Tuesday, August 31, 2010

জিয়া ও এরশাদ ছাত্র রাজনীতি নষ্ট করেছে ছাত্রদের 
হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

যারা অন্যদলের কর্মীদের দলে টেনে নেবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে: শেখ হাসিনা

০১ সেপ্টেম্বর ২০১০

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, যারা সংগঠনের মধ্যে গ্র“পিং সৃষ্টি করার জন্য ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের কর্মীদের দলে টেনে নেবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মাসব্যাপী জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের উদ্যোগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তৃতা করছিলেন। তিনি যে কোন মূল্যে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার ওপর জোর দেন। শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষার পরিবেশ নষ্টকারী সে যেই হোক, তাকে রেহাই দেয়া হবে না। গ্রেফতার করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ৫০ জনকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করায় ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘কেউ কেউ ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করে, আর কিছু আছে যারা সব সরকারের সঙ্গেই থাকে। পরিবর্তনের সাথে সাথে নতুন সরকারে ঢুকে গিয়ে অন্যায় ও অপকর্ম করে।’ তিনি এদের বিরুদ্ধে সজাগ ও সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘গ্র“প সৃষ্টি করে যারা বিতর্কিতদের দলে টেনে নিচ্ছে তারা নিজেরাই নিজেদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে সব ছাত্র শিবির কর্মী ছাত্রলীগে ঢুকে পড়েছে তাদের আশ্রয়দাতাদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। এদের সকলের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাউকে রেহাই দেয়া হবে না। শেখ হাসিনা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দীর্ঘদিনের আন্দোলন, সংগ্রাম এবং জেল-জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করে জনগণের মুক্তির জন্য ত্যাগ স্বীকার করার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘তিনি কখনোই বিলাস বহুল জীবন পছন্দ করতেন না। অতি সাধারণ জীবনযাপন করতেন। যা এখনও ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে গেলেই অনুধাবন করা যাবে।’ এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এখন কেউ কেউ মনে করেন রাজনীতি হচ্ছে অল্প সময়ে হাজার হাজার সম্পদ বানানোর শ্রেষ্ঠ পথ। আবার কেউ কেউ অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদকে বৈধ করার জন্য রাজনীতিতে যোগ দেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছাসহ ১৫ আগস্টে শাহাদাত বরণকারী সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ধ্বংস করার জন্য ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। খুনিরা সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ধ্বংস করতে চেয়েছিল । ‘বাংলাদেশের মানুষ আন্দোলন সংগ্রাম করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা কখনই অন্যায়-অবিচারকে প্রশ্রয় দেয়নি। এ কারণে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা রেহাই পায়নি। তাদের বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের জন্যই দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম করে দেশ স্বাধীন করেছিলেন। বর্তমান সরকার বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা।’ ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের কর্মীদের জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে নিজেদেরকে উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তিনি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ত্যাগের মহিমায় সংগঠনকে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু কখনই অন্যায়ের কাছে আপোস করেননি। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে বহিষ্কার করার কথা উল্লেখ করে বলেন, তখন আরো কয়েকজন নেতা জরিমানা ও মুচলেকা দিয়ে ছাত্রত্ব ফিরে পেয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু জরিমানা বা মুচলেকা কোনটাই দেননি। বরং তিনি বলেছিলেন, ‘আমি কখনই অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবো না।’ তিনি বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমানের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, তার স্বপ্ন ছিল ছেলেকে ব্যারিস্টারি পড়াবেন। কিন্তু অন্যায়ের কাছে মাথা নত করে মুচলেকা দিয়ে ছাত্রত্ব ফিরে পাওয়ার জন্য কখনই ছেলেকে বলেননি। শেখ হাসিনা ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বিভিন্ন আন্দোলনে ছাত্র সমাজের বিশেষ করে ছাত্রলীগের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু বলতেন ‘বাংলাদেশের ইতিহাস, ছাত্রলীগের ইতিহাস।’ তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সামরিক স্বৈরাচাররা ছাত্রদের হাতে কাঁচা টাকা, অস্ত্র, মাদকদ্রব্য তুলে দিয়ে ছাত্র রাজনীতিকে কলুষিত করে তুলেছেন। আর এটা শুরু করেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, জেনারেল জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এক সমাবেশে ছাত্রদলের ছেলেদের ডেকে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগকে ঠান্ডা করার জন্য ছাত্রদলই যথেষ্ট। তিনি ছাত্রদলের ছেলেদের হাতে অস্ত্রও তুলে দিয়েছিলেন। তার বিপরীতে আমি ছাত্রলীগের ছেলেদের হাতে বই, খাতা, কলম তুলে দিয়ে বলেছিলাম, ভবিষ্যতে নেতৃত্বে নেয়ার জন্য তোমাদেরকে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু সবসময় বলতেন- সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য সোনার মানুষ চাই। আজকে ছাত্রদেরকে নিজেদের সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য লেখাপড়া এবং তথ্য প্রযুক্তিসহ জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত করে নিজেদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছার ভূমিকার কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে উল্লেখ করে বলেন, জীবনে কখনই তিনি ভোগ-বিলাসের কথা চিন্তা করেননি বরং আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে পরিচালনা করতে গিয়ে নিজের গহনা, ফ্রিজ, ফার্নিচার বিক্রি করে দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা ’৭৫ পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু পরিবারের বিরুদ্ধে নানা প্রকার মিথ্যা প্রচারণার কথা উল্লেখ করে বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রীর পুত্র হয়েও শেখ জামাল লন্ডনে একটি দোকানে সেলসম্যানের চাকরি করে নিজের খরচ চালিয়েছে। আমার বোন রেহানা এখনও চাকরি করে। নিজের একটি গাড়ি পর্যন্ত নেই। পাশাপাশি আমরা প্রধানমন্ত্রীর পুত্র হয়ে ১৪-১৫টি শিল্প কারখানা ও হাজার হাজার কোটি বানাতে দেখেছি। যারা অর্থ ও ভোগ বিলাসের জন্য রাজনীতি করে তাদের জনগণের কোন প্রত্যাশা নেই।
শেখ হাসিনা বলেন, যে দলের বা রাজনীতিকের কোন আদর্শ নেই সে জাতিকে কিছু দিতে পারে না। আমাদের সামনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ রয়েছে। তাঁর আদর্শ বাস্তবায়ন করেই আমরা সুখী-সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবো ইনশাআল্লাহ।
ছাত্রলীগ সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই স্মরণ সভায় আরো বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের এমপি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা ড. হামিদা বানু, সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল ও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন।

No comments:

Post a Comment