Sunday, July 11, 2010



২১ মে,২০১০

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, বিদেশে জনশক্তি পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রতারণা বন্ধে অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে তাঁর সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে৷প্রধানমন্ত্রী পুত্রা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে প্রবাসী বাংলাদেশীদের এক বিরাট সংবর্ধনায় বলেন, 'বেসরকারি খাত বিদেশে জনশক্তি পাঠাবে৷ কিন্তু এক্ষেত্রে যাতে কেউ প্রতারিত না হয় তা নিশ্চিত করতে সরকার প্রক্রিয়াটি নিয়মিতভাবে নজরদারি করবে৷' প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিভিন্ন সমস্যার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার বিমান বন্দরে হয়রানি বন্ধসহ এসব সমস্যা সমাধানে সার্বিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে৷ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রবাসীরা যাতে ভোটার আইডি কার্ড পান এবং তারা যাতে বিদেশে কাজ করার জন্য সহজশর্তে ঋণ পান সরকার ইতোমধ্যে সে প্রক্রিয়া শুরু করেছে৷ প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, 'আপনাদের ভোটার তালিকায় অন্তভর্ুক্ত করার ব্যাপারে আমরা ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলেছি৷' তিনি প্রবাসীদের দেশে এলে তখন ভোটার তালিকায় নাম অন্তভর্ুক্ত করে নেয়ার অনুরোধ জানান৷ প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত সাধারণ নির্বাচনে জনগণ তাদের বিপুল ভোটে নির্বাচিত করে ক্ষমতায় এনেছে৷ তাই তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তাঁর সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে৷ তিনি বলেন, 'আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার মাধ্যমে তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যই জনগণ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছে৷ সুতরাং তাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা আমাদের দায়িত্ব৷' শেখ হাসিনা প্রবাসীদের সমাবেশে বলেন, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে যেসব বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল, তারা এখন বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছে৷ প্রধানমন্ত্রী বিদেশী বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি মালয়েশিয়ায় কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান৷ বিদু্যত্‍ সংকট প্রশ্নে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্যে হতাশা ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বিরাজমান বিদু্যত্‍ সংকটের জন্য বিএনপিকেই দায়ী করে বলেন, ক্ষমতায় থাকাকালে তারা এক মেগাওয়াট বিদু্যত্‍ও উত্‍পন্ন করতে পারেনি৷ তিনি বলেন, 'আমরা ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত সময়ে দেশের বিদু্যত্‍ উত্‍পাদন ক্ষমতা ১৬০০ মেগাওয়াট থেকে ৪৩০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করেছিলাম৷ কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিদু্যত্‍ খাতকে লাগামহীন দুনর্ীতি ও অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ধ্বংস করে৷' বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাঁর বর্তমান সরকারও সংকট উত্তরণে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে৷ তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, 'ইনশাআল্লাহ আমরা শিগগির এ সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম হবো৷' শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপি কেন দেশের সাক্ষরতার হার এবং খাদ্য ও বিদু্যত্‍ উত্‍পাদন করতে ব্যর্থ হয়েছে তার জবাব জনগণকে দিতে হবে৷ তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ আমলে যে চালের দাম মাত্র ১০ টাকা ছিল বিএনপি আমলে কেন তা বেড়ে ৪৫ টাকায় দাঁড়াল?' দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে তাঁর বর্তমান সরকারের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ গত বছর অর্থনৈতিক খাতে তাঁর সরকারের বাস্তবমুখী পদক্ষেপের কারণে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী দেশে ওয়ান-ইলেভেন আনার জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করে বলেন, তাদের দুনর্ীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দেশে ১/১১'র পথ সুগম করেছে৷ তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত সরকারের পাঁচ বছর ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর দেশকে পিছিয়ে দিয়েছে৷ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যা করার কারণে নির্বিঘ্ন গণতন্ত্রের অভাবে বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন অর্জন করতে পারেনি৷ গণতন্ত্র ছাড়া একটি দেশ কাঙ্খিত উন্নয়ন সাধন করতে পারে না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমাদের বর্তমান সরকার বাংলাদেশে গণতন্ত্র শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নিয়েছে৷ বিগত সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনকারী দল আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর বিগত সরকারের মতো বর্তমান সরকারও শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিকিত্‍সেবার উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে৷ তিনি বলেন, কৃষি উপকরণ সরবরাহ ও যথাসময়ে কৃষকদের হাতে ঋণ পেঁৗছে দেয়াসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়ায় কৃষিতে দেশে পরপর দু'বছর খাদ্যের বাম্পার উত্‍পাদন হয়েছে৷ স্বাস্থ্য খাত সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর বর্তমান সরকার স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা জনগণের দোরগোড়ায় পেঁৗছে দেয়ার লক্ষ্যে দেশব্যাপী ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন প্রকল্প পুনরুজ্জীবিত করেছে৷ শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার তাঁর দলের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল প্রযুক্তি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে৷ প্রত্যেক প্রবাসীকে বাংলাদেশের একজন করে দূত হিসেবে অভিহিত করে তিনি দেশের বাইরে কাজ করার সময় তাদের আচার-ব্যবহার সম্পর্কে সজাগ থাকার আহ্বান জানান৷ বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে আপনাদের সু আচরণ প্রদর্শন করতে হবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার কারো অসদাচরণের দায়িত্ব নেবে না৷




