Tuesday, August 31, 2010

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক 

বেকার হোস্টেল


কলকাতার কেন্দ্রস্থলের ঐতিহাসিক আলিয়া মাদ্রাসার একেবারে কাছে সেই ১৯১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বাইরে থেকে কলকাতায় পড়তে আসা মুসলমান ছাত্রদের থাকার জন্য একটি হোস্টেল বা ছাত্রাবাস। ছাত্রাবাসটির নাম বেকার হোস্টেল। এটি গড়েছিলেন লর্ড বাকার। বাকারই শেষ পর্যন্ত ছাত্রদের মুখে মুখে হয়ে যান বেকার। এখন এটি সরকারি ছাত্রাবাস। এখানে রয়েছে সাড়ে তিনশ ছাত্র। এই ছাত্রাবাসটি আগামী বছর পালন করবে শতবর্ষ উৎসব। এই ছাত্রাবাসের অধিকাংশ ছাত্রই মুসলমান। কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ওয়েলিংটনের অদূরে ৮ নম্বর স্মিথ লেনে এই ছাত্রাবাসের অবস্থান। ত্রিতল ভবনের লাল রঙের এই ছাত্রাবাসে থেকে পশ্চিমবঙ্গের বহু মুসলমান মনীষী পড়াশোনা করেছেন। প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। 

এই ছাত্রাবাসেই বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও থাকতেন কলকাতায় স্নাতক পড়ার সময় । সেই ১৯৪৫-৪৬ সালে। তখন বঙ্গবন্ধু কলকাতায় পড়ছিলেন ইসলামিয়া কলেজে। এখন ইসলামিয়া কলেজের নাম বদলে করা হয়েছে মৌলানা আজাদ কলেজ। মৌলানা আজাদ কলেজ কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলার কাছে ওয়েলিংটনের মুখে ৮ নম্বর রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডে অবস্থিত। ১৯২৬ সালে এই কলেজের প্রতিষ্ঠা করা হয়। বঙ্গবন্ধু শুধু এই কলেজে পড়াশোনার সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন না, ছিলেন একজন ছাত্রনেতাও। তিনি কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের একবার সাধারণ সম্পাদকও হয়েছিলেন। সালটা ছিল ১৯৪৫-৪৬।


বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিঘেরা এই ছাত্রাবাসটি আজও কলকাতায় ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই ছাত্রাবাসেরই তিন তলার একেবারে কোণের ২৪ নম্বর কক্ষে ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবাহী বেকার হোস্টেলের ২৪ নম্বর কক্ষটিকে সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এই আর্জি জানানো হয় পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর কাছে। জ্যোতি বসুও বাংলাদেশের আবেদনে সাড়া দেন। এরপরেই শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ২৪ নম্বর কক্ষটিকে সংরক্ষণের কাজ। উদ্যোগ নেওয়া হয় পাশের ২৩ নম্বর কক্ষটিকে যুক্ত করে বঙ্গবন্ধু স্মৃতিকক্ষ গড়ার। বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয় বঙ্গবন্ধু স্মৃতিকক্ষ। অবশেষে ১৯৯৮ সালের ৩১ জুলাই বঙ্গবন্ধু স্মৃতিকক্ষের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন উচ্চশিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক সত্যসাধন চক্রবর্তী। এ সময় উপসি'ত ছিলেন কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনার শেখ আহমেদ জালাল এবং মৌলানা আজাদ কলেজের অধ্যক্ষ ড. সত্যব্রত ভট্টাচার্য প্রমুখ। এই স্মৃতিকক্ষে এখনও রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত খাট, চেয়ার, টেবিল এবং আলমারি।

এরপর ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার পর মূলত তালাবদ্ধ অবস্থায়ই থাকে বঙ্গবন্ধু স্মৃতিকক্ষ। এবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জাতীয় শোক দিবসকে সামনে রেখে এই স্মৃতিকক্ষকে আবার সাজিয়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। 

গত ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু দিবসে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবাহী বেকার হোস্টেলের ২৪ নম্বর কক্ষে রাখা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করা হয়। 

কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের প্রথম সচিব (শিক্ষা) মোঃ নুরুল হুদা জানান, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবাহী বেকার হোস্টেলের এই কক্ষ দুটিকে নতুন করে সাজিয়ে তোলা হবে। ২৩ নম্বর কক্ষে প্রতিষ্ঠা করা হবে বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত একটি পাঠাগারও। এতে কলেজ ও হোস্টেলের ছাত্ররা বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আরও বেশি করে জানতে পারবে।
১৫ আগস্ট সকাল ৯টায় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত কলকাতার সেই ৮ নম্বর স্মিথ লেনের সরকারি বেকার হোস্টেলের ২৪ নম্বর কক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করা হয়। মাল্যদান করেন কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনার সৈয়দ মাসুদ মোহাম্মদ খন্দকার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এই হোস্টেলের আরেক প্রাক্তন আবাসিক ছাত্র, বাংলাদেশের বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ব্যারিস্টার রফিকুল হকসহ কলকাতার বিশিষ্টজনেরা। এদিন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আরও পুষ্পমালা অর্পণ করে ভারত-বাংলাদেশ সংস্কৃতি সংসদ ‘মিতালী’সহ অন্যান্য সংগঠন। অনুষ্ঠান শেষে রফিকুল হক সাংবাদিকদের বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় শিগগিরই হবে। তিনি বলেন, আমি তো মনে করি আগামী অক্টোবরের মধ্যেই পাওয়া যাবে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায়। তিনি আরও বলেন, এই বেকার হোস্টেলে তিনি এক সময় থাকতেন। ছিলেন ২৬ নম্বর কক্ষে।

