিএনপিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে জনগণের মধ্যে বিভ্রানি- সৃষ্টির সুযোগ খুঁজছে। তারা বলছেন, আরাফাত রহমান কোকো ব্যাংককে চিকিৎসাধীন রয়েছে। অথচ আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে যে কোকো প্যারোলের অপব্যবহারের মাধ্যমে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। 


০৪ সেপ্টেম্বর ২০১০
১৫ আগস্টের কালোরাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে হত্যার নির্মম ঘটনা এবং এর পরে ক্ষমতায় আসা সরকারের নির্দয় আচরণের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না প্রধানমন্ত্রী; তাঁর দু’চোখ বেয়ে নেমে এলো নোনা জলের ধারা। আবেগমথিত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা ক্ষমতা দখল করেছিল তারা আমাকে দেশে আসতে দেয়নি। পরবর্তীতে ’৮১ সালে আমি যখন দেশে ফিরে আসি জেনারেল জিয়াউর রহমান আমাকে ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারের বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি।’ তিনি আজ সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে শিশু-কিশোরদের জন্য আয়োজিত বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণকালে বলেন, ‘জেনারেল জিয়াউর রহমান আমাকে ১৫ আগস্টের শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনার জন্য ৩২ নম্বর বাড়ির ভেতরে মিলাদ মাহফিল পর্যন্ত করতে দেয়নি।’ তিনি বলেন, ‘জিয়া আমাদেরকে রাস্তায় মিলাদ পড়তে বাধ্য করেছিল।’ শেখ হাসিনা ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ উল্লেখ করে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট জিয়া বঙ্গবন্ধু যে বাড়ি থেকে তাঁর সকল স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন পরিচালনা করেছিলেন সেই বাড়িটি খোলার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।’ তিনি বলেন, ‘পরবর্তীতে বিচারপতি সাত্তার সরকার আমাকে ধানমন্ডির বাড়িটি বুঝিয়ে দেন। যখন আমি বাড়িটি বুঝে পাই তখন এটি ছিল বিধ্বস্ত। খুনীরা শুধু আমার বাবা, মা, ভাইকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি তারা বাড়িটির মূল্যবান মালামাল লুট করে নিয়ে গিয়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘আমি বাড়িতে ঢুকে সবখানে শুকিয়ে যাওয়া রক্তের দাগ এবং বাড়ির জিনিসপত্র মেঝেতে ছড়ানো-ছিটানো দেখতে পেলাম।’ শেখ হাসিনা যখন বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কজনক এ অধ্যায়ের ঘটনা বর্ণনা করছিলেন, তখন ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে পিন-পতন নীরবতা নেমে আসে। প্রধানমন্ত্রীর আবেগ অনুষ্ঠানের শ্রোতাদেরও ছুঁয়ে যায়, বিশেষ করে শিশুদের তাঁর আবেগময় কণ্ঠে এই নির্মম ঘটনার বর্ণনা শুনে চোখ মুছতে দেখা যায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাড়িটি গ্রহণ করার পর তিনি এবং তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা এই বাড়িটিকে দেশের জনগণের জন্য যাদুঘরে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বলেন, ‘আমি ভাবলাম, যেহেতু বঙ্গবন্ধু এই বাড়ি থেকেই তাঁর সকল গণমুখী আন্দোলন পরিচালনা করেছেন, সেহেতু, দেশের জনগণই এই বাড়ির মালিক।’ শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৪ সালের ১৪ আগস্ট তিনি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি যাদুঘর উদ্বোধন করেন। এর পর থেকে এটি সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। পরবর্তীতে সাধারণ মানুষের জন্য বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ট্রাস্ট গঠন করা হয়।



৪ সেপ্টেম্বর ২০১০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার জাতির বৃহত্তর স্বার্থে নতুন প্রজন্মের কাছে দেশের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্য নিরলসভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি আজ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে শিশু-কিশোরদের জন্য আয়োজিত বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণকালে আরো বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের সামনে মৃুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনককে সপরিবারের হত্যার পর দেশে একাধিকবার সামরিক আইন জারি ও ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির মহোৎসব শুরু হয়েছিল। ফলে আমাদের ছেলে-মেয়েরা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারেনি।’ তিনি মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্য শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুদের উন্নত জীবন গড়ে তোলার লক্ষে তাঁর সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে বলেন, শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ। তাদেরকে অবশ্যই শিক্ষা-দীক্ষায় যোগ্য করে ভবিষ্যৎ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার দেশের মানুষের ভাত, কাপড়, বাসস্থানসহ মৌলিক সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তিনি এ ব্যাপারে সকলের সহযোগিতার কামনা করে বলেন, আমরা ২০২১ সালের মধ্যে সুখী, সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা ক্ষমতা দখল করেছিল তারা আমাকে দেশে আসতে দেয়নি। পরবর্তীতে ৮১ সালে আমি যখন দেশে ফিরে আসি জেনারেল জিয়াউর রহমান আমাকে ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারের বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। আমি রাস্তায় মিলাদ পড়েছি। বিচারপতি সাত্তার সরকার আমাকে ধানমন্ডির বাড়িটি বুঝিয়ে দেন। যখন আমি বাড়িটি বুঝে পাই তখন এটি ছিল বিধ্বস্ত। খুনীরা শুধু আমার বাবা, মা, ভাইকে হত্যা করেনি তারা বাড়িটির সবকিছু লুট করে নিয়ে গিয়েছিল। শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ট্রাস্টের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে বলেন, এখান থেকে প্রতিবছর এক হাজার থেকে ১২শ’ ছাত্র-ছাত্রীকে বৃত্তি প্রদান ছাড়াও বিভিন্নভাবে মানুষকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। এমন কি অস্বচ্ছলদের কাউকে কাউকে ট্রাস্টে চাকরি দেয়া হয়েছে। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত অপারেশনসহ প্রায় ৮ লাখ মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় আহত ৪২ জনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ট্রাস্টের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণের উপর সেমিনার-সিম্পোজিয়াম করা হয়। তিনি শিশুদের মধ্যে এ ধরনের প্রতিযোগিতার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এতে শিশুদের প্রতিভা বিকাশ ঘটে। এ জন্য বঙ্গবন্ধু ট্রাস্টের উদ্যোগে প্রতিবছর সংগীত, ছবি আঁকা, রচনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।



২ সেপ্টেম্বর ২০১০
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট বিপুল ভোটাধিক্যে নির্বাচিত হয়ে জনগণের শান্তি, উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের লক্ষ্যে কাজ শুরু করে। অপরদিকে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের দুঃশাসনহেতু দুষ্কর্মের কারণে নির্বাচনে জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়ে মহাজোট সরকারের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার অসৎ মানসে শুরু থেকেই একের পর এক চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে; বাস্তবতা বিবর্জিত, অসাড়, ভিত্তিহীন এবং নির্লজ্জ মিথ্যাচার চালিয়ে তারা গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষের মাঝে বিদ্বেষ ও বিভ্রানি- ছড়িয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে তৎপর হয়ে উঠে। আমরা বিরোধী দলের মাননীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াসহ বিএনপি নেতৃবৃন্দের এহেন রাজনৈতিক শিষ্টাচার বর্হিভূত, মনগড়া, অশ্লীল, কুৎসিৎ, অসিহষ্ণু, অনভিপ্রেত, কুরুচিকর, উস্কানিমূলক নৈরাজ্যকর কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বিএনপি-জামাত জোট সরকারের দুর্বৃত্তায়ন, দুর্নীতি, দলীয়করণ, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠন ও বিদেশে পাচার, জাতীয় প্রতিষ্ঠাসমূহ ধ্বংস, চরম দারিদ্র্য, সুশাসনের অনুপস্তিতি, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্তিতির মারাত্মক অবনতি এবং সর্বক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতার কারণে দেশে এক ভীতিকর পরিস্তিতি সৃষ্টি হয়েছিল; নাগরিক জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছিল। দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগ স্থবির হয়ে গিয়েছিল। অর্থনীতিতে নেমে এসেছিল বিপর্যয়। অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বে কলংকিত হয়েছিল বাংলাদেশ। এর পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতির চরম মন্দা, গ্যাস, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকট, গগণচুম্বি দ্রব্যমূল্য এমনিতর পটভূমিতেই দেশ পরিচালনার ভার গ্রহণ করেছিল বর্তমান মহাজোট সরকার।