২০ মে, ২০১০

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যমান বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের সুযোগ নিয়ে মালয়েশিয়ার উদ্যোক্তাদেরকে বাংলাদেশের শ্রমঘন তৈরি পোশাক শিল্প, টেক্সটাইল, হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রনিক্স, কৃষিভিত্তিক পণ্য, আইসিটি, বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। আজ এখানে হোটেল ইস্তানা বলরুমে মালয়েশিয়ার বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে গোলটেবিল আলোচনায় বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার সর্বোচ্চ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক উদ্যোগ জোরদার করার উপায় নিয়ে মতবিনিময়ের লক্ষ্যে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।শেখ হাসিনা পারস্পরিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীদেরকে বাংলাদেশ থেকে পাট, চামড়াজাত পণ্য, তৈরি পোশাক, সিরামিকস ও ওষুধসামগ্রীর মতো বিশ্বমানের পণ্য আমদানির অনুরোধ জানান। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ মুক্তবাজার নীতি অনুসরণ করছে এবং সরকার বাণিজ্য বিধি উদারীকরণসহ বিনিয়োগ নীতি গ্রহণ, সুদের হার হ্রাস, ব্যবসার ক্ষেত্রে ব্যয় হ্রাস ও অবকাঠামোগত বাধা দূর করার পাশাপাশি বন্দর সুবিধার উন্নয়ন ঘটিয়েছে।তিনি বলেন, উদার আর্থিক নীতিমালার সঙ্গে বিদ্যমান আকর্ষণীয় বিনিয়োগ পরিবেশের মধ্যে আমদানীকৃত যন্ত্রপাতির ওপর রেয়াতি সুবিধা, রয়্যালটি ফেরৎ নেয়া, ট্যাক্স হলিডে ও রেয়াতি শুল্কের ব্যবস্থা, অবাধ কারিগরি সহযোগিতা, ১শ’ ভাগ বিদেশী মালিকানা, বিধিনিষেধ মুক্ত এক্সিট পলিসি, ডিভিডেন্ট ও মূলধন ফিরিয়ে নেয়ার সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, এ ছাড়াও বাংলাদেশে রয়েছে ১৬ কোটি জনসংখ্যার বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের গৃহীত পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ (পিপিপি) পলিসির কথা তুলে ধরে বলেন, মালয়েশিয়া বাংলাদেশের পিপিপি নীতির সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় করে প্রকল্প বাস-বায়নে সহায়তা দিতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সবল সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভিত্তি বজায় রেখে স্থিতিশীল পরিবেশের সুবিধা পাচ্ছে এবং এখানে সস্তা ও প্রতিযোগিতামূলক শ্রমশক্তি রয়েছে।বিশ্বব্যাপী সামপ্রতিক অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও গত বছর দেশে প্রায় ছয় শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব বাজারের আস্থা অনুযায়ী পরবর্তী ১১টি সম্ভাবনাময় দেশের তালিকায় বাংলাদেশ স্থান পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় সকল দেশের তুলনায় বাংলাদেশ এসএন্ডপি ও মোদীর র্যংকিংয়ে অগ্রগামী রয়েছে।শেখ হাসিনা বলেন, মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ অভিন্ন ইতিহাস, রীতি-নীতি, ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে দৃঢ় ও দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ।তিনি আরো বলেন, প্রায় ৪০ বছর আগে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অনেক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে মালয়েশিয়া হচ্ছে বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী ৫ম বৃহত্তম দেশ। মালয়েশিয়ার মোট বিনিয়োগ প্রায় ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার এবং এতে ১৩ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী চলতি বছরের ১০ এপ্রিল পযর্ন্ত দেশের বেসরকারী খাতে মোট ৭২টি মালয়েশীয় যৌথ বিনিয়োগ প্রকল্প চালু রয়েছে।




