Wednesday, October 6, 2010

২৩ সেপ্টেম্বর ২০১০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নশীল দেশ বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও সময় নির্দিষ্ট করে নতুন সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বুধবার এখানে জাতিসংঘ সদর দফতরে সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনের পাশাপাশি অভাব, ক্ষুধা ও জেন্ডার সমতার ওপর এক গোলটেবিল বৈঠকে ভাষণ দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, নতুন এই অর্থনৈতিক এমডিজি হবে বাস্তবায়নাধীন সকল এমডিজির ভিত্তি। শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের স্থিতিশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই বিভিন্ন দেশের জাতীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে পারে। এর ওপরই নির্ভর করছে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহের সফল বাস্তবায়ন। এ জন্য স্বল্পোন্নত বিশ্বের জন্য চাই টেকসই অর্থনীতির নিশ্চয়তা ও তহবিলের সুষ্ঠু প্রবাহ। ‘মানবজাতির প্রধান শত্র“ হচ্ছে দারিদ্র্য’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসবাদসহ সামাজিক বিশৃংখলারও কারণ দারিদ্র্যই। তিনি বলেন, জাতীয় উন্নয়নে নারীর অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করার জন্য তাদেরকে সমান সুযোগ দিতে হবে। দশ বছর পর একই জায়গায় সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহের অগ্রগতি পর্যালোচনার অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘২০০০ সালে এই ঘোষণা গৃহীত হয়েছিল। আমিও এর একজন স্বাক্ষরদাতা ছিলাম তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে।’ এ জন্য তিনি নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে উল্লেখ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, এমডিজি-১ প্রণয়নের সময় তিনটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ধার্য করা হয়েছিল। এগুলো হচ্ছেÑ যেসব মানুষের প্রতিদিনের আয় ১ মার্কিন ডলারেরও কম তাদের সংখ্যা ২০১৫ সালের মধ্যে অর্ধেকে নামিয়ে আনা, নারীসহ সবার জন্য উৎপাদনমুখী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা এবং দারিদ্র্যের হার অর্ধেকে কমিয়ে আনা। কিন্তু এই তিন লক্ষ্যের একটিও অর্জিত হয়নি। বরং বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দায় আরো একশ’ কোটি মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে নেমে গেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমডিজি রিপোর্টে ২০০৫ সালের মধ্যে বিশ্ব দারিদ্র্য ৪৬ শতাংশ থেকে ২৭ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই অগ্রগতি একেক দেশে একেক রকম রাজনৈতিক অবস্থায় তহবিল প্রবাহের ওপর নির্ভরশীল ছিল। উন্নয়ন সহযোগীদের সামাজিক লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে হবে। লক্ষ্য প্রণয়নকালে শুধু সামাজিক বিষয়ই বিবেচনায় নেওয়া হয়। আর্থিক বিষয় উপযুক্ত গুরুত্ব পায় না। অথচ সামাজিক লক্ষ্য অর্জনে এটা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করা গেলে স্বাভাবিক নিয়মে সামাজিক উন্নয়ন ঘটে বলে তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক এমডিজিকে হতে হবে সকল এমডিজির ভিত্তি। বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশের দারিদ্র্য দূরীকরণে ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। ক্ষুদ্র ঋণ ও ক্ষুদ্র তহবিলের জোগান দেওয়া হচ্ছে। দরিদ্র কৃষকরা মাত্র ১০ টাকা বা ৪ সেন্ট দিয়ে ব্যাংকে হিসাব খুলতে পারছেন। তারা নিজেরাই নিজেদের হিসাব পরিচালনা করছেন। তাদের দেওয়া ঋণের সুদের হার কম। কৃষি কাজ, ছোট খামার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ে তারা নিজেদের নিয়োজিত রাখছেন। এতে আগামী পাঁচ বছরে প্রতি দরিদ্র পরিবারে অন্তত একজনের কর্মসংস্থান করা সম্ভব হবে তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা, প্রাথমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে বই বিতরণ, ছাত্র-ছাত্রীদের সমানভাবে স্কুলে ভর্তি, অভিভাবকরা যাতে তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে উৎসাহিত হন সেজন্য শিক্ষা কর্মসূচির অধীনে খাদ্য রেশন ও অর্থ দেওয়া হচ্ছে। বেকার যুব সমাজ কর্মসংস্থানের জন্য সম্পদ বন্ধক না রেখে ও কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারছে। শেখ হাসিনা বলেন, দেশে আশ্রায়ন প্রকল্পে সরকারি জমিতে