বিরোধী দলীয় মাননীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া চাঁদাবাজি নিয়ে কথা বলেন, তাকে উদ্দেশ্য করে বলতে চাই, - ‘‘আপনি আচরি ধর্ম, পরেরে শেখাও”। গণ চাঁদাবাজির ন্যক্কারজনক ধারণা বিএনপি-জামাত জোট সরকার এদেশে ২০০১ সালে প্রবর্তন করেছিল। আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে হয়েছে তাই চাঁদা দিতে হবে, ছেলে বিদেশে কাজ করে টাকা পাঠিয়েছে নিতে হলে চাঁদা দিতে হবে, ঘরে ফসল উঠেছে চাঁদা দিতে হবে, মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে চাঁদা দিতে হবে, ছেলে চাকরি পেয়েছে চাঁদা দিতে হবে, সাধারণভাবে ব্যবসা করলে চাঁদা দিতে হবে, সরকারি কর্মচারী বেতন পেয়েছে চাঁদা দিতে হবে; চাঁদা না দিলে সন্ত্রাস ও নির্যাতনের ভয়াবহ বিভীষিকায় নাগরিক জীবন বিপন্ন হয়ে উঠতো। তার শাসনামলে রাষ্ট্র ও সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে দুর্নীতির লালন ও দুর্নীতিবাজদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লম্বা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতাসীন হয়ে খালেদা জিয়া নিজেই সর্বোচ্চ পর্যায়ে দুর্নীতি শুরু করেন। বেগম খালেদা জিয়া রাষ্ট্রক্ষমতার অপব্যবহার দ্বারা তার নিজের, তার পরিবারের সদস্যদের, তাদের অনুগত মোসাহেবদের আখের গুছিয়েছেন। জনগণকে নিয়ে তারা কোনদিন ভাবেননি। ক্ষমতার দম্ভ ও অহংকারে মদমত্ত হয়ে ভেবেছেন তারা দেশের প্রচলিত আইনের ঊর্ধ্বে, সকল কিছুর ধরাছোঁয়ার বাইরে। গোটা দেশকে হাওয়া ভবনের নেটওয়ার্কে এনে লুটপাটের এক স্বর্গরাজ্য কায়েম করেছিলেন। তাকের-কোকোদের দাপটে বিএনপির ডাকসাইটের ক্ষমতাধর নেতারা পর্যন্ত কুপোকাত হয়ে গিয়েছিলেন। বাঘা বাঘা মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপিরা বিড়াল বনে গিয়েছিলেন। ১/১১-র পরে আজকের চাটুকার, পদলেহী বিএনপির র্শীষ পর্যায়ের নেতারা কারা অভ্যন-রে চোখের জলে ভাসিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতেন আর বলতেন, ‘‘দুর্নীতিবাজ খালেদা আর তার পুত্রের কারণেই বিএনপি ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে, তাদের কারাগারে আসতে হয়েছে। সাপের পেটে সাপই হয়। তওবা করে বলতেন কারাগার থেকে মুক্ত হলে জীবনের আর কোনদিন বিএনপি করবো না।” আজ সময়ের বির্বতনে তারাই খালেদা জিয়া ও তার পুত্র তারেক-কোকোদের কৃপালাভের আশায় ভন্ডামিপূর্ণ কুরুচিকর প্রতারণামূলক কার্যকলাপে লিপ্ত হয়েছে।বহুল প্রচারিত ভাঙা স্যুটকেস, দৃশ্যমান আয় অর্জনের বেষ্টনির বাইরে অবস্থানরত দুস' ব্যক্তি ও পরিবার হিসেবে রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত বিধবা ভাতা আর সন্তানদের শিক্ষা সহায়কী এবং বখশিস-খয়রাতি আবাসনের সুবিধা নিয়ে যে বা যার পারিবারের যাত্রা শুরু, তিনি ও তারা আজ বাংলাদেশে অন্যতম শীর্ষ ধনী পরিবার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

সন্ত্রাস ও দলীয়করণের সঙ্গে খালেদা জিয়া সরকারের লাগামহীন দুর্নীতি বাংলাদেশ পৃথিবীর একমাত্র দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ, তার শাসনকে এদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দুর্নীতিমণ্ডিত শাসন এবং সরকার প্রধান হিসেবে এক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার জন্য তাকে এদেশের সবচেয়ে দুর্নীতিবাজ, দুর্নীতিতে লাভবানমণ্ডলীর সারথী ও লুটেরাদের প্রতিভূ হিসেবে যিনি পরিচিতি অর্জন করেছিলেন। এককথায় বলতে গেলে রাষ্ট্রের সব বিভাগ ও কর্মবৃত্তে দুর্নীতি একমাত্র অনুসরণীয় নীতি হিসেবে বিএনপি-জামাত জোট সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিল।

বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্র আর সন্ত্রাসমুক্ত নাগরিক জীবন উপহার দিবেন! তাকে গণতন্ত্রপ্রিয় দেশবাসীর পক্ষ থেকে জিজ্ঞাসা করতে চাই ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ খুনের দায়ে দণ্ডিত আসামি, অবৈধ ক্ষমতা দখলদার স্বৈর সামরিক শাসক জিয়ার অনুকম্পায় মুক্ত আর বায়তুল মোকাররমের গিনি সোনার দোকানে ডাকাতির অভিযোগে গ্রেফতারকৃত তথাকথিত নেতাকে পাশে বসিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ইফতার খাইয়ে গণতন্ত্র ও সন্ত্রাসমুক্ত নাগরিক জীবন উপহার দিবেন; তা জাতির সাথে নির্লজ্জ প্রহসনমূলক আচরণ বৈ আর কি হতে পারে?

