Tuesday, August 17, 2010

আজকের সূর্যটা শোক আর মন খারাপের


আজকের সূর্যটা শোক আর মন খারাপের

হুমায়ূন রেজা
১৫ আগস্ট। ঠিকঠাকই তো সূর্যটা আকাশে উঠেছে! মেঘ নেই! তবু হু হু করে উঠছে মন! খুব ধরা গলায় বুকের কাছে আটকে আছে একটা দলাপাকানো কষ্ট! আজকের দিনটি কেমন বিষন্ন আর বেদনার মতো মনে হয়! আজকের এই দিনটি বাঙালী জাতির জন্য বড় বেদনার, বড় মন খারাপ করা একটি দিন। ভাবছো, মন খারাপের কথা বলতেই কি তোমাদের আজ এই লেখাটি লিখছি! তোমাদের মতো আরো কয়েকজনের মন খারাপ করে দেওয়ার জন্য! কে জানে!
আমিও কিন্তু চাই না যে, তোমরা আমার মতোই মন খারাপ করো। সত্যি বলতে কি পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই চায় না। কিন্তু মন খারাপের চাইতেও বড় কথা হচ্ছে, ১৯৭৫ সালের আজকের দিনেই এদেশের সবচে নির্মম নৃশংস বিশ্বাসঘাতকতার বিষয়টি ঘটেছিলো। 

বড় হলে কেউ যদি তোমাকে হঠাৎ প্রশ্ন করে বসে, আচ্ছা! একটা কথা জিজ্ঞেস করি! যে মানুষটা তোমাদের সবার জন্য স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলো!  যে মানুষটা সেই ১৯৭১ সালে যখন এদেশের অধিকাংশ মানুষ মৃত্যুভয়ে দিগ্বিদিক ছুটে নিরাপদ আশ্রয়ে প্রাণরক্ষার জন্য পালিয়ে যাচ্ছে; ঠিক সেসময়টাতে আত্মরক্ষার জন্য কোত্থাও না গিয়ে নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে, রক্তলোলুপ হিংস্র হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর মুখোমুখি হবার জন্য তার নিজের সেই সাদামাটা বাড়িটির বারান্দায় ঠায় বসেছিলেন শুধু এইজন্যই যে, তিনি পালিয়ে গেলে তার জন্য এদেশের লক্ষ লক্ষ নিরাপরাধ মানুষকে পাকিস্তানি হানাদাররা হত্যা করবে, তার ভালোবাসার অগণিত শিশুদের মেরে ফেলবে তার জন্যই! কি আশ্চর্য্য স্বাধীন দেশে তোমরাই সেই আত্মত্যাগী মহান নেতাকে তার সেই বাড়িটিতেই নির্মমভাবে হত্যা করলে!
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের এই দিনেই এদেশের স্বাধীনতার স্থপতি, আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে এদেশেরই কয়েকজন হিংস্র লোভী ঘাতক নির্মমভাবে হত্যা করেছিলো। ঠিক সেদিনও, তিনি কিন্তু ভেবেছিলেন যে, তাকে তো হিংস্র পাকিস্তানিরাই হত্যা করতে সাহস পায় নি! কি করে এদেশেরই কেউ তাকে হত্যা করবে! তার কাছের মানুষ-জন, তার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বহুজন তাকে বহুবার বুঝিয়েছেন। আর পাহাড়প্রতীম বিশ্বাসে অটল থেকে তিনি বারবারই তাদের বুঝিয়েছেন! তাকে এদেশের কেউ মারতে পারে না! 

সত্যিই! এদেশের মানুষের প্রতি তার কি গভীর ভালোবাসাই না ছিলো! আর হবেই বা না কেনো! তিনি যে আমাদের স্বাধীন দেশের জনক, তিনি যে বঙ্গবন্ধু ছিলেন! বঙ্গবন্ধুকে কি বাংলার মানুষ আঘাত করতে পারে! কিন্তু বাস্তবেই যে আজকের এই ১৫ আগস্টের ভোরেই এই শতাব্দীর সবচে নৃশংস বিশ্বাসঘাতকতার ঘটনাটি ঘটেছিলো। আজ শত মন খারাপ হলেও আমি চাই তোমরা এই বিষয়টি জানো। ঠিক তোমাদেরই মধ্যে কারো কারো বয়সী এক ফুটফুটে বালক ছিলো শেখ রাসেল। বঙ্গবন্ধুর আদরের ছোট ছেলে। তাকেও নৃশংসভাবে মেরে ফেলেছিলো তারা। এই কষ্টের কথাগুলো জানার অধিকার আছে তোমাদের। এই কষ্ট তাকে আরো বেশি জানতে আর ভালোবাসতে শেখাবে। সেই জন্যই আজ এই মন খারাপ করা কথাগুলো বলা।   
আজ আমরা তাকে দেখি এক স্থীর বয়সের পরিণত মানুষ হিসেবেই, তারো কিন্তু তোমাদের মতোই এক দুরন্ত শৈশব ছিলো। সারাজীবনই তিনি এদেশের গ্রামের সাধারণ মানুষের পরমাত্মীয়ের মতো ছিলেন!এর কারণটা কি জানো? তিনি জন্মেছিলেন গ্রামেই! বেড়েও উঠেছিলেন গ্রামে। ছোট্ট সেই গ্রাম! কি তার নাম! গ্রামের নামটি টুঙ্গিপাড়া। একেবারেই পাড়াগাঁ! নামের মধ্যেই সেটি ফুটে উঠেছে! কিন্তু অজ পাড়াগাঁ হলে কি হবে, এই ছোট্ট গ্রামটিতেই কিন্তু এদেশের সবচে বড় সেই মানুষটি জন্মেছিলেন। যে মানুষটি না থাকলে আজ যে আমরা স্বাধীন এক দেশের মানুষ হিসেবে গর্ব করে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি! সেটি কখনোই হতো না। আমাদের জাতির পিতা বলা হয় তাঁকে, বলা হয়- বঙ্গবন্ধু। সেও গভীর ভালোবেসেই এদেশের সব মানুষজন তাকে ডেকেছিলো। 