দরিদ্র ও গৃহহীন মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই ও কর্মসংস্থান করা হচ্ছে। স্বাধীনতার সুবর্ণ-জয়ন্তী বছর ২০২১ সালের মধ্যে দারিদ্র্য সীমা ৪৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। এ লক্ষ্যে বাজেটে অর্ধেকেরও বেশি অর্থের জোগান দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে তৃণমূল পর্যায়ে ১৩ হাজার নারী প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ১৫ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ করা হয়েছে। দেশের সেনাবাহিনীতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হয়েছেন নারী। এ ছাড়া হাইকোর্টের জজ ও সরকারের সচিব রয়েছেন নারী। বর্তমান মন্ত্রিসভায় পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, কৃষি, শ্রম ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা এবং একজন হুইপও নারী বলে তিনি উল্লেখ করেন। দেশের পোশাক শিল্পে ২০ লাখ অর্থাৎ মোট শ্রমিকের ৮৫ ভাগই নারী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী গর্বের সঙ্গে বলেন, এমডিজি-৩ কর্মসূচিতে বাংলাদেশ লক্ষ্য অর্জন করেছে।



২২ সেপ্টেম্বর ২০১০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈশ্বিক জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি গতকাল জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সম্মেলন কক্ষে জীব-বৈচিত্র্য বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের পূর্ণাঙ্গ বৈঠকে এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের ধবংসাত্মক কর্মকান্ডের কারণে পৃথিবী থেকে হাজার হাজার প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এবং বিনষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য। অথচ কোটি কোটি বছরের বিবর্তনে পৃথিবীতে বিস্ময়কর পরিবেশগত ভারসাম্য তৈরি হয়েছিল, যেখানে লাখ লাখ প্রজাতি সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করে আসছে। শেখ হাসিনা বলেন, মানব জাতির আবির্ভাবের পর থেকে তাদের অস্তিত্ব ও অগ্রগতি রক্ষায় প্রকৃতি প্রয়োজনীয় সম্পদ ও অত্যাবশ্যকীয় রসদ জুগিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতির আশীর্বাদের কারণেই পৃথিবীতে মানব সভ্যতা বিকাশ লাভ করেছে। তিনি দুঃখ করে বলেন, ‘কিন্তু আমরা এ সৌভাগ্য ও প্রকৃতির আর্শীবাদকে ধরে রাখতে পারিনি। নিষ্ঠুরভাবে প্রকৃতির উদারতার অপব্যবহার করে পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট এবং জীব-বৈচিত্র্য ধবংস করছি। এর ফলে আমাদের অস্তিস্ত¡ আজ হুমকির মুখে।’ জীব-বৈচিত্র হ্রাস ও দারিদ্র্যের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্ব জনসংখ্যার অধিকাংশই দরিদ্র। জীব-বৈচিত্র্যের ওপর তাদের দৈনন্দিন জীবন নির্ভরশীল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বজুড়ে উন্নয়নশীল দেশে নারী কৃষকরা খাদ্যের ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ উৎপাদন করে। অথচ তারাই জীব-বৈচিত্র্য হ্রাস, ভূমিক্ষয়, জলবায়ু পরিবর্তন এবং তীব্র দারিদ্র্যের সবচেয়ে বেশি শিকার। এখনও পর্যন্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তাদের পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্ব নেই। তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমার বিশ্বাস একটি সফল নীতি ও কর্মসূচী প্রণয়নে তাদের মতামত সন্দেহাতীতভাবে সহায়ক হবে।’ জীব-বৈচিত্র্য বিয়ষক বৈঠকে জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও এর টেকসই ব্যবহারে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার স্বীকৃতিতে শেখ হাসিনা সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণে নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সকল স্তরে নারীদের পূর্ণ অংশগ্রহণের প্রয়োজনীতার ওপর সিবিডি (কনভেনশন অন বায়ো ডাইভারসিটি) যে গুরুত্বারোপ করেছে, তা আমার বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। আমি আমার নিজ দেশে সকল স্তরে নারীদের পূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষে কাজ করে যাচ্ছি।’ চলতি বছর জীব-বৈচিত্র্যের আর্ন্তজাতিক বছর পালিত হচ্ছে এবং এর মূল প্রতিপাদ্য উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে জীব-বৈচিত্র্য। এ বছরের শেষে জীববৈচিত্র্য বিষয়ে জাপানে পুনরায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জীব-বৈচিত্রের আন্তর্জাতিক বছর পালিত হচ্ছে বিধায় আমরা আজ জীব-বৈচিত্র্য বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে আসতে পেরেছি। এ বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও এর টেকসই ব্যবহার প্রক্রিয়াকে অবশ্যই নিশ্চিত করবে।’ জীব-বৈচিত্র্য হ্রাসের মূল কারণ চিহিৃত ও একে রক্ষায় সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জাতিসংঘ মহাসচিবের আহ্বানকে যথাযথ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশা করি এ ব্যাপারে সকলেই একমত হবেন।’ পৃথিবীর জীব-বৈচিত্রের ভারসাম্য বিনষ্টের জন্য মানুষের কর্মকান্ডকে দায়ী করে শেখ হাসিনা তা রক্ষায় সকলের প্রতি জরুরি উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান। উদার বিনিয়োগের ফলে এটা সম্ভব হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এবার আন্তর্জাতিক জীব-বৈচিত্র দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে জীব-বৈচিত্র বছর। আগামী অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় নাগোয়ার কনভেনশনে এ বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট বার্তা দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দারিদ্র্য ও অভাব, যথেচ্ছ প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলনসহ নানা কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটেছে। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কৌশল নির্ধারণ এখন সময়ের দাবি। তিনি বলেন, ‘আমাদের ভুলে গেলে চলবে না পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় পৃথিবীতে প্রত্যেক প্রজাতির নির্দিষ্ট ভূমিকা রয়েছে। এ ধরিত্রী রক্ষায় সকল প্রজাতিই বিস্ময়কর ও রহস্যপূর্ণভাবে একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই সকল প্রজাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার অর্থ পৃথিবীতে আমাদের অস্তিত্বই টিকিয়ে রাখা।’



২২ সেপ্টেম্বর ২০১০
মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব ফেরদৌস জমাদ্দার গতকাল রাত ৯:৩০ মিনিটে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহে --রাজিউন)।
তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকাল তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি ২ ছেলে, ৩ মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন, নাতি-নাতনি, গুণগ্রাহী, সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন।
উল্লেখ্য, মরহুম আলহাজ্ব ফেরদৌস জমাদ্দারের বড় ছেলে ফরহাদ ফেরদৌস মাদারীপুর উপজেলার নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান।
আজ দুপুর ১২টায় মরহুমের প্রথম নামাজে জানাজা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয়, সহযোগী সংগঠন ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দসহ বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। মরহুমের দ্বিতীয় নামাজে জানাজা আজ বাদ আছর মাদারীপুর অনুষ্ঠিত হওয়ার পর পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। জানাজা শেষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা এমপি’র পক্ষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন এমপি। এরপর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের পক্ষ থেকে মরহুমের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এমপি, ওবায়দুল কাদের এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক এমপি, আহমদ হোসেন, আ. ফ. ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ আবুল হোসেন এমপি, নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান এমপি, দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান খান এমপি, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু এমপি প্রমুখ। এছাড়াও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম. এ আজিজ, আওয়ামী লীগ নেতা মো. বাচ্চু মিয়া, নুরুল আমিন রুহুল, হেদায়েতুল ইসলাম স্বপন, মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা, কৃষক লীগ নেতা সোহাগ তালুকদার, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোল্লা আবু কাওছার প্রমুখ উপসি'ত ছিলেন। মরহুমের কফিন নিয়ে মাদারীপুর গিয়েছেন- সৈয়দ আবুল হোসেন এমপি, শাহজাহান খান এমপি, আ. ফ. ম বাহাউদ্দিন নাছিম, শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা, সোহাগ তালুকদার প্রমুখ।



২২ সেপ্টেম্বর ২০১০
