Wednesday, July 21, 2010

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার-০১



অনেকের প্রশ্ন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্ভব কি ? - (যুদ্ধাপরাধী বা মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর যারা দালালী করেছে, যারা বাঙালী মেরেছে, বুদ্ধিজীবিদের নৃশংসভাবে হত্যা করেছে, ধর্ষন-লুটপাটে যারা জড়িত, তাদের বিচার সম্ভব কিনা ?)

আমার উত্তর হচ্ছে অবশ্যই সম্ভব।


আজ কেন সম্ভব এ নিয়েই আমার আলোচনা

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিশ্বের ইতিহাসের একটি অন্যতম ভয়াবহ যুদ্ধ যাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর নৃশংসতার শিকার হয়ে শহীদ হয়েছেন ৩০ লক্ষ নারী পুরুষ এবং যাদের সিংহভাগই ছিলেন নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ । এর বাইরে হাজার হাজার নারী ধর্ষিত হয়েছেন, যৌনদাসী হিসাবে নির্যাতিত হয়েছেন।এই নির্যাতন থেকে রেহাই পায়নি এমনকি শিশুরাও । ১৯৪৯ সালে গৃহীত জেনেভা কনভেনশন কর্তৃক এই ধরণের ঘৃণ্য কর্মকান্ডের প্রতিটিই যুদ্ধাপরাধের অন্তর্ভূক্ত (১)।২০০২ সালের জুলাইতে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালত যুদ্ধাপরাধের যে আওতা নির্ধারণ করে তার মাধ্যমেও এই অপরাধগুলি যুদ্ধাপরাধের অন্তর্ভূক্ত।

বাংলাদেশ পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় বাঙালী জনগনের বিরুদ্ধে পাকিস্তান দখলদার বাহিনী যে গনহত্যা ও নৃশংসতা চালিয়েছে আন্তর্জাতিক পত্রপত্রিকায় এর অকাট্য প্রমান রয়েছে।অসংখ্য নিরপেক্ষ ও বিদেশী পর্যবেক্ষক এর বিবৃতি থেকেও পাকিস্তান বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আল-বদর ও মানবতা বিরুধী,স্বাধীনতা বিরুধী ,মুক্তিযোদ্ধের বিরুধীদের বিরুদ্ধে গনহত্যা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ যুদ্ধাপরাধ পরিকল্পিত হত্যাকান্ড ধর্ষন ও অগ্নিসংযোগের ভুড়ি ভুড়ি প্রমান মেলে ।

প্রমান থাকা সত্বেও বিচার করা যায়নি কারন যেসব যুদ্ধাপরাধী আছে তারা সময়ের পালাবদলে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসেছে, এখন সময় সুযোগমত তাদের করা যুদ্ধাপরাধকেও অস্বীকার করছে।জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ১৯৭১ সালে তার দলের ভূমিকা নিয়ে সাংবাদিকদের চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। বলেছেন, “আপনারাই খুঁজে বের করুন, মূল্যায়ন করুন।” পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি ঝড় তুলেছে তার আরো কিছু কথা- “বাংলাদেশে কোনো যুদ্ধাপরাধী নেই।”
কয়েক দিন আগে গোলাম আযম বলেন "যুদ্ধাপরাধ কি আমি জানি না।"


যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গ উঠলে এসব ঘাতক-দালালকেও দেখা যায় বঙ্গবন্ধূকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে। খুনী আল-বদর নেতারা তখন সঙ্গে উচ্চারণ করে বলে- তিনি তো সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন, এতদিন পরে এসব নিয়ে আলোচনা অর্থহীন।

এখনও অনেকেই একটি ভুল ধারণা নিয়ে বিতর্ক তোলেন ও করেন। বলা হয়ে থাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান যুদ্ধাপরাধী দালাল ও রাজাকারদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। কথাটা পুরো সত্যি নয়। ১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে কার্যকর সাধারণ মা ঘোষনার আওতায় প্রান্তিক পর্যায়ের দালাল ও রাজাকারদের ক্ষমা করা হয়েছে। হত্যা, লুটপাট, ধর্ষন এবং স্বাধীনতা বিরোধী ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত এবং নেতৃস্থানীয় কোনো দালাল ও ঘাতককে এই ক্ষমা ঘোষণার আওতায় নেওয়া হয়নি।

অধ্যাপক গোলাম আযম থেকে শুরু করে নুরুল আমিন, হামিদুল হক চৌধুরী, খান এ সবুর, মাহমুদ আলী, খাজা খয়েরুদ্দিন, রাজা ত্রিদিব রায়ের মতো নেতৃস্থানীয় স্বাধীনতাবিরোধীদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করে তাদের ফেরার ঘোষণা করা হয় (১০ ফেব্র“য়ারি, ১৯৭২, দৈনিক বাংলা)। ক্ষমার আওতায় পড়েননি রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর কোনো নেতা। তালিকা দেখলে দেখা যাবে ঠিক কারা এসব নেতৃত্বে ছিলেন।

কিছু প্রমান

১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের তীব্র বিরোধিতা করেন। ২৫ মার্চ রাতে সংঘটিত অপারেশন সার্চলাইট এর ছয় দিন পর গোলাম আযম ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে একটি ভাষণ দেন।

জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সাহায্য করতে রাজাকার, আলবদর, আলশামস্ প্রভৃতি বাহিনী গড়ে তোলেন। এরা পুরো মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী বাহিনীর পক্ষে কাজ করে। ৩০ জুন লাহোরে সাংবাদিকদের কাছে গোলাম আযম বলেন, তাঁর দল পূর্ব পাকিস্তানে দুস্কৃতকারীদের (মুক্তিযোদ্ধা) তৎপরতা দমন করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে ।

১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষার উদ্দেশ্য ঢাকায় শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। এর সদস্য ছিলেন পাকিস্তানপন্থী রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বরা। গু.আযম ও এই কমিটির সদস্য ছিলেন।

১৯৭১ সালের পর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলে জামায়াত ও এর আওতায় পড়ে। ১৯৭৬ সালের আগস্টে জিয়াউর রহমান সরকার সকল ধরণের রাজনৈতিক দলের রাজনীতি উন্মুক্ত করে রাজনৈতিক দল অধ্যাদেশ ঘোষণা করেন। এ সময় ইসলামিক ডেমোক্র‌্যাটিক পার্টি নামক একটি দলের সাথে জামায়াতে ইসলামী যুক্ত ছিল। পরে গোলাম আযম বাংলাদেশে ফিরে এলে ১৯৭৯ সালের মে মাসে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ গঠিত হয়।এই দলটি ১৯৭১ সালে গণহত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে মদদ দেয়া রাজাকারা ,আল-বদর ,আল-শামস ,পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রত্যক্ষ সহযোগিতারীরা গঠন করে ।


এই আলোচনা ধারাবহিক ভাবে চলবে


    No comments:

    Post a Comment