বিরোধী দলের মাননীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রায়শই দ্রব্যমূল্য নিয়ে কথা বলেন। আমরা বলতে চাই, মহাজোট সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে অর্থাৎ স্থিতিশীল সহনীয় রাখার অবিরত প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।আমাদের সরকার পবিত্র রমজান মাসে জনজীবনে স্বস্থি আনয়ন ও চালের দাম স্থিতিশীল রাখার জন্যে দেশব্যাপী ৯৩ হাজার মেট্রিক টন চাল ওএমএসের মাধ্যমে ২৪ টাকা সের দরে বিক্রির ব্যবস্থা করেছে। জনগণের চাহিদাকে পুঁজি করে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার সকল সুযোগ বন্ধ করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। বিএনপি-জামাত জোট সরকার অসৎ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট গড়ে তোলে হাজার হাজার কোটি টাকা জনগণের পকেট থেকে লুটে নিয়ে দেশ ও বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। এই অবৈধ লুটের সম্পদ ও বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের শিরোমণি খালেদা জিয়ার প্রাণধিক প্রিয় পুত্র তারেক ও কোকো। বেগম জিয়াকে বলি ‘‘কাঁচের ঘরে বসে অন্যের প্রতি ঢিল ছুঁড়বেন না।” 

Saturday, September 18, 2010

বিএনপির জন্ম যেভাবে সেনানিবাসে: ১


মার্কিন দূতাবাসকে গোপন বৈঠক সম্পর্কে জানাতেন যাদু মিয়া


মিজানুর রহমান খান | তারিখ: ১৯-০৯-২০১০
বিএনপি গঠনে রাজনীতিকেরা প্রথম বৈঠক করেছিলেন বেগম খালেদা জিয়ার বর্তমান সেনানিবাসের বাড়িতেই। বৈঠকগুলো হতো গভীর রাতে। এসব গোপন বৈঠক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানানো হতো ঢাকার মার্কিন দূতাবাসকে। জিয়াউর রহমানের পক্ষে এ কাজ করতেন প্রয়াত মশিউর রহমান যাদু মিয়া। তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ-ভাসানী) করতেন। তাঁকে প্রধানমন্ত্রিত্বের টোপ দেওয়া হলেও কথা রাখেননি জিয়া। এমনকি তাঁর মৃত্যু আজও পরিবারের কাছে রহস্যাবৃত।
ঢাকার তখনকার মার্কিন দূতাবাসের পলিটিক্যাল কাউন্সেলর স্টিফেন আইজেনব্রাউনের কাছে যাদু মিয়া গোপন বৈঠক সম্পর্কে তথ্য দিতেন। আইজেনব্রাউনের পেশাগত কূটনৈতিক-জীবনের শুরু পঁচাত্তরে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বাংলাদেশ ডেস্কে।
আইজেনব্রাউন ২০০৪ সালে মার্কিন পররাষ্ট্রবিষয়ক কথ্য ইতিহাস কর্মসূচির পরিচালক চার্লস স্টুয়ার্ট কেনেডিকে সাক্ষাৎকার দেন। এতে তিনি বিএনপির জন্মের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানান। ১৯৭৬-৭৮ ও ১৯৯৬-৯৮ সালে তিনি ঢাকায় মার্কিন পলিটিক্যাল অফিসার ও পলিটিক্যাল কাউন্সেলর ছিলেন।
যেভাবে আছে সেভাবেই থাক: সম্প্রতি প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আইজেনব্রাউন ও চার্লস স্টুয়ার্ট কেনেডির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে এ বিষয়ে তাঁদের কোনো বক্তব্য বা ব্যাখ্যা জানা সম্ভব হয়নি। সাবেক পেশাদার মার্কিন কূটনীতিক স্টুয়ার্ট কেনেডি এখন ভার্জিনিয়ায় থাকেন। এই প্রতিবেদকের কাছে গত ৩০ আগস্ট পাঠানো ই-মেইল বার্তায় তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমি বাংলাদেশ সম্পর্কে অল্পই জানি। আমি কিছু বলে যদি ইতিহাসে ইতিবাচক কিছু যোগ না করতে পারি, তাহলে তা ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ ঘটাবে। তার চেয়ে বরং সাক্ষাৎকারগুলো যেভাবে আছে, সেভাবেই থাকুক।’ আইজেনব্রাউন এই প্রতিবেদকের কাছে শুধু তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠাতে সম্মত হন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন কর্মকর্তার মাধ্যমে আইজেনব্রাউনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। আইজেনব্রাউন জানিয়েছেন, তিনি এখন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ও মার্কিন কংগ্রেস অনুমোদিত মানবাধিকারবিষয়ক প্রতিবেদনসংক্রান্ত সমন্বয়ক হিসেবে কর্মরত আছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ সম্প্রতি প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিএনপির জন্ম-প্রক্রিয়ায় তাঁর ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মশিউর রহমান যাদু মিয়া এবং তিনি বিএনপির গঠন-প্রক্রিয়ায় বড় ভূমিকা রাখেন। তবে ১ সেপ্টেম্বর মওদুদ আহমদ এক প্রশ্নের জবাবে আইজেনব্রাউনের সঙ্গে তাঁর পরিচয়ের সুযোগ ঘটেছিল কি না, তা স্মরণ করতে পারেননি।
ঢাকায় নিযুক্ত সাবেক মার্কিন কূটনীতিক আইজেনব্রাউন সেনানিবাসে জেনারেল জিয়াউর রহমান কীভাবে বিএনপির জন্ম দিয়েছিলেন, তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করেছেন। ২০০৪ সালে চার্লস স্টুয়ার্ট কেনেডির একটি প্রশ্নের সূত্রে বিএনপি প্রসঙ্গ আসে। আইজেনব্রাউন কথা প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপি নামের একটি রাজনৈতিক সংগঠনকে কেন্দ্র করে তাঁর কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীসহ কয়েকজন রাজনীতিকের সঙ্গে যোগাযোগের কথাও স্মরণ করেছেন তিনি। এর মধ্যে ‘অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ পারিবারিক সম্পর্কের’ কথা বলেন জাতীয় পার্টির নেতা ও ইত্তেফাক-এর সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর পরিবারের সঙ্গে। আবুল হাসান চৌধুরী তাঁর সঙ্গে জানাশোনার বিষয়টি প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন।
আইজেনব্রাউন বেশ নাটকীয়ভাবে এবং যতটা সম্ভব রসিয়ে বিএনপির জন্মবৃত্তান্ত তুলে ধরেছেন। তাঁর কথায়, ‘১৯৭৮ সালে বিএনপির জন্মের সঙ্গে আমার গল্পের মিল খুঁজে পাওয়া যাবে। পুরান ঢাকায় (যাদু মিয়ার বাসা ছিল মগবাজারে) আমাদের গোপন বৈঠকগুলো হতো। এর সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত ছিলাম। জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় ছিলেন। তিনি একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি ডান ও বামপন্থীদের মধ্যকার প্রবল সক্রিয় অংশকে একত্র করেছিলেন। একদিকে মোল্লা, অন্যদিকে বামপন্থী—উভয়ের কাছ থেকে তিনি পরামর্শ নিতেন। বিএনপি গঠন-প্রক্রিয়ায় সেনানিবাসে যেসব গোপন বৈঠক হয়েছিল, তার বিবরণ আমি পেতাম। সে বিষয়ে যিনি আমাকে অবহিত করতেন, তিনি ছিলেন একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ। যিনি পরবর্তীকালে জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভার সিনিয়র মিনিস্টার হয়েছিলেন।’
আইজেনব্রাউন বলেছেন, বাম ও ডানপন্থীদের নিয়ে দল গঠনের একটি প্রক্রিয়া তখন ছিল। মন্তব্য চাওয়া হলে মওদুদ আহমদ গত ২১ আগস্ট প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেটা তো একদম ঠিক কথা। সেটাই ঘটেছিল। কারণ, ন্যাপ থেকে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরা সংখ্যায় অনেক। প্রায় ৭০ জন এমপি ছিলেন ন্যাপ থেকেই। আপনি যদি তখনকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নেন, তাহলে দেখবেন বামপন্থী দল থেকে বেশি এসেছিল। তখন শহীদ জিয়ার দলে আমরা যাঁদের বামপন্থী বলি, তাঁদের সংখ্যা এতটাই বেশি ছিল যে বিএনপিকে বলা যেত লেফট অব দ্য সেন্টার। যদিও ধর্মভিত্তিক রাজনীতির যে বিধানটা বাহাত্তরের সংবিধানে ছিল, সেটা তিনি তুলে দিয়েছিলেন। ’