নির্বাচন কমিশনে (ইসি) বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব দাখিল করেছে আওয়ামী লীগ। সেই সঙ্গে দলের কার্যনির্বাহী সংসদ গঠন প্রক্রিয়ার কার্যবিবরণীও জমা দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার উপ-দফতর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে গিয়ে রেজিস্টার্ড চার্টার্ড অ্যাকাউন্টিং ফার্মের মাধ্যমে নিরীক্ষিত দলের ২০০৯ সালের হিসাব ইসির যুগ্ম সচিব নুরুল ইসলাম খানের কাছে দাখিল করেন। এ হিসাবে কেন্দ্রীয় কমিটি, উপদেষ্টা পরিষদ, সাংসদ, জাতীয় কমিটি, উপ-কমিটি, প্রাথমিক সদস্য, শুভানুধ্যায়ী, কাউন্সিলর, ডেলিগেটস এবং প্রচার-পুস্তিকা বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থকে আয়ের উৎস হিসাবে দেখানো হয়েছে। ব্যাংকে গচ্ছিত আমানতকৃত অর্থের লভ্যাংশও রয়েছে।খরচের খাত হিসেবে ত্রাণ কার্যক্রম, জাতীয় সম্মেলন, সাংগঠনিকভাবে পালন করা দিবস, প্রকাশনা, সাংগঠনিক খরচ, বিজ্ঞাপন, অফিস ভবন ক্রয়, হোল্ডিং ট্যাক্স, ফোন, কম্পিউটারসহ আনুষঙ্গিক আসবাবপত্র ক্রয়, কর্মচারীদের বেতন, বাড়ি ভাড়া, বিদ্যুৎ, ওয়াসা, টেলিফোন, ইন্টারনেট, কুরিয়ার, মনোহারি পণ্য, পত্রিকা, যাতায়াত ইত্যাদি খাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে। আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দেওয়ার কারণ প্রসঙ্গে মৃণাল কান্তি দাস সাংবাদিকদের বলেন, জুলাই মাস পর্যন্ত আর্থিক লেনদেনের হিসাব জমা দেওয়ার শেষ সময়সীমা থাকলেও এর আগেই দলের পক্ষ থেকে সময় বাড়ানোর জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন জানানো হয়েছিল। নির্বাচন কমিশন এ আবেদনে সাড়া দিয়ে কাঙ্ক্ষিত সময়ের চেয়েও বেশি সময় দিয়েছে। এ কারণেই দলের পক্ষে একটি স্বচ্ছ হিসাব দেওয়া সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নতুন, সুন্দর, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক যে কোনো কর্মকাণ্ডকেই স্বাগত জানায়। এবারের ধারাবাহিকতায় আগামীতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই দলের আয়-ব্যয়ের হিসাব দাখিলের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, দলের পক্ষ থেকে জমা দেওয়া হিসাব নির্বাচন কমিশন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করবে। এ কারণে কমিশনের সম্মতি ছাড়া হিসাব সম্পর্কে এ মুহূর্তে কোনো কিছু বলা সমীচীন নয়।



২১ সেপ্টেম্বর ২০১০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য উন্নত দেশগুলোকে বর্ধিত সহায়তা প্রদানের অঙ্গীকার করার আহ্বান জানিয়েছেন। সোমবার জাতিসংঘ সদর দফতরে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের পাশাপাশি সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) সংক্রান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ সম্মেলনের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ভাষণকালে তিনি এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘের সহায়তায় ‘নিজেদের জন্য এমডিজি চাহিদা, মূল্যায়ন ও ব্যয়’ শীর্ষক একটি রিপোর্ট প্রণয়ন করেছে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে ২০০৯-২০১৫ সাল মেয়াদে সহস্রাব্দ উন্নয়নের সকল লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের ২ হাজার ২১০ কোটি ডলার অর্থাৎ প্রতিবছর ৪৪০ কোটি ডলার প্রয়োজন। তিনি বলেন, এতে উন্নয়নশীল দেশসমূহ বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে সম্পদের প্রবাহ সংক্রান্ত বৈশ্বিক ঘোষণা বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এই উচ্চাকাক্সক্ষী সম্পদের বাজেট প্রণয়নের জন্য আর্থিক ক্ষেত্রে একমত্য হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ বৈদেশিক সহায়তা প্রত্যাশা করলেও সহায়তার অভাবে কখনও আমাদের কর্মসূচি থেমে থাকেনি। আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা স্যানিটেশন ও পানি সরবরাহ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি, এই খাতে ৫৬ কোটি ডলারের বৈদেশিক সহায়তার ঘাটতি ছিল।’ তিনি এমডিজি এবং ইন্টারন্যাশনাল এগ্রিড ডেভেলপমেন্ট গোলস (আইএডিজিস)সহ সকল লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিশ্বায়নের চেতনায় দৃঢ় সংকল্প গ্রহণের আহ্বান জানান। প্রায় ১৪০ জন সরকার প্রধানের উপস্থিতিতে ৩-দিনের এই সম্মেলনে শেখ হাসিনা এমডিজি ও অন্যান্য কর্মসূচি অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের দৃঢ় সংকল্প ও অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ২০২১ সালের মধ্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, ২০১৫ সালের মধ্যে শতভাগ শিশুর স্কুলে ভর্তি নিশ্চিত, ২০১৫ সালের মধ্যে শিক্ষার সকল পর্যায়ে জেন্ডার বৈষম্যের অবসান, ২০২১ সালের মধ্যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে মহিলাদের অংশগ্রহণ ৪০ শতাংশে উন্নীত, ২০২১ সালের মধ্যে প্রসূতি মৃত্যুহার ও শিশু মৃত্যুহার হাজারে ১৫তে হ্রাস, ২০২১ সালের মধ্যে গড় আয়ু ৭০ বছরে উন্নীত, ২০১১ সালের মধ্যে সকলের জন্যে নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহ এবং ২০২১ সালের মধ্যে জাতীয় আইসিটি নীতি বাস্তবায়ন করে বৈশ্বিক যোগাযোগ স্থাপন করার মাধ্যমে একটি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তুলতে চাই।’ উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা ২০০০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘ শীর্ষ সম্মেলনে এমডিজি অনুমোদনকারী ১৮৯ জন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। ‘সহস্রাব্দ ঘোষণাকে দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব গড়ার ম্যাগনাকার্টা’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, উন্নয়নের সুবিধা প্রদান ও দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে গৃহীত এমডিজি নজিরবিহীন ঐকমত্যের ভিত্তিতে গ্রহণ করা হয়েছিল। এই ঐকমত্য ২০০৫ সালে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সমর্থনে আরো জোরদার হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার, বেসরকারি খাত, সুশীল সমাজ, উন্নয়ন সহযোগী, জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তঃসরকার সংস্থাগুলোর সাফল্য নির্ধারণের জন্য এমডিজি একটি মাপকাঠি দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমার বিগত মেয়াদে আমাদের সরকার জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলোতে এমডিজি সম্পৃক্ত করার পদক্ষেপ নিয়েছিলো। এই পদক্ষেপের লক্ষ্য ছিল এমডিজি বিষয়ে জাতীয় স্বত্বাধিকার নিশ্চিত করা এবং ২০১৫ সালের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে এগুলো অর্জনে আমাদের অঙ্গীকারের প্রতিফলন ঘটানো।’ শেখ হাসিনা বলেন, এমডিজি অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে ২০০১ সাল থেকে পরিকল্পনা ও বাজেট প্রণয়ন আমাদের জাতীয় উন্নয়নের অংশ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের মেয়াদে ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত এবং ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পদক্ষেপ হিসেবে এমডিজি বাস্তবায়নে একটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে বৈশ্বিক খাদ্য ও জ্বালানি সংকট, বিদ্যমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, বৈশ্বিক বাণিজ্য হ্রাস, বিনিয়োগে অনীহা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এমডিজি অর্জনে আমাদের কাক্সিক্ষত গতি বিলম্বিত করেছে।’ উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জাতিসংঘ সংস্থাসমূহ এবং দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সহযোগীদের সহায়তায় সন্তোষজনক অগ্রগতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমডিজি-১ (দারিদ্র্য বিমোচন), এমডিজি-২ (সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা); এমডিজি-৩ (জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন); এমডিজি-৪ (শিশু মৃত্যুহার হ্রাস) সংক্রান্ত লক্ষ্য অর্জনে আমাদের উৎসাহব্যঞ্জক সাফল্য অব্যাহত রয়েছে। এমডিজি-১ অনুযায়ী দারিদ্র্য হার অর্ধেকে কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ২০১৫ সালের মধ্যে ১ কোটি ২০ লাখ লোককে দারিদ্র্যমুক্ত করার প্রয়াস সাফল্যের সংগে এগিয়ে চলেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের অন্যান্য সাফল্যের মধ্যে রয়েছেÑ ন্যূনতম খাদ্য পুষ্টি গ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি, প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে ভর্তি হার বৃদ্ধি, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে জেন্ডার সমতা প্রতষ্ঠা, শিশু ও নবজাতকের মৃত্যুহার হ্রাস, টিকাদান কর্মসূচি সম্প্রসারণ, ম্যালেরিয়া দূরীকরণ, যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ, এইচআইভি/এইডস প্রাদুর্ভাব কমিয়ে আনা, নিরাপদ খাওয়ার পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা বৃদ্ধি।

No comments:

Post a Comment