Sunday, July 11, 2010



সংসদে এসে বাজেট নিয়ে বলুন, বিরোধীদলীয় নেত্রীকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
৮ জুন ২০১০

বাজেট সম্পর্কে কোন বিকল্প প্রস্তাব থাকলে তা সংসদে এসে বলার জন্য বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিরোধীদলীয় নেত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, "সংসদে আসুন। বাজেট সম্পর্কে কোন প্রস্তাব থাকলে সংসদে এসে বলুন। আপনার প্রস্তাবে জনকল্যাণমূলক বা জনস্বার্থে কিছু থাকলে অবশ্যই গ্রহণ করা হবে। তবে স্ট্যান্টবাজি বা বিভ্রান্ত করার জন্য করা হলে জনগণ অবশ্যই তার জবাব দেবে। বিরোধীদলীয় নেত্রীর আন্দোলনের কর্মসূচীতে জনকল্যাণে নয় দাবি করে প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, পাঁচ বছরে লুন্ঠনকৃত ধনসম্পদ ভোগ ও রৰা, দুর্নীতিবাজদের বাঁচানো আর মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতেই উনি (খালেদা জিয়া) আন্দোলনের কর্মসূচী দিয়েছেন। তাঁর কর্মসূচীতে জনকল্যাণে একটি কথাও নেই। কীভাবে দুর্নীতিকৃত অর্থসম্পদ ভোগ করবেন, যুদ্ধাপরাধীদের রৰা করবেন এজন্যই আন্দোলনের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, এতই যদি ভাল বাজেট দিতে পারতেন তাহলে ৰমতার পাঁচ বছরে কী করলেন? প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলেন কেন? দারিদ্র্যবিমোচনে, অর্থনীতিতে, আইনশৃঙ্খলা রৰায় প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছেন। পাঁচ বছরে শুধু সফল হয়েছেন দুর্নীতিতে, দুর্নীতিতে দেশকে চ্যাম্পিয়ন করতে এবং জঙ্গীবাদের মদদ ও সর্বসত্মরে প্রতিষ্ঠিত করতে। কিন্তু দেশের জনগণ আপনাদের ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত সম্পর্কে ভাল করেই জানেন। হুমকি-ধমকি দিয়ে লাভ হবে না। আমরা দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলবই। সোমবার বিকেলে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলৰে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। নূহ-উল-আলম লেনিনের পরিচালনায় আলোচনায়সভা বাইরে অপেৰমাণ বিপুল সংখ্যেক নেতাকর্মীর জন্য মিলনায়তনের বাইরে বিশাল ডিজিটাল ব্যানারে সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়। ৪৪ বছর পেরিয়ে গেলেও ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৬ দফা ঘোষণা এবং পরবর্তী ধাপে ধাপে স্বাধীনতা অর্জনের আন্দোলন-সংগ্রামের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ওই সময়ের সামনের সারির ছাত্র নেতাদের স্মৃতিচারণে বারংবার জাতির জনকের পাশাপাশি তাঁর সহধর্মিণী বেগম মুজিবের ঐতিহাসিক অবদানের কথা উঠে আসে। প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে ঐতিহাসিক ৬ দফার আন্দোলনে শহীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের কোন ভাল কাজই বিরোধীদলীয় নেত্রীর পছন্দ হয় না। বিদ্যুত উৎপাদন যাতে না বাড়াই সেজন্য হুমকি দিচ্ছেন। নিজেরা ৰমতায় থাকতে পাঁচ বছরে বিদ্যুত উৎপাদন করতে পারেননি, আমরা কেন উৎপাদন করছি এটা তাঁর পছন্দ হচ্ছে না। তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, "আপনারা বিদ্যুত চান কীনা? চাইলে বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া বলেন, বিদু্যত উৎপাদন করতে গেলে যেন হুমকি না দেন।" তিনি আরও অভিযোগ করেন, সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও বিরোধীদলীয় নেত্রী হুমকি দিচ্ছেন, যাতে উন্নয়নমূলক কাজের ফাইলে স্বাৰর না দেন। কারণ মানুষের উন্নয়ন ও দেশের কল্যাণ তিনি চান না। তাই সরকারের জনকল্যাণমুখী যে কোন কর্মসূচীতে তিনি (খালেদা জিয়া) বাধা দিচ্ছেন। তিনি বিরোধীদলীয় নেত্রীর কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, গতবার আওয়ামী লীগ ৰমতা ছেড়ে আসার সময় ১০ টাকা কেজি চাল রেখে এসেছিল। পাঁচ বছর ৰমতায় থেকে সেই চালের দাম ৪৫ টাকায় বৃদ্ধি করলেন কেন? প্রতিটি দ্রব্যমূল্যে আপনার সময় কেন এত বৃদ্ধি পেল তার জবাব দিতে হবে।