মালয়েশিয়া বাংলাদেশী শ্রমিকদের বৈধতা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবে
২০ মে, ২০১০

মালয়েশিয়া সরকার সেদেশে কর্মরত সকল বাংলাদেশী শ্রমিককে বৈধতা দেয়ার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের সঙ্গে বিবেচনা করবে। গতকাল বিকেলে কুয়ালালামপুর কনভেনশন সেন্টারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনাকালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব তুন আবদুল রাজ্জাক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, বিষয়টি তিনি শিগগিরই সেদেশের নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটিতে উপস্থাপন করবেন। আলোচনাকালে তাঁরা দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় ছাড়াও বিশ্ব শান্তি, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস দমন, দারিদ্র্য বিমোচনসহ সার্বিক বিষয়াদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে উল্লেখ করে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী সেদেশে কর্মরত বাংলাদেশের শ্রমিকদের প্রশংসা করে বলেছেন, তারা মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানব সম্পদ উন্নয়নে তাঁর সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি তুলে ধরে বলেন, ‘জনশক্তি রফতানি বিষয়ে ব্যাপক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এখন থেকে আমাদের দেশের শ্রমিকরা যেদেশে কাজ করতে যাবেন, তাদের সেদেশের ভাষা ও আইন-কানুন শিখিয়ে পাঠানো হবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে চমৎকার বিনিয়োগ পরিবেশ বিরাজ করছে বলে উল্লেখ করে বলেন, মালয়েশিয়া দু’দেশের কল্যাণে বাংলাদেশে গ্যাস, বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে পারে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সরকার বিনিয়োগকারীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের অর্থনৈতিক খাতে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ গত বছর ৬.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। তিনি বলেন, তাঁর সরকার জনগণের কল্যাণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার আরো বাড়াতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি দারিদ্র্যকে এশিয়া অঞ্চলের অভিন্ন শত্রু অভিহিত করে এ অঞ্চলের মানুষের বৃহত্তর স্বার্থে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে যৌথ প্রয়াসের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, এ জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ দমনেও তিনি সম্মিলিতভাবে কাজ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। আলোচনায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পায়। শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাঁর সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা এবং এই ইস্যুতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে ঐক্যবদ্ধ করতে শেখ হাসিনার সক্রিয় ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি শেখ হাসিনাকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা এবং জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে বাংলাদেশকে মালয়েশিয়ার সহায়তার আশ্বাস দেন। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দু’দেশের চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে আশা প্রকাশ করেন যে, শেখ হাসিনার এই সফরের মাধ্যমে দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো জোরদার হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭২-এর ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশকে মালয়েশিয়ার স্বীকৃতি প্রদানের কথা স্মরণ করে বলেন, মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়াই সর্বপ্রথম বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। ১৯৭৩ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের মালয়েশিয়া সফরের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর এই সফরের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল। দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্য অসমতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সমপ্রসারণে দু’দেশ একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এবং ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সহযোগিতা চুক্তি সম্পাদনের লক্ষ্যে আলাপ-আলোচনা শুরু করতে পারে। দু’দেশের যৌথ বাণিজ্য কমিশনকে পুনরায় সক্রিয় করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, এতে বাংলাদেশ মালয়েশিয়ায় মানসম্পন্ন তৈরি পোশাক, ওষুধ, সিরামিক, জুতা, পাট ও চামড়া জাত পণ্য, সামুদ্রিক খাদ্য ও কৃষিপণ্য রফতানি নিশ্চিত করতে পারবে। উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের জুন মাসে ঢাকায় এ সংক্রান্ত বেঠক অনুষ্ঠিত হয়। মালয়েশিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকদের বিভিন্ন সমস্যা প্রসঙ্গে আলোচনাকালে প্রধানমন্ত্রী মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ শ্রমিকদের বিভিন্ন বাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের অনুরোধ জানান। বৈঠককালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুয়ালালামপুরে অবস্থানকালে তাঁকে দেয়া আতিথেয়তার জন্য মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশে সফরেরও আমন্ত্রণ জানান।




