Wednesday, July 21, 2010

Prothom Alo

সংসদে প্রধানমন্ত্রী

পোশাকশ্রমিকদের বেতন শুধু অপ্রতুলই নয়, অমানবিক

নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ২২-০৭-২০১০


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তৈরি পোশাকশ্রমিকদের যে বেতন দেওয়া হয়, তা শুধু অপ্রতুলই নয়, অমানবিক। গ্রাম থেকে এসে তারা যে ধরনের পরিশ্রম করে যে টাকা বেতন পায়, তা দিয়ে ঢাকা শহরে থাকা-খাওয়া যায় না। এ অমানবিক অবস্থা নিরসনে সরকার পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম বেতনকাঠামো নির্ধারণে মজুরি কমিশন রোয়েদাদ চূড়ান্ত করছে। ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে তা ঘোষণা করা হবে।
জাতীয় সংসদে গতকাল বুধবার শাহীন মনোয়ারা হকের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রশ্নোত্তর পর্বের আগে বিকেল সোয়া চারটায় ডেপুটি স্পিকার শওকত আলীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়। বিরোধী দল গতকালও সংসদে অনুপস্থিত ছিল। তবে বিএনপির নাজিমউদ্দিন আহমেদের প্রশ্ন দিয়ে শুরু হয় প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তরপর্ব। তাঁর অনুপস্থিতিতে শাহীন মনোয়ারা হক প্রশ্নটি উত্থাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা মালিকেরা দিতে চান না। সে জন্য সরকার মালিক ও শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে ন্যূনতম বেতন কাঠামো করার উদ্যোগ নিয়েছে, যাতে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সহনীয় পর্যায়ে থাকে। তিনি বলেন, মালিকদের চিন্তা করা উচিত, শ্রমিকদের কারণেই তাঁরা লাভ করছেন। তাঁদের ব্যবসার ব্যাপ্তি হচ্ছে। তাই লাভের কিছু অংশ শ্রমিকদের দেওয়া উচিত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পোশাকশ্রমিকেরা বেসরকারি খাতে কাজ করলেও সরকার তাদের ব্যাপারে আন্তরিক। তাদের জন্য ডরমিটরি করতে ১ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। শ্রমিকদের রেশনে ১৬ টাকা কেজিতে সরকার চাল দিচ্ছে। পোশাক কারখানার মালিকেরা এসব চাল কিনে শ্রমিকদের রেশনে দিতে পারেন।
যানজট নিরসনে বহুমুখী পদক্ষেপ: সরকারি দলের গোলাম দস্তগীর গাজীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনে সরকার বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে গাজীপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত এলিভেটেড ফ্লাইওভার, ঢাকা থেকে গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত রেলের ডাবল লাইন নির্মাণ, মিরপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। রাজধানীর সব রেলক্রসিংয়ে ফ্লাইওভার বা ওভারপাস নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
সংসদ নেতা বলেন, ঢাকার রাস্তাগুলো বেশ প্রশস্ত হলেও মানুষের অসচেতনতার কারণেও কিছু সমস্যা হচ্ছে। ওভারব্রিজ বা আন্ডারপাস দিয়ে না গিয়ে অনেকে রাস্তা দিয়ে পারাপার হওয়ায় গাড়ি চলতে সমস্যা হয়। এ ছাড়া গাড়ির চালকদেরও সচেতনতার অভাব রয়েছে।
ইভ টিজিংয়ের ঘটনায় ৮৩টি মামলা হয়েছে: সরকারি দলের আসমা জেরীনের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ইভ টিজিংয়ের ঘটনায় গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৮৩টি মামলা এবং ২১১টি জিডি হয়েছে। একই সঙ্গে এ অপরাধের সঙ্গে জড়িত ৬৩৩ জনকে গ্রেপ্তার এবং ৭৫৭ জনকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বখাটেরা মোবাইল ফোনে টাকা ভরার দোকান থেকে মেয়েদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট দোকানের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করাসহ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইভ টিজিংকে সামাজিক অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের অপরাধ স্থায়ীভাবে নির্মূলের জন্য স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্তরে গণসচেতনতামূলক কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া
সংসদে পোশাকশ্রমিকদের মজুরি প্রসঙ্গে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে যোগাযোগ করা হলে শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি এ কে আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, পোশাক খাতের শ্রমিকদের মজুরি কাঠামো নিয়ে সরকার গঠিত মজুরি বোর্ডে আলোচনা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিফলন নতুন মজুরি কাঠামোর মধ্যে দেখতে পাওয়া যাবে বলে আমি আশা করি। মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধি মিলে এর একটা সমন্বয়-সমাধান দেবেন বলেও আমি মনে করি।’
তৈরি পোশাক মালিক সমিতির (বিজিএমইএ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও মজুরি বোর্ডে মালিক প্রতিনিধি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমি একমত হতে পারছি না। অমানবিক ঠিক না। আমরা বলব কারখানাতে নতুনভাবে যাঁরা যোগদান করতে আসেন (এন্ট্রি পয়েন্টে), তাঁদের মজুরি কম, এটা ঠিক আছে। এ জন্যই তো পাঁচ বছর পর নতুন মজুরি কাঠামো হওয়ার কথা থাকলেও আমরা চার বছরের মধ্যে নতুন মজুরি বোর্ডে কাজ করছি।’ তিনি বলেন, সরকারই এই বোর্ড গঠন করেছে। নতুন মজুরি প্রস্তাব নেওয়ার পর সরকারের হস্তক্ষেপেরও সুযোগ আছে। তিনি আশা করেন নতুন ঘোষণার মধ্যে অনেক কিছু সমন্বয় হবে।
মজুরি বোর্ডের বৈঠক: এদিকে গতকাল পোশাক খাতের ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত বা সমঝোতা হয়নি। মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা নিজেদের প্রস্তাবে অনড় রয়েছেন। তবে মালিকপক্ষ আগের এক বৈঠকে দেওয়া আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবে ন্যূনতম মজুরি মাসে এক হাজার ৯৮৯ টাকার কথা বলেছিল। গতকাল এর পরিবর্তে দুই হাজার ৫৬২.৫০ টাকা দেওয়ার বিষয়ে মত দিয়েছে মালিকপক্ষ। তবে শ্রমিক প্রতিনিধি ন্যূনতম মজুরি মাসিক ছয় হাজার ২০০ টাকা করার দাবিতে অনড় রয়েছেন বলে জানা গেছে।
বর্তমান মজুরি কাঠামো অনুসারে ন্যূনতম মজুরি হচ্ছে এক হাজার ৬৬২.৫০ টাকা। বর্তমান কাঠামোতে সাতটি স্তরে শ্রমিকদের মজুরি বিন্যস্ত করা আছে। এর পরিবর্তে মালিকেরা পাঁচটি ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা মজুরি কাঠামো ছয় স্তরে বিন্যস্ত করার প্রস্তাব দিয়েছেন গতকালের বৈঠকে। সূত্র জানায়, আজ বৃহস্পতিবার এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নিয়ে মজুরি বোর্ডের বৈঠক হবে।

No comments:

Post a Comment