ঐতিহাসিক ৭ জুন, ৬-দফা দিবস পালন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে

৭ জুন, ১৯৬৬ সাল, বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে এক অনন্য প্রতিবাদী আত্মত্যাগে ভাস্বর গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামী একটি দিন।১৯৪৭ সালে ভ্রান্ত দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনগোষ্ঠীর উপর শোষণ ও বৈষম্য চাপিয়ে দেয়। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসাধারণ রাজনৈতিক কৌশল, দক্ষতা ও দৃঢ় সংগ্রামী নেতৃত্বের কারণে অত্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যেই বাঙালিরা হৃদয়ঙ্গম করতে সক্ষম হন যে, তারা ব্রিটিশ শাসনের নিগড় থেকে মুক্তি লাভ করলেও নয়া পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়েছেন। মহান ভাষা আন্দোলন, খাদ্য আন্দোলন, মুসলিম লীগ বিরোধী ২১ দফা প্রণয়ন ও যুক্তফ্রন্ট গঠন, ৫৪-এর নির্বাচনী বিজয় এবং মুসলিম লীগের ভরাডুবি প্রভৃতি ঘটনার ভিতর দিয়ে বাঙালি জাতি মুক্তির অমোঘ চেতনায় জেগে উঠে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর জাতিগত নিপীড়ন, শোষণ, বঞ্চনা, বৈষম্য এবং অব্যাহত স্বৈরশাসন ক্রমশ বাঙালি জাতির মোহমুক্তি ঘটায়। ধর্মীয় সামপ্রদায়িক ভাবধারার বিপরীতে আত্মসম্বিত ফিরে পায় বাঙালি জাতি। এই প্রেক্ষিতে বাঙালি জাতীয়তাবোধের স্ফূরণ, বিকাশ এবং বাঙালির স্বতন্ত্র জাতি-রাষ্ট্র ধারণাকে জনচিত্তে প্রোথিত করা এবং অপ্রতিরোধ্য করে তোলার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ও তার নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একমাত্র নিয়ামক ভূমিকা পালন করেন।৬০-এর দশকে আইউব বিরোধী আন্দোলন; দুই অর্থনীতি’র তত্ত্ব প্রচার এবং ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ৬-দফা দাবি উত্থাপন বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনকে স্পষ্টত নতুন পর্যায়ে উন্নীত করে।

১৯৬৬ সালে ১৩ মে আওয়ামী লীগ আয়োজিত পল্টনের এক জনসভায় ৭ জুন হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। জুন মাসব্যাপী ৬-দফা প্রচারে বিপুল কর্মসূচি নেওয়া হয়। ৭ জুন তেজগাঁওয়ে বেঙ্গল ব্যাভারেজের শ্রমিক সিলেটের মনু মিয়া গুলিতে প্রাণ হারান। এতে বিক্ষোভের প্রচণ্ডতা আরো বাড়ে। তেজগাঁওয়ের ট্রেন বন্ধ হয়ে যায়। আজাদ এনামেল এ্যালুমিনিয়াম কারখানার শ্রমিক আবুল হোসেন ইপিআর-এর গুলিতে শহীদ হন। একইদিন নারায়ণগঞ্জ রেল স্টেশনের কাছে পুলিশের গুলিতে মারা যায় ৬ জন শ্রমিক। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সন্ধ্যায় কারফিউ জারি করা হয়। হাজার হাজার আন্দোলনকারী মানুষ গ্রেফতার হয়। বহু জায়গায় জনতা গ্রেফতারকৃতদের ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। ৬-দফা ভিত্তিক আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। শহীদের রক্তে আন্দোলনের নতুন মাত্রা গড়ে উঠে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয় শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের আন্দোলন। স্বায়ত্তশাসনের সীমা অতিক্রম করে ৬-দফায় কার্যত কৃত্রিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা হয়। ৬-দফায় বাংলাদেশের বাঙালি জনগোষ্ঠী খুঁজে পায় তাদের মুক্তির ঠিকানা। ৬-দফা হয়ে উঠে স্বাধিকার আন্দোলনের মেগনাকার্টা, পূর্ণ স্বাধীনতাই যার যৌক্তিক পরিণতি। ৬-দফা ভিত্তিক ছাত্র সমাজের ১১-দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার এবং বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সৃষ্ট ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচনে ৬-দফার পক্ষে গণরায়, আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়, অসহযোগ আন্দোলন, ৭ মার্চের দিক-নির্দেশনামূলক ঐতিহাসিক ভাষণ, বঙ্গবন্ধু কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা, ৭১-এর সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ, বিজয় অর্জন, লাখো শহীদের আত্মদান, বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় সবই একসূত্রে গাঁথা। যার মহানায়ক ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