‘এক সপ্তাহ পরে ভ্রু নাচ’: আইজেনব্রাউন তাঁর সাক্ষাৎকারে নিশ্চিত করেন যে তিনি বিএনপির গঠন-প্রক্রিয়া সম্পর্কে ওয়াশিংটনকে বিস্তারিত অবহিত রাখতেন। তাঁর কথায়, ‘৭৮ সালের বসন্তে ঢাকার রাজনৈতিক বিষয় সম্পর্কে ওয়াশিংটনে প্রতিবেদন পাঠাতে পাঠাতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। তখনকার বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে তেমন কোনো গল্প বলার কিছু নেই। কারণ, তখন রাজনীতি উন্মুক্ত ছিল না। তবে বাংলাদেশের অবসরপ্রাপ্ত কিছু ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে একটা সম্পর্ক বজায় রাখতে আমি সচেষ্ট ছিলাম।’ আইজেনব্রাউনের এই সাক্ষাৎকারে অবশ্য বিএনপির গঠন-প্রক্রিয়ার প্রশ্নে শুধু যাদু মিয়ার সঙ্গেই ওই সময় তাঁর নিবিড় যোগাযোগের কথা উল্লেখ করেছেন।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে মওলানা ভাসানীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন যাদু মিয়া। দুই প্রবীণ সাংবাদিক ফয়েজ আহমেদ ও এবিএম মূসা অবশ্য নিশ্চিত করেন যে ভাসানী তাঁকে নিয়ে সংশয়গ্রস্ত ছিলেন। সাবেক ন্যাপের (ভাসানী) নেতা রাশেদ খান মেনন এ বিষয়টি সমর্থন করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনি মিশ্র চরিত্রের ব্যক্তিত্ব ছিলেন। গোঁড়া বুর্জোয়া স্বভাবের সঙ্গে তাঁর একটি গণমুখী দিকও ছিল। এর পর থেকে অব্যাহতভাবে পাকিস্তানি সামরিক প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখেন। একাত্তরে কলকাতায় গেলেও তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি। লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনি নিঃসন্দেহে বড় চরিত্র। সিনিয়র মিনিস্টার থাকাকালে হাসপাতালে আমি তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। ভাসানী ন্যাপের দক্ষিণপন্থী গ্রুপের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। বাহাত্তরের ১ অক্টোবর রাতে আমি ভাসানীর মুখে পাকিস্তানিদের দালালি করার জন্য জেলহাজতে থাকা যাদু মিয়াকে ভর্ৎসনা করতে শুনেছিলাম।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, শুধু যাদু মিয়া নন, সেদিন জেনারেল জিয়ার দল গঠনের সমর্থকদের অনেকেই বর্তমান সরকারের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে আছেন।
জেনারেল জিয়া যখন সেনানিবাসের বাড়িতে গোপন রাজনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছিলেন, তখন এইচ এম এরশাদ সেনাবাহিনীর উপ-সেনাপ্রধান। এরশাদের শ্যালক মহিউদ্দিন হলেন যাদু মিয়ার জামাতা। এরশাদ মহিউদ্দিনকে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও যাদু মিয়ার ছেলে শফিকুল গনি স্বপনকে প্রতিমন্ত্রী করেন। যাদু মিয়ার মেয়ে মনসুরা মহিউদ্দিন (মহিউদ্দিনের স্ত্রী) সাংসদ নির্বাচিত হন। যাদু মিয়ার মৃত্যুর পর তাঁর মেয়ে রিতা রহমানের বিয়ে হয় মেজর (অব.) খায়রুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি জেলহত্যা মামলা থেকে অব্যাহতি পান। পঁচাত্তরে তিনি ফারুক-রশীদদের সঙ্গে লিবিয়া যান। বিএনপি তাঁকে মালয়েশিয়ায় হাইকমিশনার করেছিল। আওয়ামী লীগের বিগত আমলে তাঁকে তলব করা হলে তিনি আর দেশে ফেরেননি।