তথ্যসূত্র : সাপ্তাহিক ২০০০

জিয়া ও এরশাদ ছাত্র রাজনীতি নষ্ট করেছে ছাত্রদের 
হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

যারা অন্যদলের কর্মীদের দলে টেনে নেবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে: শেখ হাসিনা

০১ সেপ্টেম্বর ২০১০

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, যারা সংগঠনের মধ্যে গ্র“পিং সৃষ্টি করার জন্য ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের কর্মীদের দলে টেনে নেবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মাসব্যাপী জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের উদ্যোগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তৃতা করছিলেন। তিনি যে কোন মূল্যে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার ওপর জোর দেন। শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষার পরিবেশ নষ্টকারী সে যেই হোক, তাকে রেহাই দেয়া হবে না। গ্রেফতার করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ৫০ জনকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করায় ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘কেউ কেউ ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করে, আর কিছু আছে যারা সব সরকারের সঙ্গেই থাকে। পরিবর্তনের সাথে সাথে নতুন সরকারে ঢুকে গিয়ে অন্যায় ও অপকর্ম করে।’ তিনি এদের বিরুদ্ধে সজাগ ও সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘গ্র“প সৃষ্টি করে যারা বিতর্কিতদের দলে টেনে নিচ্ছে তারা নিজেরাই নিজেদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে সব ছাত্র শিবির কর্মী ছাত্রলীগে ঢুকে পড়েছে তাদের আশ্রয়দাতাদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। এদের সকলের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাউকে রেহাই দেয়া হবে না। শেখ হাসিনা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দীর্ঘদিনের আন্দোলন, সংগ্রাম এবং জেল-জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করে জনগণের মুক্তির জন্য ত্যাগ স্বীকার করার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘তিনি কখনোই বিলাস বহুল জীবন পছন্দ করতেন না। অতি সাধারণ জীবনযাপন করতেন। যা এখনও ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে গেলেই অনুধাবন করা যাবে।’ এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এখন কেউ কেউ মনে করেন রাজনীতি হচ্ছে অল্প সময়ে হাজার হাজার সম্পদ বানানোর শ্রেষ্ঠ পথ। আবার কেউ কেউ অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদকে বৈধ করার জন্য রাজনীতিতে যোগ দেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছাসহ ১৫ আগস্টে শাহাদাত বরণকারী সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ধ্বংস করার জন্য ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। খুনিরা সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ধ্বংস করতে চেয়েছিল । ‘বাংলাদেশের মানুষ আন্দোলন সংগ্রাম করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা কখনই অন্যায়-অবিচারকে প্রশ্রয় দেয়নি। এ কারণে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা রেহাই পায়নি। তাদের বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের জন্যই দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম করে দেশ স্বাধীন করেছিলেন। বর্তমান সরকার বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা।’ ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের কর্মীদের জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে নিজেদেরকে উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তিনি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ত্যাগের মহিমায় সংগঠনকে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু কখনই অন্যায়ের কাছে আপোস করেননি। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে বহিষ্কার করার কথা উল্লেখ করে বলেন, তখন আরো কয়েকজন নেতা জরিমানা ও মুচলেকা দিয়ে ছাত্রত্ব ফিরে পেয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু জরিমানা বা মুচলেকা কোনটাই দেননি। বরং তিনি বলেছিলেন, ‘আমি কখনই অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবো না।’ তিনি বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমানের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, তার স্বপ্ন ছিল ছেলেকে ব্যারিস্টারি পড়াবেন। কিন্তু অন্যায়ের কাছে মাথা নত করে মুচলেকা দিয়ে ছাত্রত্ব ফিরে পাওয়ার জন্য কখনই ছেলেকে বলেননি। শেখ হাসিনা ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বিভিন্ন আন্দোলনে ছাত্র সমাজের বিশেষ করে ছাত্রলীগের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু বলতেন ‘বাংলাদেশের ইতিহাস, ছাত্রলীগের ইতিহাস।’ তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সামরিক স্বৈরাচাররা ছাত্রদের হাতে কাঁচা টাকা, অস্ত্র, মাদকদ্রব্য তুলে দিয়ে ছাত্র রাজনীতিকে কলুষিত করে তুলেছেন। আর এটা শুরু করেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, জেনারেল জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এক সমাবেশে ছাত্রদলের ছেলেদের ডেকে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগকে ঠান্ডা করার জন্য ছাত্রদলই যথেষ্ট। তিনি ছাত্রদলের ছেলেদের হাতে অস্ত্রও তুলে দিয়েছিলেন। তার বিপরীতে আমি ছাত্রলীগের ছেলেদের হাতে বই, খাতা, কলম তুলে দিয়ে বলেছিলাম, ভবিষ্যতে নেতৃত্বে নেয়ার জন্য তোমাদেরকে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু সবসময় বলতেন- সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য সোনার মানুষ চাই। আজকে ছাত্রদেরকে নিজেদের সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য লেখাপড়া এবং তথ্য প্রযুক্তিসহ জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত করে নিজেদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছার ভূমিকার কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে উল্লেখ করে বলেন, জীবনে কখনই তিনি ভোগ-বিলাসের কথা চিন্তা করেননি বরং আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে পরিচালনা করতে গিয়ে নিজের গহনা, ফ্রিজ, ফার্নিচার বিক্রি করে দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা ’৭৫ পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু পরিবারের বিরুদ্ধে নানা প্রকার মিথ্যা প্রচারণার কথা উল্লেখ করে বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রীর পুত্র হয়েও শেখ জামাল লন্ডনে একটি দোকানে সেলসম্যানের চাকরি করে নিজের খরচ চালিয়েছে। আমার বোন রেহানা এখনও চাকরি করে। নিজের একটি গাড়ি পর্যন্ত নেই। পাশাপাশি আমরা প্রধানমন্ত্রীর পুত্র হয়ে ১৪-১৫টি শিল্প কারখানা ও হাজার হাজার কোটি বানাতে দেখেছি। যারা অর্থ ও ভোগ বিলাসের জন্য রাজনীতি করে তাদের জনগণের কোন প্রত্যাশা নেই।
শেখ হাসিনা বলেন, যে দলের বা রাজনীতিকের কোন আদর্শ নেই সে জাতিকে কিছু দিতে পারে না। আমাদের সামনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ রয়েছে। তাঁর আদর্শ বাস্তবায়ন করেই আমরা সুখী-সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবো ইনশাআল্লাহ।
ছাত্রলীগ সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই স্মরণ সভায় আরো বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের এমপি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা ড. হামিদা বানু, সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল ও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন।

