Monday, July 26, 2010

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার-০৩


জামাতী সহ জামাতীদের বাঁচানোর জন্য কেউ 
কেউ প্রশ্ন তুলছেন যুদ্ধাপরাধের বিচার আইন নিয়ে। 















আজ যুদ্ধাপরাধের বিচারের আইন নিয়েই আমার আলোচনা 



একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিল তাদের বিচার করতে চলতি বছরের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তিন বিচারকসহ তদন্তকারী সংস্থা এবং প্রসিকিউটরদের নিয়োগ দেয়া হয়  অনুযায়ী , আর এই আইনে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ, হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারও করা হবে । এ নিয়ে জামায়াত বিতর্কের সৃষ্টি করলেও বিধিতে পরিষ্কার ভাষায় বলা আছে কিভাবে বিচারসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিক কাজ সমাধা করা হবে।


আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হবার পর বিভিন্ন সংস্থা এবং সংগঠন যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা তদন্তকারী সংস্থার কাছে দিয়েছে। তারই ভিত্তিতে তদন্তকারী সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। বিচারের স্বার্থে ইতোমধ্যে ট্রাইব্যুনালের বিধিমালা তৈরি করা হয়েছে। প্রথমে এটি ইংরেজীতে করা হলেও পরবর্তীতে বাংলায় করা হয়েছে বাংলাদেশ সরকার এর রুল অব প্রসিডিউর [THE INTERNATIONAL CRIMES (TRIBUNALS) ACT, 1973 (ACT NO. XIX OF 1973)] 
গেজেট টি এখানে আছে(http://www.wcsf.info/library/files/262_2010.pdf) বিষয়ে গেজেট প্রকাশ করেছে ১৫ জুলাই। 


এই আইনে আছে অপরাধ বা অপরাধসমূহ সম্পর্কে তদন্ত প্রতিবেদন পাবার পর চীফ প্রসিকিউটর বা তার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন প্রসিকিউটর তদন্ত কর্মকর্তার দাখিলকৃত তদন্তকালে সংগৃহীত কাগজাদি, তথ্যাদি ও সাৰ্যসমূহের ভিত্তিতে দরখাস্ত আকারে 'ফরমাল চার্জ' প্রস্তুত করবেন এবং তা ট্রাইব্যুনালে দাখিল করবেন। 


এখন আলোচনা আইনের ৩ (২) ধারায় যা আছে তা নিয়ে .... 



এই আইনে বলা আছে আইনের ৩ (২) ধারায় বর্ণিত সকল অপরাধ আমলযোগ্য, অমীমাংসাযোগ্য এবং অজামিনযোগ্য। অপরাধ আমলে গ্রহণের পর ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্তদের উপস্থিতির জন্য একটি তারিখ ধার্য করবে এবং এই উদ্দেশ্যে সমন বা ওয়ারেন্ট যা ট্রাইব্যুনালের উপযুক্ত বলে মনে করবে, তা জারি করবে। 


৩ (২) ধারায় নির্ধারন করা হয়েছে , শুধু হত্যা নয় আরো কিছু অপরাধ মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গন্য হবে —
১।পরিকল্পিত ভাবে একটি জাতি বা গোষ্ঠিকে নির্মুল করার জন্য তাদের সদস্যদেরকে হত্যা বা নিশ্চিহ্নকরন ।
২।একই উদ্দেশ্যে শারীরিক বা মানসিক ক্ষতিসাধন ।
৩।একটি জাতি বা গোষ্ঠিকে নির্মুল করার উদ্দেশে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা যাতে তারা সম্পুর্ন বা আংশিক ভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় ।
৪।এমন পরিবেশ তৈরী করা যাতে একটি জাতি বা গোষ্ঠীর জীবনধারন কষ্টসাধ্য , সেই সংগে জন্মপ্রতিরোধ করে জীবনের চাকা থামিয়ে দেয়া হয় ।
৫।একটি জাতি বা গোষ্ঠি শিশু সদস্যদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে তাদের জন্ম পরিচয় ও জাতিস্বত্বা মুছে ফেলা ।

গনহত্যার সংজ্ঞা নির্ধারনের পর ধারা ৩ এ গনহত্যা সংশ্লিষ্ট অপরাধ সমুহ ও চিহ্নিত করা হয়েছে 
১। গনহত্যা চালানো ।
২।গনহত্যা চালানোর ষড়যন্ত্র/পরিকল্পনা করা ।
৩। প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে গনহত্যা উস্কে দেয়া ।
৪।গনহত্যা চালানোর চেষ্টা করা ।
৫।গনহত্যায় যে কোন প্রকারে সহযোগী হওয়া ও সমর্থন করা ।

ধারা ৩ এর পর ধারা ৪ এ বলা হয়েছে–
উপরোক্ত যে কোনো একটি অপরাধেই, অপরাধী যুদ্বাপরাধী হিসেবে বিবেচিত হবে- তা সে সাংবিধানিক সরকার, সরকারের আজ্ঞাবাহী কর্মচারী, কোন দল কিংবা একক কোনো ব্যক্তি ই হোক ।

ধারা ৭ এ আবার স্পষ্ট করে বলা হয়েছে –
ধারা ৩ এ বর্নিত অপরাধ সমুহ কোনো ভাবেই রাজনৈতিক অপরাধ বলে গন্য হবেনা ।

বাকী সব কিছু বাদ দিচ্ছি, ধারা ৩ (২) কি বলে? গনহত্যায় সহযোগীতা করা কিংবা যে কোনো ভাবে সমর্থন জানানো ও মানবতাবিরোধী অপরাধ ।




১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পকিসত্মানী বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামসের হাতে ৩০ লাখ মানুষ নিহত হয়েছে। সাড়ে চার লাখ নারী সম্ভ্রম হারিয়েছে। লাখ লাখ ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে। প্রাণের ভয়ে প্রায় এক কোটি মানুষ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিল তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো এখন আর কোন কঠিন কাজ নয় । 


তথ্য সূত্র: নেট থেকে সংগ্রহ করা ( বিভিন্ন বই ও বিভিন্ন দৈনিক বাংলা পত্রিকা )

No comments:

Post a Comment