Tuesday, July 13, 2010

লবণ, খরা ও বন্যা সহনীয় নতুন ধান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ৫০ বছর পূর্তি ও দু'দিনব্যাপী ধানমেলা উদ্বোধন করেন। পরে তিনি মেলা ঘুরে দেখেন সমকাল
আলতাব হোসেন
অবশেষে লবণাক্ততা, খরা ও বন্যাসহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশের কৃষি গবেষকরা।
এমন একটি ধানের স্বপ্ন বন্যা আর খরাপ্রবণ বাংলাদেশের অনেক দিনের। বন্যা বা খরায় যার কিছুই হবে না, কিংবা টিকে থাকবে মাটির অতিরিক্ত লবণাক্ততায়। স্বপ্নের এমন সব ধান নিয়ে আশা জাগানোর কথাও শুনিয়েছেন গবেষকরা।
ইরির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হওয়া দু'দিনব্যাপী ধানমেলায় কৃষি গবেষকরা জলবায়ুসহিষ্ণু বিভিন্ন ধানের জাত নিয়ে কথা বলেন। আন্তর্জাতিক এ ধানমেলা আজ শেষ হবে। মেলায় ৩৫টি স্টলে কয়েকশ' জাতের ধান রয়েছে। উল্লেখযোগ্য স্টলের মধ্যে বিএডিসি, ব্রি,
সুপ্রিম সিড ও ব্র্যাক। ইরির বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. জয়নুল আবেদীন সমকালকে বলেন, আমরা এখন ধানের উৎপাদন, বন্যা, খরা, লবণাক্ততা, কোল্ড ইনজুরিমুক্ত ধান নিয়ে কাজ করছি। পাশাপাশি ধানের মধ্যে পুষ্টি উপাদান যুক্ত করার কাজ চলছে। কারণ ভাতের সঙ্গে পুষ্টি যুক্ত থাকলে আমাদের দরিদ্র মানুষের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে। পুষ্টির সঙ্গে স্বাদ ও সুঘ্রাণের বিষয়টিও জোর দেওয়া হচ্ছে।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক ড. মাহবুব হোসেন বলেন, প্রথমবারের মতো খরাসহিষ্ণু ধানের জাত আনা হয়েছে আফ্রিকা থেকে। এর পরীক্ষামূলক চাষাবাদ শুরু হয়েছে চলতি বছর। আশা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের আবহাওয়ায় নতুন এ জাতের ধানের ভালো ফলন হবে।
বন্যা আর খরার মৌসুমে আউশ ও আমনের উৎপাদন বাড়াতে হাইব্রিড জাতের নতুন ধান নিয়ে আসছে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক। চলতি মৌসুমে পরীক্ষামূলকভাবে কম সময় ও উচ্চ ফলনশীল নারিকা জাতের ধানের চাষ করেছে সংস্থাটি। এ বিষয়ে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক ড. মাহবুব হোসেন সমকালকে বলেন, কৃষিমন্ত্রীর সুপারিশে ব্র্যাক আমন ও আউশ মৌসুমে মোট উৎপাদন বাড়াতে আফ্রিকা থেকে ১০ জাতের নারিকা ধানের বীজ সরবরাহ করে। এর মধ্যে ব্র্যাকের গাজীপুর খামারে পাঁচটি জাত আর বিএডিসির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঁচটি জাতের পরীক্ষামূলক আবাদ করা হয়।
এছাড়া ভিয়েতনাম থেকে আমন মৌসুমের জন্য আরও পাঁচটি উচ্চ ফলনশীল নতুন জাতের ধান বীজ আনা হয়েছে। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় ভিয়েতনামের জাতগুলো ভালো ফলন দিয়েছে। তিনি জানান, মাত্র ৯০ থেকে ৯৫ দিনে এ জাতগুলোর ধান ঘরে ওঠে। ফলনও হেক্টরে পাঁচ টনের বেশি। আগামী বছর এ জাতগুলো কৃষক পর্যায়ে চাষের জন্য বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির কাছে অনুমতি চাওয়া হবে বলে জানান ড. মাহবুব হোসেন।
ইরির সাবেক কর্মকর্তা ড. মাহবুব হোসেন আরও জানান, দেশে বোরোর বাম্পার ফলন নিশ্চিত হলেও আউশ-আমন পিছিয়ে পড়েছে। অথচ একসময় আমন থেকেই সিংহভাগ ধান উৎপাদন হতো। বর্তমানে মোট উৎপাদনের ৬০ ভাগ আসে বোরো থেকে, ৩০ ভাগ আমন আর ১০ ভাগ আউশ থেকে।
প্রথমবারের মতো লবণাক্তসহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল ধানের দুটি জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা)। নতুন এ জাতটি চাষ করা হলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ উপকূলীয় এলাকার লবণপানির ঝুঁকিতে থাকা প্রায় ১০ লাখ হেক্টর জমি চাষের আওতায় আসবে। এতে অতিরিক্ত প্রায় ৪০ লাখ টন খাদ্য বেশি উৎপাদন হবে। এরই মধ্যে জাতটি চাষের মাধ্যমে এর সম্ভাব্যতাও নিশ্চিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষণা ও পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এ ধানটির নাম 'বিনা-৮' ও 'বিনা-৯' করার প্রস্তাব করেছে বিনা।
নতুন এ জাতের ধান হেক্টরপ্রতি সাড়ে চার টন উৎপাদন হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন জাতটির উদ্ভাবক এবং বিনার বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম। জাত দুটি আলোক অসংবেদনশীল হওয়ায় বোরো ও আমন_ উভয় মৌসুমে চাষের উপযোগী। বোরো মৌসুমে ১৩০ থেকে ১৩৫ এবং আমন মৌসুমে ১২০ থেকে ১২৫ দিনে পাকে।
এমন একটি ধানের স্বপ্ন ছিল উপকূলের লাখ লাখ কৃষকের, অতিরিক্ত লবণাক্ততায় যে ধানের কিছুই হবে না। টিকে থাকবে লবণাক্ততার সর্বোচ্চ মাত্রায়ও। বিনার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এম রইসুল হায়দার জানান, দেশে বর্তমানে অতি মাত্রার লবণাক্ত জমির পরিমাণ প্রায় ১০ লাখ হেক্টর। এছাড়া আরও ১৫ লাখ হেক্টর জমি সীমিত মাত্রার লবণাক্ত। এসব জমিতে বোরো বা শুষ্ক মৌসুমে ৪ থেকে ২০ ডেসি সিমেন মিটার (ডেসিমিটার) মাত্রার লবণাক্ততা থাকে। এর আগে উদ্ভাবিত আমন মৌসুমের জন্য ব্রি-ধান ৪০ ও ব্রি-ধান ৪১ এবং বোরো মৌসুমের জন্য ব্রি-ধান ৪৭-এর লবণসহিষ্ণুতা কম। তবে জমিতে লবণের পরিমাণ বেড়ে গেলে সর্বোচ্চ ছয় ডেসিমিটার মাত্রার ব্রি-ধান ৪০, ৪১ ও ৪৭-এর ফলন অনেক কমে যায়।
ttp://www.samakal.com.bd/details.phpnews=14&action=main&menu_type&option=single&news_id=78829&pub_no=396&type

No comments:

Post a Comment