মানুষকে যে স্বপ্ন দেখিয়েছি তা বাসত্মবায়ন করতে চাই : 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মরহুম জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনীদের 
পুরস্কৃত করেছেন এবং বেগম খালেদা জিয়া তাদেরকে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করেছেন।

৩১ আগস্ট ২০১০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মরহুম জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনীদের পুরস্কৃত করেছেন এবং বেগম খালেদা জিয়া তাদেরকে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করেছেন। প্রেসিডেন্ট জিয়া প্রথমেই বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনে চাকরি দেন। পরে তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১৫ ফেব্রম্নয়ারির প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে তাদেরকে রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিয়ে পুনর্বাসিত করেছেন। ‘সামনে কঠিন সময়’ উলেস্ন্লখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু জাতিকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। তিনি সেই স্বপ্ন বাসত্মবায়ন করে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমরাও মানুষকে যে স্বপ্ন দেখিয়েছি তা বাসত্মবায়ন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল সোমবার ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। বঙ্গবন্ধু আনত্মর্জাতিক সম্মেলন কেন্দে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পনেরই আগস্ট শুধু জাতির জনককেই হত্যা করা হয়নি, সেই সঙ্গে দেশের অগ্রগতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বাংলাদেশের ধারাবাহিকতাকেও ধ্বংস করা হয়েছিল। ‘বাঙালি জাতির বিজয় যারা মেনে নিতে পারেনি তারাই পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছিল’ উলেস্ন্লখ করে তিনি বলেন, ড়্গমতা দখলের পরই তারা নানা অপপ্রচার করে মানুষের ভোটের অধিকার নষ্ট করেছিল। শেখ হাসিনা বলেন, ‘দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম শেষে আমরা ভোটে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছি। ভোটের অধিকার এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় কার্যকর এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য শুরম্ন করেছি। বাঙালি জাতিকে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করছি’। বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকার কিছু করছে না- এটি ঠিক নয় উলেস্ন্লখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আমরা পদড়্গেপ নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর ড়্গমতা বলে কুইক রেন্টালে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছি। প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ব্যাপক দলীয়করণের কারণে প্রশাসনের কোথায়ও সুষ্ঠুভাবে কাজ করা যাচ্ছে না, সর্বত্রই নানা ধরনের বিঘ্ন ঘটানো হচ্ছে। ‘এবারের রমজানে প্রতিটি জিনিসের দাম স্থিতিশীল এবং মানুষের ক্রয় ড়্গমতার মধ্যে রয়েছে এবং আইন-শৃংখলা পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণে আছে’ উলেস্ন্লখ করে তিনি বলেন, ‘যখনই কোন ঘটনা ঘটছে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি’। মার্কিন ফেডারেল কোর্টে বেগম খালেদা জিয়ার দুই পুত্রের নামে ঘুষের মামলা হয়েছে উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের আর এক মিত্র জামায়াত নেতা গোলাম আযমের পুত্র লন্ডনে অর্থ জালিয়াতি করেছেন বলে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, জিয়াউর রহমান হত্যার পর ভাঙ্গা স্যুটকেস ও ছেঁড়া গেঞ্জি প্রদর্শনের পর কোন জাদু বলে তার ছেলে তারেক ও কোকো শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন দেশবাসী তা জানতে চায়। বিরোধী দলীয় নেত্রী তাঁর অসুস্থ দুই ছেলেকে দেখতে না যাওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন মা আছেন যিনি তার অসুস্থ ছেলেকে না দেখে থাকতে পারেন? তিনি বলেন, মা হয়ে যদি অসুস্থ ছেলেদের পাশে দাঁড়াবার অনুভূতি না থাকে তাহলে তিনি দেশের মানুষের পাশে দাঁড়াবেন কিভাবে? প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া এরশাদকে স্বামীর হত্যাকারী বললেও তার হাত থেকে বাড়ি গ্রহণ করেছেন। দুইবার ড়্গমতায় থাকলেও জিয়াউর রহমান হত্যার বিচার করেননি। শেখ হাসিনা বলেন, যিনি স্বামীর হত্যার বিচার করেন না, সম্পদ বাড়ানোয় ব্যসত্ম এবং অসুস্থ ছেলেদের দেখতে যান না তার পড়্গে জন্ম তারিখ পাল্টিয়ে নকল জন্মদিন পালন করা সম্ভব। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনীদের পুরস্কৃত এবং পুনর্বাসন করে প্রমাণ করেছেন তিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারাজীবন যে আদর্শের জন্য লড়াই করে গেছেন- জীবন দিয়েছেন সেই আদর্শ বাসত্মবায়নের জন্য বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ড়্গুধা এবং দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলে জাতির পিতার স্বপ্ন বাসত্মবায়ন করতে চাই।’
আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন-অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারাকাত, কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াসহ অন্য নেতৃবৃন্দ।
মঞ্চে এ সময় উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, আইন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট কামরম্নল ইসলাম এবং আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ। সভা শুরম্নর আগে পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট নিহত বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন এবং তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়।

বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সরকার কঠোর 
পরিশ্রম করছে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

