Saturday, July 24, 2010

 বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা - কি এবং কাদের জন্য।





সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার বঙ্গবন্ধু বলেন(১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বর বঙ্গবন্ধূ এই ঘোষণা দিয়েছিলেন) "যেসব লোক দীর্ঘদিন ধরে আটক রয়েছেন। এতদিনে তারা নিশ্চয়ই গভীরভাবে অনুতপ্ত। তারা নিশ্চয়ই তাদের অতীত কার্যকলাপের জন্য অনুশোচনায় রয়েছেন। আমি আশা করি তারা মুক্তিলাভের পর তাদের সকল অতীত কার্যকলাপ ভুলে গিয়ে দেশ গঠনের নতুন শপথ নিয়ে প্রকৃত দেশপ্রেমিকের দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন।"

তার পরের দিন স্বরাষ্ট্র দফতর থেকে নিম্নোক্ত প্রেসনোটটি ইস্যু করা হয়। প্রেসনোট : যারা ১৯৭২ সালের দালাল (বিশেষ ট্রাইবুনাল) আদেশ (পি.ও নং-৮, ১৯৭২ সালের) বলে আটক রয়েছেন অথবা সাজাভোগ করছেন তাদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শনের প্রশ্নটি সরকার আগেও বিবেচনা করে দেখেছেন। সরকার এ সম্পর্কে এখন নিম্নোক্ত ঘোষণা করছেন। 

১. দুনম্বর অনুচ্ছেদে বর্ণিত ব্যক্তিদের ও অপরাধ সমূহের ক্ষেত্র ছাড়া :

(ক) ১৮৯৮ সালের ফৌজদারী দন্ডবিধি ৪০১ নং ধারা অনুযায়ী উল্লিখিত আদেশবলে আটক ও সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের রেহাই দেওয়া হচ্ছে এবং উল্লিখিত আদেশ ছাড়া অন্য কোনো আইনবলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকলে তাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার অনতিবিলম্বে জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। 

(খ) কোনো বিশেষ ট্রাইবুনালের সম্মুখে অথবা কোনো বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে উক্ত আদেশবলে বিচারাধীন সকল মামলা সংশ্লিষ্ঠ ট্রাইবুনাল ও ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে প্রত্যাহার করা হবে এবং উল্লিখিত আদেশ ছাড়া অন্য কোনো আইনে তাদের বিরুদ্ধে বিচারাধীন কোনো মামলা বা অভিযোগ না থাকলে তাদের হাজত থেকে মুক্তি দেওয়া হবে।

(গ) কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে উল্লিখিত আদেশবলে আনীত সকল মামলা ও তদন্ত তুলে নেওয়া হবে এবং উল্লিখিত আদেশ ছাড়া অন্য কোনো আইনে বিচার বা দন্ডযোগ্য আইনে সে অভিযুক্ত না হলে তাকে মুক্তি দেওয়া হবে। উল্লিখিত আদেশবলে ইস্যু করা সকল গ্রেফতারী পরোয়ানা, হাজির হওয়ার নির্দেশ অথবা কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে হুলিয়া কিংবা সম্পত্তি ক্রোকের নোটিশ দেয়া থাকলে তা প্রত্যাহার বলে বিবেচিত হবে এবং গ্রেফতারী পরোয়ানা অথবা হুলিয়ার বলে কোনো ব্যক্তি ইতিপূর্বে গ্রেফতার হয়ে হাজতে আটক থাকলে তাকে অনতিবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হবে। অবশ্য সে ব্যক্তি উল্লিখিত দালাল আদেশ ছাড়া কোনো বিচার বা দন্ডযোগ্য অপর কোনো আইনে তার বিরুদ্ধে যদি কোনো মামলা না থাকে তবেই।

যাদের অনুপস্থিতিতেই সাজা দেওয়া হয়েছে অথবা যাদের নামে হুলিয়া বা গ্রেফতারী পরোয়ানা ঝুলছে তারা যখন উপযুক্ত আদালতে হাজির হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা ও বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করবে কেবল তখনই তাদের বেলা ক্ষমা প্রযোজ্য হবে। 

২. দন্ডবিধির ৩০২ নং ধারা (হত্যা), ৩০৪ নং ধারা, ৩৭৬ ধারা (ধর্ষণ), ৪৩৫ ধারা (গুলি অথবা বিস্ফোরক ব্যবহার করে ক্ষতিসাধন), ৪৩৬ ধারা (ঘর জ্বালানো) ও ৪৪৮ ধারায় (নৌযানে আগুন বা বিস্ফোরণ) অভিযুক্ত ও সাজাপ্রাপ্তগণ এক নম্বর অনুচ্ছেদে উল্লিখিত ক্ষমার আওতায় পড়বে না। 

সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রতিবেদন : দৈনিক বাংলা ১ ডিসেম্বর ১৯৭৩। 
শিরোনাম : দালাল আইনে আটক সাজাপ্রাপ্তদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা।

উপ-শিরোনাম : দেশের কাজে আত্মনিয়োগের জন্য ক্ষমাপ্রাপ্তদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর আহ্বান।
ধর্ষণ ও হত্যাকারীদের ক্ষমা নেই।

দৈনিক বাংলা: সরকার বাংলাদেশ দালাল আইনে অভিযুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছেন। বাংলাদেশ দালাল (বিশেষ ট্রাইবুনাল) অধ্যাদেশ ১৯৭২ বলে যারা আটক হয়েছেন, যাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা অথবা হুলিয়া রয়েছে এবং যারা এই আইনে সাজা ভোগ করছেন তাদের সকলের প্রতিই এই সাধারণ ক্ষমা প্রযুক্ত হবে এবং তারা অবিলম্বে মুক্তিলাভ করবেন। তবে নরহত্যা, নারী ধর্ষণ এবং অগ্নিসংযোগ অথবা বিস্ফোরকের সাহায্যে ঘরবাড়ি ধ্বংস অথবা জলযান ধ্বংসের অভিযোগে অভিযুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা প্রযুক্ত হবে না। গতকাল শুক্রবার রাতে প্রকাশিত এক সরকারী প্রেসনোটে এই সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার কথা প্রকাশিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গতরাতে বলেন, দলমত নির্বিশেষে সকলেই যাতে আমাদের মহান জাতীয় দিবস ১৬ ডিসেম্বরে ঐক্যবদ্ধভাবে নতুন দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে দেশ গড়ার শপথ নিতে পারে সরকার সেজন্য দালাল আইনে আটক ও সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছেন। বাংলাদেশ দালাল অধ্যাদেশে আটক ও সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা যাতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর অনতিবিলম্বে জেল থেকে মুক্তিলাভ করতে পারেন এবং আসন্ন ১৬ ডিসেম্বরে বিজয় উৎসবে যোগ দিতে পারেন বঙ্গবন্ধু সেজন্য তাদের মুক্তি তরান্বিত করতে স্বরাষ্ট্র দফতরের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। সাধারণ ক্ষমায় যারা মুক্তি পাবেন তাদের বিজয় দিবসের উৎসবে একাত্ম হতে এবং দেশ গঠনের পবিত্র দায়িত্ব ও দেশের স্বাধীনতা রক্ষার শপথ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু তার সরকারের সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শনের কথা ঘোষণা করতে গিয়ে বলেন, মুক্ত হয়ে দেশগঠনের পবিত্র দায়িত্ব গ্রহণের পূর্ণ সুযোগ তারা গ্রহণ করবেন এবং তাদের অতীতের সকল তৎপরতা ও কার্যকলাপ ভুলে গিয়ে দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন তিনি এটাই কামনা করেন।

বঙ্গবন্ধু বলেন, বহু রক্ত, ত্যাগ তিতিক্ষা আর চোখের পানির বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছি। যে কোনো মূল্যে এই স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে এবারের বিজয় দিবস বাঙালীর ঘরে ঘরে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণের এক নতুন দিগন্ত উম্মোচিত করবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কিছু লোক দখলদার বাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতা করে আমাদের মুক্তি সংগ্রামের বিরোধিতা করেছিলেন। পরে বাংলাদেশ দালাল আদেশ বলে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে অনেকেই পরিচিত ব্যক্তি। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দখলদার বাহিনীর সঙ্গে তাদের সহযোগিতার ফলে বাংলাদেশের মানুষের জীবনে অবর্ণনীয় দুঃখ দুর্দশা নেমে এসেছিল।

বঙ্গবন্ধু বলেন, এসব লোক দীর্ঘদিন ধরে আটক রয়েছেন। তিনি মনে করেন এতদিনে তারা নিশ্চয়ই গভীরভাবে অনুতপ্ত। তারা নিশ্চয়ই তাদের অতীত কার্যকলাপের জন্য অনুশোচনায় রয়েছেন। তিনি আশা করেন তারা মুক্তিলাভের পর তাদের সকল অতীত কার্যকলাপ ভুলে গিয়ে দেশ গঠনের নতুন শপথ নিয়ে প্রকৃত দেশপ্রেমিকের দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন।

কৃতজ্ঞতা - রুবেল আহমদ, প্রথমআলো ব্লগ।

No comments:

Post a Comment