প্রতিবারের ন্যায় এবারও সমগ্র জাতির সাথে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এই দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় স্মরণ ও পালন করবে।




৪ জুন ২০১০

দুঃখী রমিজা খাতুনের সবচেয়ে আনন্দের দিন ছিল বৃহস্পতিবার। স্বামী হাসমত আলীর সবচেয়ে প্রিয় মানুষ বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে কাছে ডেকে নিয়ে সুখ-দুঃখের কথা শুনেছেন। আনন্দ-বেদনা আর কান্নাজড়িত কণ্ঠে রমিজা খাতুন মৃত স্বামীর উদ্দেশে বলতে থাকেন, 'তোমার মেয়ে হাসিনা আমাকে ডেকে খোঁজখবর নিয়েছে। তাঁর জন্য তোমার কেনা জমিতে আমার থাকার ঘর, গরু, হাঁস-মুরগির খামার করে দিতে চেয়েছে। মেয়ের সঙ্গে আমার দেখা হয়ে গেছে, আমার চেনা হয়ে গেছে। এখন আমার আর কিছু চাওয়ার নেই। মেয়ে তাঁর জমির খবর জানতে পেরেছে। এটাই আমার তৃপ্তি। কারণ আমি নিজেই মেয়ের কাছে এসে জমির কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। বঙ্গবন্ধুকন্যার সঙ্গে সাক্ষাতের পর রমিজা খাতুন দু'হাত তুলে আল্লাহর দরবারে শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করছিলেন।' রমিজা বলেন, আজ আমার স্বামীর আত্মা শান্তি পাবে। কারণ তাঁর উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। মেয়ে জেনেছে তাঁর নামে গ্রামে জমি কিনে রেখে গেছেন এক দরিদ্র বাবা। গত ২ জুন দৈনিক কালের কণ্ঠে 'বিরল ভালবাসা' শিরোনামে প্রকাশিত হয় বঙ্গবন্ধুর ভক্ত হাসমত আলীর কথা। ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার দরিদ্র ভ্যানচালক হাসমত আলী বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের আয় থেকে কিছু সঞ্চয় করতেন। এছাড়া হাসমত ছিলেন আওয়ামী লীগের একজন অন্ধভক্ত। আওয়ামী লীগের মিছিল-মিটিংয়ের কথা শুনলেই ছুটে যেতেন তিনি। নৌকা আর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মেতে থাকতেন সারাদিন। তিনি সব সময় বলতেন, শেখ হাসিনার কেউ নেই। ও আমার মেয়ে। ওর জন্য কিছু করতে হবে। তাই স্ত্রী বা সন্তানের নামে নয়, জমানো টাকা দিয়ে ২০০৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি গফরগাঁও উপজেলার রাওনা ইউনিয়নের খারুয়া বরাইল গ্রামের মোঃ ইউসূফ আলীর কাছ থেকে পৌনে সাত শতাংশ জমি কেনেন হাসমত। ২৪ হাজার টাকা দিয়ে কেনা জমির দলিল করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নামে। তিনি বলতেন, শেখ হাসিনা আমার মেয়ে। মেয়েটা এখন এতিম। তাই ওর নামে এই জমি কিনে রেখে গেলাম। দীর্ঘ সাত বছর এ কথা ছিল অপ্রকাশিত। অর্থের অভাবে চিকিৎসা হয়নি হাসমতের। বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন তিনি। স্বামীর মৃতু্যর পর ছেলে কাদের মাকে দেখতে পারেন না। বৃদ্ধ মায়ের কোন খোঁজও নেন না তিনি। বিয়ে করে আলাদা ঘর সংসার পেতেছেন কাদের। তাই বৃদ্ধ বয়সে রাস্তায় দিন কাটত রমিজার। তবুও রমিজা বিক্রি করেননি শেখ হাসিনার নামে কেনা এই জমি। নিহত হাসমতের স্ত্রী রমিজা তিনিও এখন অসুস্থ। প্রাণ বাঁচাতে ভিক্ষা করেন। থাকেন ঢাকার শ্যামলীতে। নিজের ছেলে জমিটুকু পাবার জন্য মার ওপর অনেক নির্যাতন করে। তবুও মেয়ের নামে স্বামীর কেনা জমি নিজের আপন সন্তানকে দিতে রাজি হননি তিনি। প্রতিবেদনে রমিজা খাতুন স্বামীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, তাঁর স্বামী নিজের ছেলেকে যতটা ভাল না বাসতেন, তার চেয়ে বেশি ভালবাসতেন শেখ হাসিনাকে। শেখ হাসিনাকে মেয়ে সম্বোধন করে প্রায়ই বলতেন, বঙ্গবন্ধুকে রাজাকাররা পরিকল্পিতভাবে সপরিবারে হত্যা করেছে। এখনও তাঁর মেয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি প্রতিদিন নামাজ পড়ে শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করতেন আর বলতেন, শেখ হাসিনা আমার মেয়ে তাঁর জন্য কিছু করা দরকার। মনের তাগিদ থেকেই শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার নামে নিজের টাকায় একখণ্ড জমি কেনার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। পত্রিকায় খবরটি প্রকাশিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি কাড়ে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি রমিজাকে খুঁজে আনতে নির্দেশ দেন। রমিজা খাতুনকে খুঁজে বের করে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ জানান, রমিজা খাতুন আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে সাক্ষাত করেন। শেখ হাসিনা রমিজার কাছে তাঁর সুখ-দুঃখের কথা শোনেন। তাঁকে সান্তনা দেন। তিনি জানান, শেখ হাসিনা তাঁর নামে হাসমত আলীর কেনা জমিটুকু রমিজার নামে দলিল করে দেয়ার নির্দেশ দেন। জমিতে রমিজার জন্য থাকার ঘর, গরু, হাঁস ও মুরগির ছোট খামার করে দেয়ারও নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্টদের। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী রমিজার চিকিৎসার জন্য কিছু আর্থিক সাহায্য দেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত ও সাংবাদিক হায়দার আলী উপস্থিত ছিলেন।