স্টিফেন আইজেনব্রাউনের বর্ণনায়, ‘আমি তৃতীয় যে ব্যক্তির দিকে নজর রাখছিলাম, তিনি পুরান ঢাকায় বাস করতেন। তাঁর নাম মশিউর রহমান। তিনি যাদু মিয়া বা ম্যাজিক ম্যান হিসেবে পরিচিত ছিলেন। পঁচাত্তরে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সঙ্গে বামপন্থী ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি গঠনে তিনি সহায়তা দিয়েছিলেন। এতে প্রতীয়মান হয়েছিল যে যাদু মিয়া সক্রিয় রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছেন। বাস করতেন পুরান ঢাকায়। আর বেলকনিতে বসে হুক্কা টানতেন। আমরা একত্রে বসে বাংলাদেশের রাজনীতি বিষয়ে মতবিনিময় করতাম। এ ঘটনার এক সপ্তাহ কিংবা আরও কিছুটা সময় পরে এক তরুণ মার্কিন দূতাবাসে এলেন। আমার সঙ্গে দেখা করলেন। তরুণটি জানালেন যাদু মিয়া আমার সঙ্গে অনতিবিলম্বে সাক্ষাৎ করতে চান। সুতরাং আমি রিকশায় চেপে পুরান ঢাকার উদ্দেশে বেরিয়ে পড়লাম। তাঁর গায়ে বেশ সৌন্দর্যখচিত জামা-কাপড় লক্ষ করলাম। বেশ ফিটফাট। দাড়ি কামিয়েছেন। তাঁকে এমন কেতাদুরস্ত আমি আগে দেখিনি। এবারে চোখে পড়ল না হুক্কাটিও। আমি তাঁর ভ্রু নাচন (ক্ষমতার ঝিলিক) দেখলাম। একেবারে একজন নতুন মানুষ। ৭০-এর কোঠায় দাঁড়িয়ে কেমন নবীন হয়ে উঠেছেন। তিনি আমাকে বললেন, জেনারেল জিয়া একটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে চান।’
উল্লেখ্য, জিয়া কখন রাজনৈতিক দল করতে চান, সেটা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি বিরাট প্রশ্ন। সে কারণে মওদুদ আহমদকে প্রশ্ন করি, আপনার কি এটা স্মরণে আছে যে জেনারেল জিয়া আপনাদের ডেকে দল করার আগ্রহ ব্যক্ত করেছিলেন, নাকি আপনারাই তাঁকে উৎসাহিত করেছিলেন। মওদুদ বলেন, ‘আমরা তাঁকে সহায়তা দিয়েছি। তিনি ছিলেন খুবই তীক্ষ।’ মওদুদ আহমদ ২০০০ সালে প্রকাশিত গণতন্ত্র এবং উন্নয়নে চ্যালেঞ্জ শীর্ষক বইয়ে উল্লেখ করেন, ‘রাজধানীর রাজপথে সৈনিক ও জনতার স্বতঃস্ফূর্ত মিছিল রাতারাতি তাঁকে এক জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছিল। এই জনপ্রিয় সমর্থন অবলম্বন করে জিয়া সাফল্যজনকভাবে তাহের ও মোশতাককে দমন করতে সফল হন।
গভীর রাতে প্রথম সভা: ’৭৮ সালের বসন্তে মশিউর রহমান আইজেনব্রাউনকে বলেছিলেন, জিয়াউর রহমান দল করতে চান। কিন্তু জিয়ার জানা নেই যে এটা কীভাবে করতে হবে। সুতরাং রাজনীতিতে যাঁরা অবসরে গেছেন, তিনি তাঁদের একটা সভা ডাকলেন। এই সভা ডাকা হয়েছিল গভীর রাতে। জিয়া তাঁদের কাছ থেকে উপদেশ নিলেন। সেই বৈঠকে যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, যাদু মিয়া আমার কাছে তাঁদের নাম প্রকাশ করলেন।
আইজেনব্রাউনের সাক্ষাৎকারে সেই নামগুলোর উল্লেখ নেই। তবে সেনানিবাসের বাড়িতে পরবর্তীকালে গভীর রাত কোনো ব্যাপারই ছিল না। গভীর রাতই ছিল আকর্ষণ। মওদুদ আহমদের মতে, ‘ক্ষমতায় আসার এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে জিয়া ব্যক্তিগতভাবে ও গোপনে নিজের অফিস ও বাড়িতে রাজনীতিবিদদের সঙ্গে দেখা করে সলাপরামর্শের প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন।’ 
এ বিষয়ে মওদদু আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা তো প্রতিদিন রাত তিনটা-চারটা পর্যন্ত ওনার ওখানে আলোচনা করতাম।’ তাঁর তথ্য অনুযায়ী, ’৭৭ সালের শেষ ডিসেম্বর বা ’৭৮ সালের জানুয়ারির এক রাতে জিয়ার সেনানিবাসের বাসভবনে বসে একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার কাঠামো তৈরি করা হয়। ’৭৮ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি জাগদল করা হয়।’
সেনানিবাসের বাড়িতে অনুষ্ঠিত ওই প্রথম বৈঠক সম্পর্কে আইজেনব্রাউন বলেন, ‘আমি বেশ বুঝতে পারলাম সেই সভায় বামপন্থী ও দক্ষিণপন্থীদের সম্মিলন ঘটেছিল। যাদু মিয়ার মতো লোক ছিলেন বামপন্থা থেকে। আর ডানপন্থীদের মধ্যে মুসলিম লীগ ও অন্যান্য ধর্মভিত্তিক দলের নেতারা। বাস্তবে তাঁরা প্রত্যেকেই ষাটের দশকের শেষভাগে শেখ মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এখন সেই সব লোক হয় কারাগারে কিংবা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন। ঢাকার রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে তখন যাঁরা ছিলেন, তাঁরা হয় অতি বাম না হয় অতি ডান। সুতরাং জিয়া তাঁদের মধ্য থেকে বেছে বেছে কয়েকজনকে গোপনে সেনানিবাসে একত্র করেছিলেন। সেই বৈঠক মধ্য রাতে হয়েছিল।’