২৯ আগস্ট ২০১০

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার স্বপ্নের আলোকে সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আজ ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে প্রথম বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে গার্ড অব অনার প্রদানকারী আনসার সদস্যদের প্রত্যেকের পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে ২ লাখ টাকার চেক প্রদানকালে এ কথা বলেন। ’৭৫ পরবর্তী সময়ে দেশের ইতিহাস বিকৃতির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যার পর দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ধ্বংস করা হয়। ’৭৫ পরবর্তী সময়ে দীর্ঘদিন ক্ষমতাসীন স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি পরিকল্পিতভাবে ইতিহাস বিকৃত করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন যে, তাঁর পূর্ববর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর জাতির সামনে স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার উদ্যোগ নেয়। বর্তমান সরকারের বিভিন্ন গণমুখী প্রকল্পের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার পল্লীর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য একটি বাড়ি ও একটি খামারসহ অনেক কর্মসূচি নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দেশের নিম্ন আয়ের মানুষের কল্যাণে সরকারের নেয়া পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা করার জন্য আনসার বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৩৯ বছর পরও দেশের জনগণের ৫টি মৌলিক চাহিদা এখনো নিশ্চিত হয়নি। শেখ বলেন, ‘দেশের জনগণের ৫টি মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে আমরা কঠোর পরিশ্রম করছি, যাতে কাউকে খাদ্য, বাসস্থান ও বস্ত্রের অভাবে দুর্ভোগ পোাহতে না হয়।’ প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা সম্প্রসারণ ও দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য উৎপাদন বাড়াতে কৃষির উন্নয়নে তাঁর সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শাহাদাত বরণকারী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্য এবং জাতীয় ৪ নেতার রুহের মাগফেরাত কামনা করেন।
এরআগে বিসিএস আনসার এসোসিয়েশনের নির্বাহী সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এখানে তাঁর কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠককালে এসোসিয়েশনের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর সামনে তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া উত্থাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী ধৈর্য সহকারে তাদের কথা শোনেন এবং বিষয়গুলো পর্যালোচনার আশ্বাস দেন।
এরআগে এসোসিয়েশনের নেতারা তাদের সংস্থার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া ও ক্রেস্ট উপহার দেন।
বৈঠকের শুরুতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শাহাদাত বরণকারী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও মেহেরপুরের তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, মেহেরপুরের তৎকালীন এসডিপিও মাহবুব উদ্দীন বীর বিক্রম (এসপি মাহবুব), আনসারের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল চৌধুরী হাসান সোহরাওয়ার্দী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এমএ করিম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোল্ল¬া ওয়াহিদুজ্জামান ও প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।
একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মদদদাতা ও 
হামলাকারীদের বিচার করা হবে: আওয়ামী লীগ
২৩ আগস্ট ২০১০
একুশে আগস্ট উপলক্ষে রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।স্মরণসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এখনও তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তবে এ প্রসঙ্গে তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেছেন, 'জনগণের অধিকার আদায় করতে গিয়ে জীবনে বহুবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি। কিন্তু জনগণের অধিকার আদায়ের পথ থেকে পিছপা হইনি। জীবনের মালিক আল্লাহ। ক্ষমতা আল্লাহ দেন। তাই যত কথাই বলা হোক, যত হুমকিই দেওয়া হোক, আমি পরোয়া করি না। আমি সারা জীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাব।' ভাষণে শেখ হাসিনা আবারও নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে স্পষ্ট বলেছেন, অন্যায় করলে শাস্তি পেতেই হবে। কিছুতেই অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কেউ পার পাবে না। নিজের ঘরের ভেতর থেকেই এই শাসন শুরু করা হবে। সেটা না হলে বাইরের কাউকে শাসন করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী যখন অন্যায়কে প্রশ্রয় না দেওয়ার ঘোষণা দেন, তখন সমবেত সবাই তার বক্তব্যকে সমর্থন জোগান। সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ সভায় আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আবদুর রাজ্জাক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, এলজিআরডিমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, ওয়ার্কার্স পার্টি সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম ও আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বক্তৃতা করেন। উপস্থাপনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক নূহ-উল-আলম লেনিন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অমানবিক অত্যাচার-নির্যাতন চালানো হয়েছে। ঘরে ঘরে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগের এমপিদের খুন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের গন্ধ পেলেই ওএসডি করা হয়েছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। প্রতিহিংসার এমনি ধারায় একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটেছে। গ্রেনেড হামলার আগে নিজের নিরাপত্তা কর্মীদের সরকার কর্তৃক প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সেদিন আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি সমাবেশে একের পর এক গ্রেনেড হামলা হয়েছে। অথচ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কোনো সহায়তা দেয়নি। উল্টো গ্রেনেড হামলাকারীদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। গ্রেনেড হামলার আলামত নষ্ট করা হয়েছে। এসবের মানে ওই সময়কার ক্ষমতাসীনরা প্রত্যক্ষভাবে গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, বিএনপি সব সময়ই খুনিদের প্রশ্রয় দেয়। