Tuesday, August 31, 2010

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মদদদাতা ও 
হামলাকারীদের বিচার করা হবে: আওয়ামী লীগ
২৩ আগস্ট ২০১০
একুশে আগস্ট উপলক্ষে রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।স্মরণসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এখনও তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তবে এ প্রসঙ্গে তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেছেন, 'জনগণের অধিকার আদায় করতে গিয়ে জীবনে বহুবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি। কিন্তু জনগণের অধিকার আদায়ের পথ থেকে পিছপা হইনি। জীবনের মালিক আল্লাহ। ক্ষমতা আল্লাহ দেন। তাই যত কথাই বলা হোক, যত হুমকিই দেওয়া হোক, আমি পরোয়া করি না। আমি সারা জীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাব।' ভাষণে শেখ হাসিনা আবারও নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে স্পষ্ট বলেছেন, অন্যায় করলে শাস্তি পেতেই হবে। কিছুতেই অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কেউ পার পাবে না। নিজের ঘরের ভেতর থেকেই এই শাসন শুরু করা হবে। সেটা না হলে বাইরের কাউকে শাসন করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী যখন অন্যায়কে প্রশ্রয় না দেওয়ার ঘোষণা দেন, তখন সমবেত সবাই তার বক্তব্যকে সমর্থন জোগান। সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ সভায় আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আবদুর রাজ্জাক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, এলজিআরডিমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, ওয়ার্কার্স পার্টি সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম ও আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বক্তৃতা করেন। উপস্থাপনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক নূহ-উল-আলম লেনিন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অমানবিক অত্যাচার-নির্যাতন চালানো হয়েছে। ঘরে ঘরে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগের এমপিদের খুন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের গন্ধ পেলেই ওএসডি করা হয়েছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। প্রতিহিংসার এমনি ধারায় একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটেছে। গ্রেনেড হামলার আগে নিজের নিরাপত্তা কর্মীদের সরকার কর্তৃক প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সেদিন আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি সমাবেশে একের পর এক গ্রেনেড হামলা হয়েছে। অথচ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কোনো সহায়তা দেয়নি। উল্টো গ্রেনেড হামলাকারীদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। গ্রেনেড হামলার আলামত নষ্ট করা হয়েছে। এসবের মানে ওই সময়কার ক্ষমতাসীনরা প্রত্যক্ষভাবে গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, বিএনপি সব সময়ই খুনিদের প্রশ্রয় দেয়। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন জেনারেল জিয়া। ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনে খালেদা জিয়া এমপি করেছিলেন খুনি রশিদ ও হুদাকে। তিনি আরও বলেন, একুশ আগস্ট জজ মিয়া নাটক সাজানো হয়েছে। অথচ তদন্তে প্রমাণ হয়েছে, আজকের বিরোধীদলীয় নেতার কেবিনেট সদস্য ওই ঘটনায় জড়িত। অথচ খালেদা জিয়া ওই সদস্যের ভাইকে ছাত্রদলের সভাপতি করেছেন। অর্থাৎ খালেদা জিয়া খুনিদের উৎসাহিত করেছেন। শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় গিয়ে জনগণের সম্পদ লুটে খেয়েছে। রাতারাতি হাজার হাজার কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। বিদেশে পাচার করেছে ঘুষ-দুর্নীতির টাকা। এ সবকিছু ভোগ করার পাশাপাশি আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন এবং ওই দলের নেতাকে (শেখ হাসিনা) প্রকাশ্যে হত্যা করতে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। তারা কখনওই স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না। বিএনপির দিকে ইঙ্গিত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট বলেছেন, এদের রাজনীতি গণতন্ত্রের জন্য নয়। এরা স্বাধীনতা বিনষ্টের জন্য রাজনীতি করে। এদের জন্ম হয়েছে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। এরা জেনারেল জিয়ার অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের ফসল। তিনি আরও বলেন, বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছে জিয়া পরিবার। বিদেশি আদালতের রায়ে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এই পরিবারের সদস্যরা ভাঙা সুটকেস থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। আঙুল ফুলে কলাগাছ বনেছে। শেখ হাসিনা বলেন, একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর আওয়ামী লীগ ও তাকে জড়িয়ে নানা অপপ্রচার করা হয়েছে। এমনকি শাহ এএমএস কিবরিয়া এবং আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যায়ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল। পরে সব কিছুতেই প্রমাণ হয়েছে, ওইসব ঘটনায় বিএনপি জড়িত। ওরা এখনও মিথ্যা কথা বলে। গ্রেনেড হামলায় শহীদদের স্মরণ ও আহতদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী গ্রেনেড হামলার সময় তাকে ঘিরে মানববর্ম তৈরি করায় প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফসহ সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, গ্রেনেড হামলাকারীদের বিচার হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হবে। সব হত্যার বিচার হবে। অন্যায়-অবিচার ও সন্ত্রাস দূর করা হবে। এই বাংলায় দুর্নীতিবাজদের ঠাঁই হবে না। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ১৫ আগস্টের পর একুশ আগস্ট হয়েছে। তাই আগামীতে শেখ হাসিনাসহ নেতৃবৃন্দের ওপর আঘাত আসতে পারে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আছি বলে কেউই নিরাপদ নই। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, 'সরকারের সাফল্য ম্লান করতে কিছু কর্মী অপ্রত্যাশিত কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে। সংবাদপত্রে যা ছাপা হচ্ছে, তার খানিকটা সত্য হলে সেটা আওয়ামী লীগের কাছে জাতি আশা করে না। তাই সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেন, ১৯৭১ সালের পরাজিত অপশক্তি এখনও টিকে আছে। তাদের জন্য টাকা আসে।
আবদুর রাজ্জাক বলেন, বিএনপি আইনের শাসন চায় না। তারা চান নিজেদের শাসন। রাজ্জাক সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেছেন, গ্রেনেড হামলাকারীদেরও বিচার হবে। যুদ্ধাপরাধীরাও রেহাই পাবে না।
অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেনেড হামলার সঠিক চার্জশিট দেওয়া হয়নি। এ মামলার পুনঃতদন্তে গ্রেনেড হামলার মদদদাতা ও হামলাকারীদের নাম বেরিয়ে আসবে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গ্রেনেড হামলা নিয়ে তামাশা করেছে। জজ মিয়া নাটক সাজিয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকর হয়েছে। আগামীতে বিডিআর হত্যাকাণ্ডসহ সব হত্যার বিচার করা হবে।
রাশেদ খান মেনন বলেন, গ্রেনেড হামলার পর তখনকার সরকার খুনিদের সহায়তা দিয়েছে। ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। হাসানুল হক ইনু বলেন, গণতন্ত্রের বাগানে যুদ্ধাপরাধী ও গ্রেনেড হামলাকারীরা আগাছা। তিনি জিয়া ও খালেদা জিয়াকে খুনিদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে অভিহিত করেন।
অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, জাতি গ্রেনেড হামলাকারীদের বিচার ও রায় কার্যকর দেখতে চায়। মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, হাওয়া ভবন থেকে গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা হয়েছে। অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের মতো যে কোনো মূল্যে গ্রেনেড হামলাকারীদের বিচার করা হবে। গ্রেনেড হামলার উৎস খোঁজা হবে। হাওয়া ভবনের তারেক ও বাবরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে।


No comments:

Post a Comment