উল্লেখ্য, ঢাকায় নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিস ইউজিন বোস্টারকে স্টিফেন আইজেনব্রাউন ছয় মাসের জন্য রাষ্ট্রদূত পেয়েছিলেন। বোস্টার ’৭৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র দপ্তরকে পাঠানো এক বার্তায় বাংলাদেশের তৎকালীন রাজনৈতিক দৃশ্যপট সম্পর্কে একটি বিশ্লেষণ পাঠিয়েছিলেন। বোস্টার এতে লিখেছেন, ‘বামপন্থী দলগুলোর মধ্যে চরম উপদলীয় কোন্দল বিরাজমান। তাদের সংগঠনের দলীয় কাঠামো এবং সদস্যপদ অস্পষ্ট। মওলানা ভাসানীর নামমাত্র নেতৃত্বে পরিচালিত পিকিংপন্থী বামপন্থীরা পুনর্গঠিত হয়েছেন। এর নেতৃত্ব দিয়েছেন মশিউর রহমান। তিনি দলের মহাসচিব হিসেবে আবির্ভূত হন। ’৭৪ সালে ন্যাপ তিক্ত অভ্যন্তরীণ বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। মশিউর রহমান ও ডা. আলীম আল রাজি সংশোধনবাদীদের পক্ষে অবস্থান নেন। ওই সময় ন্যাপে বিতর্ক ছিল, সর্বহারার একনায়কতন্ত্র কায়েমের জন্য খাঁটি আদর্শবাদের নীতিতে অবিচল থাকা নাকি সমন্বয় ও সংশোধনবাদের পথে শ্রেণীহীন সমাজ অর্জনের পথে অগ্রসর হওয়া। কাজী জাফর আহমেদ ও রাশেদ খান মেনন তাঁদের প্রতিপক্ষ ছিলেন। ’৭৪ সালে ন্যাপ-ভাসানী বিভক্ত হয়। কাজী জাফর ও মেনন গঠন করেন ইউপিপি। ডা. আলীম আল রাজিও নিজের দল গঠনের কথা ভাবছেন। তাই তিনি যাদু মিয়াকে ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’ 
১৯৭৬ সালে ভাসানীর মৃত্যুর পর যাদু মিয়া ন্যাপের সভাপতি হন। চল্লিশের দশকে তেভাগা আন্দোলন ছিল উত্তাল। তদনারায়ণ বর্মণ নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় যাদু মিয়া প্রধান আসামি হন। তিনিই গুলি করেছিলেন বলে মামলা হয়েছিল। সেই খুনের বিচার হয়নি। আলিপুরের আদালতে মামলা প্রত্যাহার হয়। রাশেদ খান মেনন প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাদু ভাই জিয়ার সঙ্গে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে আমি আর হায়দার আকবর খান রনো তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলাম। তিনি আমাদের বলেছিলেন, “বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা, আর্মি ছুঁলে ছত্রিশ ঘা। তাই বুঝেশুনে চলতে হবে”।’
স্টিফেন আইজেনব্রাউন তাঁর সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেন, ‘যাদু মিয়া আমাকে বললেন, সেনানিবাসে অনুষ্ঠিত বৈঠকের বিস্তারিত আপনার কাছে প্রকাশ করতে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সুতরাং যাদু মিয়ার সঙ্গে বৈঠক শেষে আমি দূতাবাসে ফিরলাম। সব কথা খুলে বললাম ক্রেইগ বেক্সটারকে (পলিটিক্যাল কাউন্সেলর)। তিনি তা জানিয়ে দিলেন রাষ্ট্রদূতকে। এ সম্পর্কে তখন পর্যন্ত আমাদের কিছুই জানা ছিল না। সুতরাং আমরা এ কথা দ্রুত জানিয়ে দিলাম ওয়াশিংটনকে। এর কয়েক দিন পর যাদু মিয়া আবার আমাকে ডেকে পাঠালেন। তিনি তখন আমাকে সেনানিবাসে অনুষ্ঠিত রাত্রিকালীন ধারাবাহিক বৈঠক সম্পর্কে বিস্তারিত বলেছেন। জিয়া কী করতে চান, কার কী চিন্তাভাবনা, কে কী বলেছেন ইত্যাদি। আমি তখন এসব আলাপ-আলোচনার বিষয় সম্পর্কে রিপোর্ট করেছি ওয়াশিংটনকে। সেই ঘটনাবলি সম্পর্কে আজ যাঁরা কৌতূহলী, তাঁরা মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে আর্কাইভে কেব্ল (তারবার্তা) খুঁজে পেতে পারেন। সেখানেই রয়েছে জেনারেল জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক দল গঠনের অনুপুঙ্খ ইতিহাস।’