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন জেনারেল জিয়া। ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনে খালেদা জিয়া এমপি করেছিলেন খুনি রশিদ ও হুদাকে। তিনি আরও বলেন, একুশ আগস্ট জজ মিয়া নাটক সাজানো হয়েছে। অথচ তদন্তে প্রমাণ হয়েছে, আজকের বিরোধীদলীয় নেতার কেবিনেট সদস্য ওই ঘটনায় জড়িত। অথচ খালেদা জিয়া ওই সদস্যের ভাইকে ছাত্রদলের সভাপতি করেছেন। অর্থাৎ খালেদা জিয়া খুনিদের উৎসাহিত করেছেন। শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় গিয়ে জনগণের সম্পদ লুটে খেয়েছে। রাতারাতি হাজার হাজার কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। বিদেশে পাচার করেছে ঘুষ-দুর্নীতির টাকা। এ সবকিছু ভোগ করার পাশাপাশি আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন এবং ওই দলের নেতাকে (শেখ হাসিনা) প্রকাশ্যে হত্যা করতে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। তারা কখনওই স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না। বিএনপির দিকে ইঙ্গিত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট বলেছেন, এদের রাজনীতি গণতন্ত্রের জন্য নয়। এরা স্বাধীনতা বিনষ্টের জন্য রাজনীতি করে। এদের জন্ম হয়েছে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। এরা জেনারেল জিয়ার অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের ফসল। তিনি আরও বলেন, বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছে জিয়া পরিবার। বিদেশি আদালতের রায়ে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এই পরিবারের সদস্যরা ভাঙা সুটকেস থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। আঙুল ফুলে কলাগাছ বনেছে। শেখ হাসিনা বলেন, একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর আওয়ামী লীগ ও তাকে জড়িয়ে নানা অপপ্রচার করা হয়েছে। এমনকি শাহ এএমএস কিবরিয়া এবং আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যায়ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল। পরে সব কিছুতেই প্রমাণ হয়েছে, ওইসব ঘটনায় বিএনপি জড়িত। ওরা এখনও মিথ্যা কথা বলে। গ্রেনেড হামলায় শহীদদের স্মরণ ও আহতদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী গ্রেনেড হামলার সময় তাকে ঘিরে মানববর্ম তৈরি করায় প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফসহ সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, গ্রেনেড হামলাকারীদের বিচার হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হবে। সব হত্যার বিচার হবে। অন্যায়-অবিচার ও সন্ত্রাস দূর করা হবে। এই বাংলায় দুর্নীতিবাজদের ঠাঁই হবে না। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ১৫ আগস্টের পর একুশ আগস্ট হয়েছে। তাই আগামীতে শেখ হাসিনাসহ নেতৃবৃন্দের ওপর আঘাত আসতে পারে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আছি বলে কেউই নিরাপদ নই। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, 'সরকারের সাফল্য ম্লান করতে কিছু কর্মী অপ্রত্যাশিত কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে। সংবাদপত্রে যা ছাপা হচ্ছে, তার খানিকটা সত্য হলে সেটা আওয়ামী লীগের কাছে জাতি আশা করে না। তাই সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেন, ১৯৭১ সালের পরাজিত অপশক্তি এখনও টিকে আছে। তাদের জন্য টাকা আসে।
আবদুর রাজ্জাক বলেন, বিএনপি আইনের শাসন চায় না। তারা চান নিজেদের শাসন। রাজ্জাক সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেছেন, গ্রেনেড হামলাকারীদেরও বিচার হবে। যুদ্ধাপরাধীরাও রেহাই পাবে না।
অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেনেড হামলার সঠিক চার্জশিট দেওয়া হয়নি। এ মামলার পুনঃতদন্তে গ্রেনেড হামলার মদদদাতা ও হামলাকারীদের নাম বেরিয়ে আসবে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গ্রেনেড হামলা নিয়ে তামাশা করেছে। জজ মিয়া নাটক সাজিয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকর হয়েছে। আগামীতে বিডিআর হত্যাকাণ্ডসহ সব হত্যার বিচার করা হবে।
রাশেদ খান মেনন বলেন, গ্রেনেড হামলার পর তখনকার সরকার খুনিদের সহায়তা দিয়েছে। ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। হাসানুল হক ইনু বলেন, গণতন্ত্রের বাগানে যুদ্ধাপরাধী ও গ্রেনেড হামলাকারীরা আগাছা। তিনি জিয়া ও খালেদা জিয়াকে খুনিদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে অভিহিত করেন।
অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, জাতি গ্রেনেড হামলাকারীদের বিচার ও রায় কার্যকর দেখতে চায়। মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, হাওয়া ভবন থেকে গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা হয়েছে। অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের মতো যে কোনো মূল্যে গ্রেনেড হামলাকারীদের বিচার করা হবে। গ্রেনেড হামলার উৎস খোঁজা হবে। হাওয়া ভবনের তারেক ও বাবরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে।


