Sunday, July 11, 2010


১৭ মে, ১৯৮১ বৃষ্টিমুখর দিন। লক্ষ লক্ষ মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত রাজপথ লোকে লোকারণ্য। প্রতীক্ষার প্রহর শেষে ঢাকা বিমান বন্দর স্পর্শ করলো বিমান। নেমে এলেন বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা। মাতৃভূমির মাটি চুম্বন করে উদ্বেলিত তিনি। চারদিকে শেখ হাসিনার জয়ধ্বনি এবং লক্ষ মানুষের কণ্ঠে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ করার দৃঢ়প্রত্যয়। জৈষ্ঠ্যের অঝোর ধারার মতো দেশবাসীর ভালোবাসায় সিক্ত শেখ হাসিনা। তাঁর চোখেও বাঁধভাঙ্গা কান্নার জল। ১৯৮১ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক মোড় পরিবর্তনের দিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাত্রিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যখন সপরিবারে হত্যা করা হয়, তখন ঘটনাক্রমে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছিলেন জার্মানিতে। ফলে তাঁরা প্রাণে বেঁচে যান। সামরিক শাসন ও খুনিচত্রের উদ্যত মারণাস্ত্রের সামনে তাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কার্যত নিষিদ্ধ হয়। শুরু হয় অনিশ্চিত নির্বাসিত জীবন। ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতা, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে। বঙ্গবন্ধু হত্যার ধারাবাহিকতায় একই খুনিচক্র একই উদ্দেশ্যে জাতীয় চার নেতাকেও হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধের প্রতিশোধ গ্রহণ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, অসামপ্রদায়িক গণতান্ত্রিক সংবিধানকে পদদলিত করে বেনামে পাকিস্তান পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করাই ছিল এসব হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য। এসব লক্ষ্য অর্জনে তারা বহুলাংশে সফলও হয়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার পাশাপাশি দলটিকে ভাঙ্গারও অপচেষ্টা করা হয়। কান্ডারিবিহীন আওয়ামী লীগ অকুল সাগরে যেন দিশাহীন হয়ে পড়েছিল। অন্যদিকে নেতৃত্ববিহীন জাতি সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার জন্য যোগ্য নেতৃত্বের জন্য অপেক্ষা করছিল।


No comments:

Post a Comment