০২ জুন ২০১০

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৪ দল ও মহাজোট মিলে আমরা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছিলাম। জনগণের আস্থা অর্জন করতে পেরে সরকার গঠন করেছি। আসুন সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে জনগণের সে আস্থার ও বিশ্বাসের মর্যাদা দেই। নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ, মহাজোট নেতৃবৃন্দ ও সংসদীয় দলের যৌথ সভায় তিনি সভাপতির ভাষণে একথা বলেন। বৈঠক সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হয়ে রাত সোয়া ৯টায় শেষ হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের পর থেকে ইচ্ছা ছিল সকলকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করবো। কিন্তু নানা সমস্যার ভেতর দিয়ে অনেক সময় পার করতে হয়েছে। আমরা চাই আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের সকল নেতৃবৃন্দের মধ্যে মতামত বিনিময় ও সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হোক। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণভবনে ওঠা উপলক্ষে আজকে এ আপ্যায়নের আয়োজন। জনগণকে যে কথা দিয়ে আমরা সরকার গঠন করেছি সেই অঙ্গীকার ওয়াদা পূরনের জন্য আমরা দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আমরা পার্লামেন্টকে কার্যকর করার জন্য সরকার গঠনের প্রথম থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছি। সংসদে প্রথম অধিবেশনে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলো করে দিয়েছি। তিনি বলেন, জনগণ প্রজাতন্ত্রের মালিক। রাষ্ট্র পরিচালনায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। গণতন্ত্র ছাড়া কোন দেশ উন্নতি করতে পারে না। বুধবার থেকে বাজেট অধিবেশন শুরু। আমার দলের সংসদ সদস্যদের পাশাপাশি অন্য শরিক দলের সংসদ সদস্যদের অনুরোধ করবো আপনারা ভাল প্রস্তুতি নিয়ে আসবেন, বাজেটের ওপর গঠনমূলক বক্তব্য রাখবেন। তিনি বলেন, গত বছর যে বাজেট ঘোষণা করেছিলাম মোটামুটি সফলভাবে বাসত্মবায়ন করতে পেরেছি। আশা করি নতুন যে বাজেট আসছে সেটা পুরোপুরি বাসত্মবায়ন করতে পারবো। শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে গড়তে চাই। ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে চাই। স্থানীয় সরকার কাঠামো শক্তিশালী করতে চাই। উন্নয়ন যাতে শহরকেন্দ্রীক না হয়ে পড়ে তার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, উন্নয়ন হতে হবে গ্রামভিত্তিক। সব গ্রামের উন্নয়ন হলেই দেশের উন্নয়ন হবে। আমরা গতবারের মতো এবারও গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবো।


No comments:

Post a Comment