Sunday, July 11, 2010

২৮ এপ্রিল ২০১০

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির প্রেক্ষাপটে হিমালয় পরিষদ নামে দক্ষিণ এশীয় আন্তঃসরকার সংক্রান্ত ফেরাম গঠনের প্রস্তাব করেছেন। তিনি বলেন, বিশ্ব উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইতোমধ্যে হিমালয়ের হিমবাহ গলে যাওয়া, সমুদ্র স্তর বৃদ্ধি পাওয়া, অস্বাভাবিক ঝড়, ভূমি ক্ষয়, মরুয়ায়ন ও লবণাক্ততাসহ এ অঞ্চলের দেশগুলো বিভিন্ন ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী রাজধানী থিম্পুতে অনুষ্ঠিত ১৬তম দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) প্লেনারি সেশনে বক্তৃতাকালে একথা বলেন। উল্লেখ্য, এবছর সার্কের ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। 'আঞ্চলিক পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি' উল্লেখ করে তিনি এ অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার দেশগুলোর সহায়তায় 'আর্টিক' পরিষদের আদলে হিমালয় পরিষদ গঠনের জন্য সার্কভুক্ত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। কোপেনহেগেনে সিওপি-১৫ বৈঠকের কয়েক মাস পর সার্কের দুই দিনের এই শীর্ষ সম্মেলনে সার্ক নেতৃবৃন্দ 'কনভেনশন অন কো-অপারেশন অন এনভায়রনমেন্ট' নামে গুরুত্বপূর্ণ যে চুক্তি করতে যাচ্ছেন, তারই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ এ প্রস্তাব করেছে। চলতি সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে জলবায়ু সংক্রান্ত এ চুক্তির বিষয়টি সর্বাধিক প্রাধান্য পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, সামপ্রতিক বিশ্ব মন্দার প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়ালেও এখনও অর্থনৈতিক ধীর গতি, তেল ও খাদ্য মূল্য বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সমস্যা মোকাবেলা করছে। তিনি বলেন, বিশ্ব উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইতোমধ্যে হিমালয়ের হিমবাহ গলে যাওয়া, সমুদ্র স্তর বৃদ্ধি পাওয়া, অস্বাভাবিক ঝড়, ভূমি ক্ষয়, মরুয়ায়ন ও লবণাক্ততাসহ এ অঞ্চলের দেশগুলো বিভিন্ন ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। থিম্পুর কেন্দ্রস্থলে ঐত্যিবাহী পার্লামেন্ট ভবনে অনুষ্ঠানরত এ শীর্ষ সম্মেলনে শেখ হাসিনা আরো বলেন, ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় ও বন্যাসহ ভূকাঠামোর বিরূপ পরিবর্তনের কারণে আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি, দারিদ্র্য বিমোচন প্রচেষ্টা ও সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক উভয় পর্যায়ে সামগ্রিক উদ্যোগ জরুরি বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। আর্টিক পরিষদ একটি উচ্চ পর্যায়ের আন্তঃসরকার সংক্রান্ত ফোরাম। এটি ১৯৯৬ সালে সুমেরু অঞ্চলের আদিবাসী সমপ্রদায় ও অন্যান্য অধিবাসীদের অভিন্ন বিষয়সমূহ বিশেষ করে টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণসহ এ অঞ্চলের রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সহযোগিতা, সমন্বয় ও যোগাযোগ সমপ্রসারণের লক্ষ্য নিয়ে গঠিত হয়। এর সদস্য দেশগুলো হচ্ছে_ কানাডা, রাশিয়া, নরওয়ে, ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, সুইডেন ও ফিনল্যান্ড। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত বছর নভেম্বরে সিওপি-১৫ এ জলবায়ু মোকাবেলা সংক্রান্ত ব্যাপক ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি গ্রহণের বিষয়ে সকলেই আশান্বিত ছিল। তিনি বলেন, চলতি বছরের শেষ দিকে মেক্সিকো সিটিতে অনুষ্ঠিতব্য সিওপি-১৬'র গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে কার্বণ গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস, তহবিল নিশ্চিত ও প্রযুক্তির বিষয়ে কঠোর অঙ্গীকার করতে হবে। তিনি আশা করেন, এ বিষয়ে প্রস্তাবিত হিমালয় পরিষদ সার্কভুক্ত দেশগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ নিশ্চিত করবে। প্রধানমন্ত্রী অভিযোজন পদক্ষেপ বিষয়ে সুপারিশের জন্য আন্তর্জাতিক অভিযোজন ও গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনেরও প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, এটি স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ হতে পারে উপযুক্ত জায়গা, কারণ বাংলাদেশের রয়েছে দীর্ঘদিনের অভিযোজন অভিজ্ঞতা।


No comments:

Post a Comment