১৯ মে, ২০১০

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ মুসলিম দেশসমূহের নিজস্ব বিভিন্ন সম্পদ, প্রযুক্তি ও বাজারের সুবিধা কাজে লাগানোর মাধ্যমে তাদের প্রয়াসে একটি বহুমুখী মাত্রা যোগ করে নিজেদের সম্মিলিত সামর্থ্য বৃদ্ধি করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বর্তমানের জন্য নতুন নতুন সমাধান খুঁজে বের করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে অপ্রত্যাশিত অর্থনৈতিক উত্থান-পতনের ঘটনা থেকে এবং বাইরের আর্থিক ব্যবস্থার অনিশ্চয়তা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে হবে। এছাড়া আমাদের নিজেদের অর্থনৈতিক নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৬ষ্ঠ বিশ্ব ইসলামিক অর্থনৈতিক ফোরামের (ডাব্লিউআইইএফ) দু’দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দিচ্ছিলেন। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিম তুন আবদুল রাজাক আজ সকালে কুয়ালালামপুর কনভেনশন সেন্টারে এ সম্মেলন উদ্বোধন করেন। ডাব্লিউআইইএফকে মুসলিম সংখ্যাগুরু দেশগুলোর নিজেদের উন্নয়নের জন্য সম্মিলিত সামর্থ গড়ে তোলার লক্ষ্যে তাদের সম্পদগুলোকে কাজে লাগানোর জন্য সময়োচিত উদ্যোগ হিসেবে অভিহিত করে শেখ হাসিনা বলেন, এই ফোরাম অপরাপর বিশ্বের সঙ্গে মুসলিম দেশসমূহের আর্থিক ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সমন্বয় ঘটানোর জন্য একটি সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের ‘ভিশন-২০২১’ বাস্তবায়নে সহায়তা দেয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য ফোরামে যোগদানকারী আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, বিজনেস উইমেন্স ফোরাম ও ইয়ুথ ফোরামের সাম্প্রতিক বৈঠকগুলোতে এই ফোরামের ক্রমবর্ধমান তৎপরতা বিশেষ করে অপ্রচলিত শিল্প এবং ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের মধ্যে সম্প্রসারিত হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে|




শেখ হাসিনা- লী মিউং বাক বৈঠক : ঢাকা-সিউল অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহ প্রকাশ
১৯ মে,২০১০