Monday, August 30, 2010

বিশ্বের প্রভাবশালী নেত্রীদের তালিকায় শেখ হাসিনা

বিশ্বের প্রভাবশালী নেত্রীদের তালিকায় শেখ হাসিনা
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি

ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের প্রভাবশালী নেত্রীর তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন।

টাইম ম্যাগাজিনের ‘টাইম স্পেশাল’ বিভাগে প্রকাশিত বর্তমান বিশ্বের ১০ জন শীর্ষ নেত্রীর তালিকার ৬ষ্ঠ স্থানে রয়েছেন তিনি।

তালিকার শীর্ষে রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ড। এরপরই অবস্থান করছেন আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ইয়োহানা সিগুরদারদোত্তির।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের ৬২ বছর বয়সী নেত্রীর রয়েছে দীর্ঘ লড়াইয়ের ইতিহাস। ১৯৭৫ সালে তার যখন মাত্র ২৮ বছর বয়স, তখন এক অভ্যুত্থানে বাবা-মা, তিন ভাই এবং স্বজনসহ পরিবারের ১৭ সদস্যকে হারান তিনি। সে সময় বিদেশে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান তিনি।
পরবর্তীতে ভয়াবহ এক গ্রেনেড হামলা থেকেও তিনি বেঁচে যান। ওই ঘটনায় তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে গুলিও ছোঁড়া হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০১ সালে নির্বাচনে শেখ হাসিনার দল পরাজিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীত্ব হারান তিনি। তবে এখানেই শেষ নয়। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৩০টি আসনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। তিনি দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই স্বীকৃতির সোমবার দুপুরে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তাকে শুভেচ্ছা জানান মন্ত্রিসভার সদস্যরা।  