তিনি ছিলেন এক অসীম সাহসী নেতা। এদেশের মানুষদের প্রতি পাকিস্তানী হানাদারদের সকল অত্যাচারের বিরুদ্ধে, এদেশের মানুষদের স্বাধীনতার জন্য ডাক দিয়েছিলেন, বুক দিয়ে আগলেছিলেন পাকিস্তানীদের সব আক্রমণ, অনুপ্রাণিত করেছিলেন এদেশের সকল স্বাধীনতাকামী মানুষকে। তার নাম নিশ্চয়ই আর তোমাদের বলে বোঝাতে হবে না! সেই অমিত তেজ, বলিষ্ঠ, সিংহ-হৃদয় মানুষটির নাম।
শেখ মুজিবর রহমান জন্মেছিলেন টুঙ্গিপাড়া নামের গোপালগঞ্জের এক অজ পাড়াগাঁয়। তার বাবা শেখ লুৎফর রহমান চাকরি করতেন গোপালগঞ্জের মাদারীপুরে, ছিলেন সেখানকার কোর্টের সেরেস্তাদার। আদালতের যাবতীয় সব রেকর্ড-পত্র রাখতেন। তারই তৃতীয় সন্তান আমাদের জাতির জনক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। 

শেখ মুজিব জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯২০ সালের মার্চ মাসের ১৭ তারিখে। ৪ বোন ২ ভাইয়ের সংসারে মুজিব ছিলেন ৩য়। কিন্তু সারাজীবন তিনি তার আচরণে, তার সাহসিকতায়, ঔদার্য্য আর ব্যক্তিত্বের মহিমায় ছিলেন সবার প্রথম মানুষটি। লোকশ্রুতি এই যে, শৈশবে নাকি দুরন্ত এক বালকই ছিলেন তিনি, তার শৈশবে আমাদের বাঙালী জাতির এই অকুতভয় সিংহ-হৃদয় নেতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান নাকি এক পলকা, রোগা-পাতলা বালকই ছিলেন! আর তার চারপাশের অবারিত মাঠ, নদী, বন সবই ছিলো তার অবাধ বিচরণের রাজ্য! নৌকায় চেপে বিলের মধ্যে লগি চালিয়ে এই দুরন্ত বালক ছুটে যেতেন কখনো, কখনোওবা বাবার অপেক্ষায় ঘাটে অধীর প্রতীক্ষায় বসে থাকতেন! বাবা কখন শহর থেকে ফিরে আসবেন বাড়ি। কখনোবা খেলার সঙ্গী বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে করে বাড়ি নিয়ে এসে মায়ের কাছে এসে আবদার করে খাবার চাইতেন!
এভাবেই তার শৈশব কাটছিলো। এরিই মধ্যে বাবা তাকে ভর্তি করে দিলেন স্কুলে। তাও আবার সেই সুদূর মাদারীপুরের স্কুলে! অগত্যা তাকে সেখানেই ছুটতে হলো, টুঙ্গীপাড়ার এই চির পরিচিত বন, নদী আর অবারিত সবুজ গাছপালা ঘেরা মাঠ-বন-গ্রাম ফেলে রেখে। সারাটি জীবনই যে এরপর থেকে তাকে ছুটে বেড়াতেই হয়েছে। কখনো দেশের ছাত্রদের অধিকারের দাবিতে, কখনো মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে প্রতিবাদমুখর এক সংগ্রামী নেতা হিসেবে; কখনোবা দেশের মানুষের স্বাধীনতার লড়াইয়ে। চিরকালই যে এক দুরন্ত স্বাধীনচেতা সাহসী রোখ তার ঘাড়ে চেপে বসে থাকতো। চিরকালই যে এক অকুতভয় দুরন্ত চিরসবুজ বালক খেলা করে যেতো তার আচরণে! শিশুর মতোই সরল আর নিষ্কলুষ ছিলেন আমৃত্যু! বাঙালীর এই মহান নেতা। বাঙালী জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে আর হয়তো এমন সিংহ-হৃদয়, বজ্রকণ্ঠ, অকুতভয় নেতা কখনোই আসবেন না!

একটি সংগ্রহ পোষ্ট:http://kidz.bdnews24.com/bishesh_rochona.php?bisheshrochonaid=117

No comments:

Post a Comment