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লী মিউং বাক মঙ্গলবার এক বৈঠকে দু'দেশের জনগণের পারস্পরিক স্বার্থে এশীয় দু'টি দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও জোরদারে আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। দুই নেতা মঙ্গলবার সকালে সিউলে প্রেসিডেন্ট ভবনে এক ঘণ্টাব্যাপী শীর্ষ বৈঠকের শুরুতে এ আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেন। বৈঠকে দুই নেতা বাংলাদেশ ও দৰিণ কোরিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ও পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এবং আর্থ-সামাজিক সহযোগিতার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও গত বছর ৬ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করায় শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। এ অর্জনকে উল্লেখযোগ্য সাফল্য হিসেবে বর্ণনা করে লী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই এ সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। কোরীয় প্রেসিডেন্ট শেখ হাসিনাকে জানান যে, বাংলাদেশে ১৫০টি কোরীয় কোম্পানি পরিচালিত হচ্ছে। তারা কমপক্ষে এক লাখ বাংলাদেশী শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এদিকে সিউলে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৩ দিনের সফর শেষে মঙ্গলবার বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়া এক যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে উভয় দেশ তাদের মধ্যে বিশেষত জ্বালানি খাতসহ অর্থনৈতিক ৰেত্রে সম্পর্ক জোরদারে সুনির্দিষ্ট পদৰেপের কথা তুলে ধরেছে। আট দফাবিশিষ্ট ইশতেহারে দু'দেশের পারস্পরিক স্বার্থে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি হস্তান্তর, জ্বালানি ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে সহযোগিতা জোরদার করার লৰ্যে ৮টি সুনির্দিষ্ট পদৰেপের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লী মিউং বাকের সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠকের ফলে ৪টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। বিগত '৬০-এর দশকে কোরিয়ার নাজুক অর্থনীতির কথা উলেস্নখ করে তিনি বলেন, সে সময় কোরীয় অর্থনীতি খারাপ অবস্থায় ছিল। তবে সময়ের পরিক্রমায় কোরিয়ার অর্থনীতি বর্তমানে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। দৰিণ কোরিয়ায় শেখ হাসিনার প্রথম সফর প্রসঙ্গে লী বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এই সফর বিভিন্ন উন্নয়ন ইস্যুতে মতবিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। সোমবার সিউলে অনুষ্ঠিত এসকাপের মন্ত্রী পর্যায়ের ৬৬তম বৈঠকে শেখ হাসিনা প্রদত্ত ভাষণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে কোরীয় প্রেসিডেন্ট বলেন, তাঁর এ ভাষণে জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য আসন্ন জি-২০ বৈঠকে করণীয় সম্পর্কে নীতিগত দিক নির্দেশনা তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেন যে, এলডিসির জলবায়ু তহবিল দ্রুত বণ্টনের লৰ্যে তিনি আসন্ন জি-২০ বৈঠকে শেখ হাসিনার ভাষণের মূল কথাগুলো তুলে ধরবেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ১৯৬০-এর দশকের নাজুক অর্থনীতি পুনর্গঠনের মাধ্যমে কোরিয়া যেভাবে একটি উন্নত দেশে পরিণত হয়েছে সেদিক থেকে বর্তমান কোরিয়া বাংলাদেশের জন্য একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হতে পারে। শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন যে, তাঁর এ সফর দুদেশের মধ্যে বর্তমানে বিদ্যমান দ্বিপাৰিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন গতির সঞ্চার করবে। তিনি স্বাধীনতা লাভের পর পরই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করায় কোরীয় নেতার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা ও সিউলের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে দক্ষিণ কোরীয় সরকারের গভীর সংশ্লিষ্টতার প্রশংসা করেছেন। তিনি মঙ্গলবার সিউলে চুঙ ওয়া ডাক প্রাসাদে তাঁর সম্মানে দক্ষিণ কোরীয় প্রেসিডেন্ট লী মিউং বাকের দেয়া মধ্যাহ্ন ভোজসভায় বক্তব্য প্রদানকালে দক্ষিণ কোরিয়ার এ প্রশংসা ব্যক্ত করেন। দক্ষিণ কোরিয়াকে বাংলাদেশের বিশেষ বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কোরীয় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (কেআইসিএ) দারিদ্র্য বিমোচন প্রচেষ্টা, অবকাঠামো ও অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অব্যাহতভাবে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে আপনাদের অমূল্য সহায়তা আমাদের দুটি দেশের সম্পর্ককে ঈর্ষণীয় পর্যায়ে নিয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামপ্রতিক বছরগুলোতে আমাদের এ সম্পর্ক দ্বিপাৰিক বাণিজ্য সমপ্রসারণ ও বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয়েছে।



No comments:

Post a Comment