বাংলাদেশ সময়: ২০২৪ ঘণ্টা, ৩০ আগস্ট, ২০১০
বিশ্বের শীর্ষ ১০ নেত্রীর তালিকায় শেখ হাসিনা
সমকাল ডেস্ক
বিশ্বের ১০ সেরা নারীনেত্রীর মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ষষ্ঠ। বিশ্বখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের চলতি সপ্তাহের অনলাইন সংস্করণে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তালিকার শীর্ষে আছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ড। তালিকায় স্থান পাওয়া ১০ নেত্রী বিভিন্ন দেশের চ্যান্সেলর, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী। তালিকায় দ্বিতীয় হয়েছেন আইসল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট জোহান্না সিগারডারডোট্টির। এরপর যথাক্রমে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিনা ফার্নান্ডেজ ডি কির্চনার (তৃতীয়), লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্ট ডালিয়া গ্রেবাউস্কাইতে (চতুর্থ), জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল (পঞ্চম), বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ (ষষ্ঠ), লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট এলেন জনসন সিরলিফ (সপ্তম), ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট তারজা হ্যালোনেন (অষ্টম), ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর প্রধানমন্ত্রী কমলা পেরসাদ-বিশ্বেশ্বর (নবম) এবং কোস্টারিকার প্রেসিডেন্ট লরা চিনচিলা (দশম)। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে টাইম ম্যাগাজিনের এ জরিপ প্রতিবেদনের মন্তব্যে বলা হয়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এই নেত্রী ১৯৭৫ সালের নারকীয় হত্যাকাণ্ড থেকে রক্ষা পান। ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার পরিবারের ১৭ জন প্রাণ হারান। এর মধ্যে রয়েছেন তার বাবা-মা ও তিন ভাই। তখন তার বয়স ছিল ২৮। তিনি তখন ছিলেন দেশের বাইরে। পরবর্তীকালে তিনি এক মর্মান্তিক গ্রেনেড হামলা থেকেও প্রাণে রক্ষা পান। ওই হামলায় ২০ জনের বেশি নেতাকর্মী নিহত হন। ওই হামলার সময় তার গাড়িতে পর্যন্ত বুলেটের আঘাত লাগে। ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে তার দল পরাজিত হয়। পরে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আবার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। 

Tuesday, August 24, 2010


















পূর্ব বাংলার প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের অবহেলা, ঔদাসীন্য ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত কর্মসূচি হচ্ছে ছয় দফা। পশ্চিম পাকিস্তানের বিরোধীদলীয় নেতারা তাসখন্দ_উত্তর রাজনীতির গতিধারা নিরূপণের উদ্দেশ্যে ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি লাহোরে এক জাতীয় সম্মেলন আহ্বান করেন। আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্মেলনে যোগদানের জন্য ফেব্রুয়ারি লাহোর পেঁৗছেন। পর দিন সাবজেক্ট কমিটির সভায় তিনি পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের দাবি হিসেবে 'ছয় দফা' প্রস্তাব পেশ করেন এবং তা সম্মেলনের আলোচ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান। কিন্তু সম্মেলনের উদ্যোক্তারা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং পর দিন পশ্চিম পাকিস্তানি পত্রপত্রিকায় ছয় দফার বিবরণ ছাপিয়ে শেখ মুজিবকে বিচ্ছিন্নতাবাদীরূপে চিহ্নিত করা হয়। ফলে শেখ মুজিব ফেব্রুয়ারির সম্মেলন বর্জন করেন। ১৯৬৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটি সভায় ছয় দফা প্রস্তাব এবং দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনের কর্মসূচি গৃহীত হয়। এরপর ১৮ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ মুজিবুর রহমানের নামে 'আমাদের বাঁচার দাবি : ছয় দফা কর্মসূচি' শীর্ষক একটি পুস্তিকা প্রচার করা হয়। পশ্চিম পাকিস্তানের বিরোধীদলীয় নেতারা মুজিবুর রহমানের ছয় দফা কর্মসূচিকে পাকিস্তানের অখণ্ডতা বিনষ্ট করার পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত করে তাঁর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। আইয়ুব সরকার তাঁকে গ্রেপ্তার করে এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত করে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে তাঁর বিচার শুরু করেন। মামলার বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে বিক্ষোভ শুরু হয় এবং ১৯৬৯ সালের প্রথমদিকে এই বিক্ষোভ গণ-অভুত্থানের রূপ নেয়। গণ-দাবির মুখে সরকার ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানকে নিঃশর্ত মুক্তিদানে বাধ্য হয়। আওয়ামী লীগ ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে ছয় দফা কর্মসূচির সপক্ষে গণরায়ের জন্য নির্বাচনী প্রচারণা চালায়। নির্বাচনে শেখ মুজিব ছয় দফার পক্ষে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের নিরঙ্কুশ সমর্থন লাভ করেন। 

  ১৯৬৬ সালের ছয় দফা দাবিসমূহ  

*
প্রথম দফা : 

