Tuesday, August 31, 2010

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক 

বেকার হোস্টেল


কলকাতার কেন্দ্রস্থলের ঐতিহাসিক আলিয়া মাদ্রাসার একেবারে কাছে সেই ১৯১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বাইরে থেকে কলকাতায় পড়তে আসা মুসলমান ছাত্রদের থাকার জন্য একটি হোস্টেল বা ছাত্রাবাস। ছাত্রাবাসটির নাম বেকার হোস্টেল। এটি গড়েছিলেন লর্ড বাকার। বাকারই শেষ পর্যন্ত ছাত্রদের মুখে মুখে হয়ে যান বেকার। এখন এটি সরকারি ছাত্রাবাস। এখানে রয়েছে সাড়ে তিনশ ছাত্র। এই ছাত্রাবাসটি আগামী বছর পালন করবে শতবর্ষ উৎসব। এই ছাত্রাবাসের অধিকাংশ ছাত্রই মুসলমান। কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ওয়েলিংটনের অদূরে ৮ নম্বর স্মিথ লেনে এই ছাত্রাবাসের অবস্থান। ত্রিতল ভবনের লাল রঙের এই ছাত্রাবাসে থেকে পশ্চিমবঙ্গের বহু মুসলমান মনীষী পড়াশোনা করেছেন। প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। 

এই ছাত্রাবাসেই বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও থাকতেন কলকাতায় স্নাতক পড়ার সময় । সেই ১৯৪৫-৪৬ সালে। তখন বঙ্গবন্ধু কলকাতায় পড়ছিলেন ইসলামিয়া কলেজে। এখন ইসলামিয়া কলেজের নাম বদলে করা হয়েছে মৌলানা আজাদ কলেজ। মৌলানা আজাদ কলেজ কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলার কাছে ওয়েলিংটনের মুখে ৮ নম্বর রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডে অবস্থিত। ১৯২৬ সালে এই কলেজের প্রতিষ্ঠা করা হয়। বঙ্গবন্ধু শুধু এই কলেজে পড়াশোনার সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন না, ছিলেন একজন ছাত্রনেতাও। তিনি কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের একবার সাধারণ সম্পাদকও হয়েছিলেন। সালটা ছিল ১৯৪৫-৪৬।


বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিঘেরা এই ছাত্রাবাসটি আজও কলকাতায় ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই ছাত্রাবাসেরই তিন তলার একেবারে কোণের ২৪ নম্বর কক্ষে ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবাহী বেকার হোস্টেলের ২৪ নম্বর কক্ষটিকে সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এই আর্জি জানানো হয় পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর কাছে। জ্যোতি বসুও বাংলাদেশের আবেদনে সাড়া দেন। এরপরেই শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ২৪ নম্বর কক্ষটিকে সংরক্ষণের কাজ। উদ্যোগ নেওয়া হয় পাশের ২৩ নম্বর কক্ষটিকে যুক্ত করে বঙ্গবন্ধু স্মৃতিকক্ষ গড়ার। বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয় বঙ্গবন্ধু স্মৃতিকক্ষ। অবশেষে ১৯৯৮ সালের ৩১ জুলাই বঙ্গবন্ধু স্মৃতিকক্ষের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন উচ্চশিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক সত্যসাধন চক্রবর্তী। এ সময় উপসি'ত ছিলেন কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনার শেখ আহমেদ জালাল এবং মৌলানা আজাদ কলেজের অধ্যক্ষ ড. সত্যব্রত ভট্টাচার্য প্রমুখ। এই স্মৃতিকক্ষে এখনও রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত খাট, চেয়ার, টেবিল এবং আলমারি।

এরপর ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার পর মূলত তালাবদ্ধ অবস্থায়ই থাকে বঙ্গবন্ধু স্মৃতিকক্ষ। এবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জাতীয় শোক দিবসকে সামনে রেখে এই স্মৃতিকক্ষকে আবার সাজিয়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। 

গত ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু দিবসে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবাহী বেকার হোস্টেলের ২৪ নম্বর কক্ষে রাখা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করা হয়। 

কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের প্রথম সচিব (শিক্ষা) মোঃ নুরুল হুদা জানান, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবাহী বেকার হোস্টেলের এই কক্ষ দুটিকে নতুন করে সাজিয়ে তোলা হবে। ২৩ নম্বর কক্ষে প্রতিষ্ঠা করা হবে বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত একটি পাঠাগারও। এতে কলেজ ও হোস্টেলের ছাত্ররা বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আরও বেশি করে জানতে পারবে।
১৫ আগস্ট সকাল ৯টায় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত কলকাতার সেই ৮ নম্বর স্মিথ লেনের সরকারি বেকার হোস্টেলের ২৪ নম্বর কক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করা হয়। মাল্যদান করেন কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনার সৈয়দ মাসুদ মোহাম্মদ খন্দকার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এই হোস্টেলের আরেক প্রাক্তন আবাসিক ছাত্র, বাংলাদেশের বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ব্যারিস্টার রফিকুল হকসহ কলকাতার বিশিষ্টজনেরা। এদিন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আরও পুষ্পমালা অর্পণ করে ভারত-বাংলাদেশ সংস্কৃতি সংসদ ‘মিতালী’সহ অন্যান্য সংগঠন। অনুষ্ঠান শেষে রফিকুল হক সাংবাদিকদের বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় শিগগিরই হবে। তিনি বলেন, আমি তো মনে করি আগামী অক্টোবরের মধ্যেই পাওয়া যাবে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায়। তিনি আরও বলেন, এই বেকার হোস্টেলে তিনি এক সময় থাকতেন। ছিলেন ২৬ নম্বর কক্ষে।

তথ্যসূত্র : সাপ্তাহিক ২০০০

No comments:

Post a Comment