শাসনতান্ত্রিক কাঠামো রাষ্ট্রের প্রকৃতি: ১৯৪০ সালের ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সরকারের বৈশিষ্ট্য হবে Federal বা যুক্তরাষ্ট্রীয় সংসদীয় পদ্ধতির; তাতে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলো থেকে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক সভার নির্বাচন হবে প্রত্যক্ষ এবং সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে।প্রদেশগুলোকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক সভার প্রতিনিধি নির্বাচন জনসংখ্যার ভিত্তিতে হবে। 

*
দ্বিতীয় দফা : 

কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা: কেন্দ্রীয় বা যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের দায়িত্ব থাকবে কেবল প্রতিরক্ষা বৈদেশিক বিষয়ে সীমাবদ্ধ।অবশিষ্ট সকল বিষয়ে অঙ্গরাজ্যগুলোর পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে। 

*
তৃতীয় দফা : 

মুদ্রা অর্থ বিষয়ক ক্ষমতা: পুর্ব পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য দু'টি পৃথক মুদ্রা-ব্যবস্থা চালু করতে হবে, যা পারস্পরিকভাবে কিংবা অবাধে উভয় অঞ্চলে বিনিময়যোগ্য।এ ক্ষেত্রে দু'অঞ্চলে স্বতন্ত্র বা পৃথক পৃথক ষ্টেট ব্যাংক থাকবে এবং মুদ্রার পরিচালনা ক্ষমতা থাকবে আঞ্চলিক সরকারের হাতে। অথবা, এর বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে একটি মুদ্রা-ব্যবস্থা চালু থাকতে পারে এই শর্তে যে, একটি কেন্দ্রীয় সংরক্ষণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যার অধীনে দুই অঞ্চলে দুটি রিজার্ভ ব্যাংক থাকবে। তাতে এমন বিধান থাকতে হবে যেন এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে সম্পদ হস্তান্তর কিংবা মূলধন পাচার হতে না পারে।বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্থান থেকে পশ্চিম পাকিস্থানে মূলধন পাচার বন্ধ করার জন্য সংবিধানে কার্যকর ব্যবস্থা থাকতে হবে। 

*
চতুর্থ দফা : 

রাজস্ব কর শুল্ক বিষয়ক ক্ষমতা: সকল প্রকার রাজস্ব ধার্য আদায়ের ক্ষমতা থাকবে অঙ্গরাজ্যগুলোর হাতে।কেন্দ্রীয় তথা প্রতিরক্ষা বৈদেশিক বিষয়ের ব্যয় নির্বাহের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রয়োজনীয় রাজস্বের যোগান আঞ্চলিক তহবিল হতে সরবরাহ করা হবে। সংবিধানে নির্দেশিত বিধানের বলে রাজস্বের এই নির্ধারিত অংশ স্বাভাবিকভাবেই ফেডারেল তহবিলে জমা হয়ে যাবে। এহেন সাংবিধানিক বিধানে এমন নিশ্চয়তা থাকবে যে, কেন্দ্রীয় সরকারের রাজস্বের প্রয়োজন মেটানোর ব্যাপারটি এমন একটি লক্ষ্যের সাথে সংগতিপূর্ণ হতে হবে যেন রাজস্বনীতির উপর নিয়ণ্ত্রন ক্ষমতা নিশ্চিতভাবে প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকে। 

*
পঞ্চম দফা : 

বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা: পঞ্চম দফায় বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ে নিম্নরূপ সাংবিধানিক বিধানের সুপারিশ করা হয়: () ফেডারেশনভুক্ত প্রত্যেকটি অঙ্গরাজ্যের বহির্বাণিজ্যের পৃথক পৃথক হিসাব রক্ষা করতে হবে। () বহির্বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা অঙ্গরাজ্যগুলোর এখতিয়ারে থাকবে এবং অঙ্গরাজ্যের প্রয়েআজন অঙ্গরাজ্য কর্তৃক ব্যবহৃত হবে। () কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা সমান হারে অথবা সর্বসম্মতনির্দিষ্ট হারে অঙ্গরাজ্যগুলেআ মিটাবে। () অঙ্গরাজ্যের মধ্যে দেশজ দ্রব্য চলাচলের ক্ষেত্রে মুল্ক বা করজাতীয় কোন বাধা থাকবে না। () সংবিধানে অঙ্গরাজ্যগুলোকে বিদেশে নিজ নিজ বাণিজ্য প্রতিনিধি দল প্রেরণের এবং স্ব স্ব স্বার্থে বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের ক্ষমতা দিতে হবে। 

*
ষষ্ঠ দফা : 

আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা: () আঞ্চলিক সংহতি জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য সংবিধানে অঙ্গরাজ্যগুলোকে স্বীয় কর্তৃত্বাধীনে আধা-সামরিক বাহিনী বা আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা দিতে হবে। () কেন্দ্রীয় সরকারের সকল শাখায় বা চাকরি ক্ষেত্রে প্রতিটি ইউনিট থেকে জনসংখ্যার ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ করতে হবে। () নৌ-বাহিনীর সদর দপ্তর করাচি থেকে চট্টগ্রামে স্থানান্তর করতে হবে